রাস্তা ঘাটের বেহাল দশার জন্য দায়ী কারা?

প্রকাশিত: ৪:৪০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৫, ২০১৭

কলাম :: বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত একটি দেশ। ১৯৭১ সালে সকল দুর্নীতির বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল বাঙ্গালী জাতি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়ে দেশের আপামর জনতা। অবশেষে ৯মাস যুদ্ধের পর একটি স্বাধীন দেশ ও একটি লাল পতাকা অর্জিত হয়।

বহু স্বপ্ন নিয়ে জাতির পিতা একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে যখন দেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখনই ৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে স্বপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এরপর থেকেই আমাদের দেশের উন্নয়নের চাকা থেমে গিয়ে হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্র এবং অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পালা শুরু হয়ে দেশে একটা লুটপাটের রাজত্ব কায়েম হয়।

২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেই জাতির পিতার আদর্শ ও নীতি অনুসরণ করে দেশের সার্বিক উন্নয়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যায়।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবার সরকার গঠন করলে পুরনো উন্নয়ন কর্মকান্ডগুলো পুনরায় চালুর সঙ্গে সঙ্গে অনেকগুলো নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নে মনোনিবেশ করে।

এই সরকারের আমলে দেশের জনগণের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা দেখছি যারা আগে একটা গাড়ি ব্যবহার করতো তারাই এখন একাধিক গাড়ি ব্যবহার করছে।

কিন্তু আমাদেরকে একটি বিষয় বেশি পিড়া দিচ্ছে আর তা হলো রাস্তা ঘাটের অবস্থা। এ অবস্থা কেন, খুঁজে বেরকরা সময়ের দাবী। সরকার এতো টাকা দিচ্ছে তার পরও রাস্তা ঘাটের ভাঙ্গাচুড়া, নতুন রাস্তা ২-৩ মাসের মাথায় কেন ভেঙ্গে যায়।

যাহোক সম্প্রতি সিলেটের একটি জন সভায় যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি সড়কের অবস্থা নিয়ে বলেছেন, সড়ক পথে সিলেট এসে খুব কষ্ট পেয়েছি। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গার অবস্থা খুবই খারাপ। সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক অবশ্যই চারলেনে উন্নিত করা হবে। চায়না হারবারের সাথে সমঝোতা না হলে প্রয়োজনে নিজস্ব অর্থায়নে এই সড়কের কাজ হবে বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করতে পেরেছি, এটাও করতে পারবো।

সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়কের কাজ চলছে। সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের টেন্ডার হয়ে গেছে। জাফলং সড়কের কাজও হয়ে যাবে। সিলেট আমাদের যা দেয়, আমরাও সিলেটকে সে রকম দিতে হবে। বাজেটের গুরুত্বপূর্ণ অংশ আসে এই সিলেট থেকেই। বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে সিলেটকে বাঁচাতে হবে। সিলেটের উন্নয়ন রাস্তা ঘাটের উন্নয়নের উপর নির্ভরশীল। এখানে পর্যটন খাতের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে রাস্তা ঘাটের উন্নয়ন করতে হবে।

সড়ক ও জনপথের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছিলেন, আমি কোন অজুহাত শুনতে চাই না। এ মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে সিলেটের রাস্তা ঘাট চলাচলের উপযোগি করতে হবে। না হলে মন্ত্রণালয় থেকে সংশ্লিষ্টদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুধুমাত্র ৯টা-৫টা অফিস করলে চলবে না, মাতৃভুমিকে ভালবাসতে হবে।

২২শে অক্টোবর শনিবার সকালে সিলেটের ঐতিহাসিক রেজিস্ট্রারি মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এসব কথা বলেন।

একটি কথা আমাদের প্রায় সকলেরই জানা আছে মাননীয় মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের রাস্তা ঘাটের উন্নয়নের ব্যাপারে অত্যান্ত মনোযোগী। তিনি দুর্নীতিবাজদের বিরোদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। কিন্তু দুর্নীতি থেমে নেই আজও পুরোদমে চলছে। বিশেষ করে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায়। যেমন; হাইওয়ে রাস্তা, আঞ্চলিক মহাসড়ক, স্থানীয় গ্রাম-পাড়া মহল্লা বা প্রাতিষ্ঠানিক এলাকার রাস্তা গুলো ২-৩মাসের বেশি টিকেনা, ভাংতে শুরু করে। এর মূল কারণ হচ্ছে, নিম্নমানের কাজ। নিম্নমানের কাজটি কি? নিম্ন মানের কাজ হলো- সিডিউল মত কাজ না হওয়া। প্রথমতো যে রাস্তাটিতে কাজ করা হয় সেখানে মেকাডম অথবা সাববেইচ মাফ মত দেয়া হয়না ৬ইঞ্চির যায়গায় ৪ইঞ্চি করে চুরি করা হয়। দ্বিতীয়তো রোলিং ভালো ভাবে করা হয়না। তৃতীয়তো উন্নত মানের বালু না দিয়ে ভিট বালু বা নিম্ন স্থরের বালু দেয়া হয়। ভালো পাথরের বদলে কমদামী পাথর লাগানো হয়। ইটের কোয়া যেখানে পিকেট দেয়ার কথা সেখানে ২-৩ নম্বর ইট ভেঙ্গে কোয়া বানিয়ে দেয়া হয়। বিটুমিন একটি গুরুত্ব পূর্ণ একটি জিনিষ, এটা ব্যবহার করলে রাস্তার স্থায়িত্ব বৃদ্ধ পায়। কিন্তু দুষ্কৃত কারিরা বিটুমিনের সাথে পুড়া মবিল মিশিয়ে কাজের মান বা স্থায়িত্ব টুকুন নষ্ট করে দেয়। এক ড্রাম বিটূমিন এর মূল্য আনুমানিক ৮-১০ হাজার টাকা আর পুড়া মবিল এক ড্রাম ১হাজার টাকায় পাওয়া যায়। এগুলো সহ আরো নানা ভাবে দুর্নীতি করে রাস্তা ঘাটের বারোটা বাজানো হয়। আর এগুলোর জন্য দায়ী ছোট বড় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তারই সাথে কর্মকর্তারাও বিভিন্ন ভাবে দায়ী। যার ফলে সরকার সুফল পাচ্ছেনা। মানুষের কাছে সমালোচিত হচ্ছে এবং অর্থনীতিক ভাবে দেশ ক্ষতি গ্রস্থ হচ্ছে।

এক্ষেত্রে সেনাবাহিনী অথবা বিদেশী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজ করালে ভালো হতো। তাও সম্ভব না হলে কয়েক স্থরের তদারকির মাধ্যমে দুর্নীতির প্রতিরোধ করতে হবে। ধারণ ক্ষমতার বেশি পরিবহন যোগে মালামাল বহন বন্ধ করতে হবে, তা না হলে সরকারের ভিশন ভেস্থে যাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রুপকল্প ২০২১ বা ২০৪১ বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করবে।

লেখক : এম এ হাসিম, কলামিষ্ট, হাসিমী উদ্যান, কামাল বাজার দক্ষিন সুরমা সিলেট।

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

November 2017
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930  

সর্বশেষ খবর

………………………..