সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৬:০৫ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৬, ২০১৭
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : মামলার বাদী মামলা সম্পর্কেই জানেন না। অথচ এক টমটম-চালককে হত্যা মামলার আসামি করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এমন ঘটনা ঘটেছে পটুয়াখালীর বাউফল থানায়। পুলিশের দাবি করা টাকা দিতে না পারায় নিরপরাধ ওই টমটম-চালককে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ওই টমটম-চালকের নাম মো. ফরহাদ হোসেন (৩৫)। তাঁর বাড়ি বাউফল উপজেলার দাশপাড়া গ্রামে। এ ঘটনায় দুশ্চিন্তায় পড়েছে অসহায় ফরহাদের পরিবার।
সরেজমিনে প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত শনিবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে বাউফল-বগা সড়কের কাগুজিরপুল এলাকায় একটি মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ভুল পাশে গিয়ে একটি মালবাহী টমটমের সঙ্গে ধাক্কা লেগে মোটরসাইকেলটি পড়ে যায়। ওই সময় মোটরসাইকেলের চালক মো. অন্তু (১৮) ও তাঁর ছোট ভাই শামসুল আরেফিন (১৩) আহত হন। স্থানীয় লোকজন আহত দুই ভাইকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। তখন কর্তব্যরত চিকিৎসক শামসুল আরেফিনকে মৃত ঘোষণা করেন।
আরেফিন ছিল বাউফল মডেল সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। তার বাবার নাম মো. সোহরাব হোসেন। তিনি বিলবিলাস নেছারিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন।
দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মো. আরিফ হোসেন বলেন, টমটম-চালক তাঁর পাশেই ছিলেন। মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে টমটমের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে টমটম-চালক মো. ফরহাদ হোসেনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
পরে আরেফিনের লাশের ময়নাতদন্ত করাতে চায় পুলিশ। আর এতে বাধা দেয় আরেফিনের স্বজন, সহপাঠীসহ স্থানীয় হাজারো মানুষ। এ নিয়ে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। জনরোষের মুখে বেলা তিনটার দিকে সাদা কাগজে আরেফিনের মায়ের স্বাক্ষর রেখে পুলিশ লাশ দিয়ে দেয়। রাত সাড়ে আটটায় জানাজা শেষে আরেফিনের লাশ বিলবিলাস গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
আরেফিনের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো মামলা কিংবা অভিযোগ করা হয়নি। এ কারণে ফরহাদের স্বজনেরা তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলে পুলিশ বেঁকে বসে। ছেড়ে দেওয়ার জন্য টাকা দাবি করা হয়।
ফরহাদের স্ত্রী শিল্পী বেগম (৩০) অভিযোগ করেন, তাঁকে (ফরহাদ) ছেড়ে দেওয়ার জন্য ৩০ হাজার টাকা দাবি করে পুলিশ। টাকা দিতে না পারায় তাঁকে দুর্ঘটনার মামলায় আসামি করে আজ (রোববার) আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
ফরহাদের মা সালেহা বেগম (৬৫) বলেন, ‘আমার পোলার কোনো অন্যায় নাই। পুলিশ ব্যামালা টাহা চাইছে। হেইয়া দিতে না পারায় জেলে পাঠাইয়া দিছে।
বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আরেফিনের মা আফরোজা কুমকুম বাদী হয়ে মামলা করেছেন। এ কারণে তাঁকে (ফরহাদ) গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’ কারও কাছে কোনো প্রকার টাকা দাবি করা হয়নি বলেও তিনি দাবি করেন।
এ বিষয়ে আরেফিনের মা আফরোজা কুমকুম বলেন, ‘আমার ছেলে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। এ ঘটনায় আমি কোনো মামলা করিনি। আর আমাদের কোনো অভিযোগও নেই। তবে পুলিশ লাশ হস্তান্তরের সময় সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছিল।’ তিনি আরও বলেন, টমটম-চালককে কারাগারে পাঠানো হয়ে থাকলে তাঁর ওপর অবিচার করা হয়েছে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd