সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৭:০৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৬, ২০১৭
পরকীয়া সম্পর্ক জেনে যাওয়ায় স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করে স্ত্রী আরজিনা বেগম। মধ্যরাতে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে পরকীয়া প্রেমিক শাহিন মল্লিক। স্বামীকে হত্যা করার দৃশ্য দেখে ফেলায় নিজের মেয়ে নুসরাত জাহানকেও হত্যার নির্দেশ দেন আরজিনা।
নিহতের স্ত্রী আরজিনা ও প্রেমিক শাহিন মল্লিক পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতে নিহত জামিলের ভাই শেখ শামীম হোসেন বাদী হয়ে নিহতের স্ত্রী আরজিনা বেগম ও তার পরকীয়া প্রেমিক শাহিন মল্লিককে আসামি করে বাড্ডা থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৪।
মামলা নথিভুক্ত হবার পর সন্দেহভাজন হিসেবে আটক আরজিনা বেগমকেও গ্রেফতার দেখানো হয়। এরপর খুলনার লবণচড়া থানার ভাইয়ের বাসা থেকে শাহিন মল্লিককে গ্রেফতার করে পুলিশ। শাহিনের বাড়ি খুলনার দাকোপ উপজেলায় কালাবনি-ছুতারখালি গ্রামে। তার বাবার নাম নাজিমউদ্দিন মল্লিক।
গত বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার দিকে রাজধানীর উত্তর বাড্ডার ময়নারবাগের ৩০৬/পাঠানভিলার তৃতীয় তলায় ভাড়া বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় বাবা জামিল শেখ (৩৮) ও মেয়ে নুসরাত জাহানের মরদেহ।
বাড্ডা থানা পুলিশ জানায়, নিহত জামিলের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদরের করপাড়া ইউনিয়নের বনপাড়া গ্রামে। তার বাবার নাম বেলায়েত শেখ (মৃত)। তিনি তেজগাঁওয়ে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের গাড়িচালক ছিলেন। পাঠান ভিলার তৃতীয় তলায় দুই কক্ষ ভাড়া নিয়ে পরিবার নিয়ে থাকতেন তিনি। গত কোরবানির ঈদের পর স্ত্রী আরজিনা (৩০), মেয়ে নুসরাত (৭) ও ছেলে আলফিকে (৩) নিয়ে ওই বাসায় উঠেন জামিল।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, শাহিন মল্লিক পেশায় রং মিস্ত্রি। আগে থেকেই জামিল শেখের পারিবারের সঙ্গে তার সখ্যতা ছিল। এর আগে ময়নারবাগের ৩০৫ নং বাসার নিচ তলায় থাকতেন জামিল শেখের পরিবার। তখন ওই বাসারই তৃতীয় তলায় থাকতেন শাহিন মল্লিক। সেসময়ই শাহিনের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন জামিলের স্ত্রী আরজিনা। তখন জামিল বিষয়টি টের পেলেও নিশ্চিত ছিলেন না শাহিনের সঙ্গেই পরকীয়া চলছে। তখন পরকীয়ার সম্পর্কের জের ধরে ঝগড়া হয় স্বামী-স্ত্রীর। এরপর আরজিনা অভিমানে বাড়ি চলে যান। মাস খানেক পর আবার ঢাকার বাসায় ফেরেন। কিন্তু পরকীয়া প্রেম থেকে নিবৃত ছিলেন না তিনি।
ওই কারণে বাসা পরিবর্তন করে ময়নারবাগের ৩০৬ নং বাসায় উঠেন জামিল। তবে স্ত্রীর প্ররোচণায় ওই ভাড়া বাসার একটি কক্ষ শাহিন মল্লিলকে সাবলেট হিসেবে ভাড়া দেন জামিল। এরপর স্বামীর অগোচরে চলে পরকীয়া প্রেম।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ঘটনার তিনদিন আগে শাহিন ও আরজিনাকে একসঙ্গে দেখে ফেলেন জামিল। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ব্যাপক বাগবিতণ্ডা হয়। এরপরই পরকীয়া প্রেমের কাঁটা হিসেবে স্বামীকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেন স্ত্রী আরজিনা।
জিজ্ঞাসাবাদে আরজিনা পুলিশকে জানান, ডাকাতরা খুন করে গেছে এমনটা বলার শর্তে পরিকল্পনায় রাজি হন শাহিন।
ঘটনার রাতে খাওয়া শেষে ঘুমিয়ে যায় জামিল ও মেয়ে নুসরাত জাহান। জেগে ছিলেন শুধু স্ত্রী আরজিনা। রাত ২টার দিকে আরজিনার ইঙ্গিতে কাঠ নিয়ে ঘরে প্রবেশ করেন শাহিন। ঘুমন্ত জামিলের মাথায় আঘাত করেন। জামিল আর্তনাদ করতে করতে শাহিনকে নিবৃত করার চেষ্টা করেন।
এসময় স্ত্রী আরজিনাকে পাশেই চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কেঁদে ফেলেন জামিল। বলেন ‘শেষ বিচারে এর কঠিন শাস্তি তুমি পাবে’।
বাবার চিৎকারে ঘুম ভাঙে নুসরাতের। বাবাকে মায়ের সামনে আঘাতের পর আঘাত করতে দেখে নুসরাত বলে, ‘আঙ্কেল আব্বুকে মারছো কেন? তখন আরজিনা নুসরাতের মুখ চেপে ধরে। জামিলের মৃত্যু নিশ্চিত হবার আরও পৌনে ১ ঘণ্টা পর মা আরজিনার নির্দেশেই নুসরাতকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন শাহিন।
ঘটনার পর বাসার মালিক দুলাল পাঠানের স্ত্রী নাসিমা দুলাল বলেন, আরজিনা বলছিল, ‘ডাকাত পড়েছিল, চারজন মুখোশধারী নাকি ঘরে ঢুকে অস্ত্রের মুখে আরজিনারে জিম্মি করে। হেরপর জামিল ও মাইয়াডারে খুন কইরা চইল্লা গেছে।’
তিনি বলেন, ‘আরজিনার সে কথা বিশ্বাস করিনি। কারণ আমার বাসার গেট তালাবদ্ধ ছিল। এখানে অন্য কোনো কেইস আছে। আগে থেকে কেউ আইসা অবস্থান নিছিল কি না!’
নিহত জামিলের ভাগ্নে রুবেল জানান, গত সপ্তাহে জামিল মামা আমারে বলেছিল, ‘মামা তোমার মামি যা-তা শুরু করছে। না পারছি বলতে না পারছি সইতে।’ কিন্তু তিনি পরিষ্কার কিছু বলেন নাই। মামা খুনের পর বুঝলাম কেন মামা সেদিন ওই কথা বলেছিল।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বাড্ডা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাখাওয়াত হোসেন বলেন, আরজিনা ও শাহিনের মধ্যকার পরকীয়ার সম্পর্কের বিষয়টি তারা স্বীকার করেছেন।
এ ব্যাপারে শুক্রবার রাতে বাড্ডার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াজেদ আলী জাগো নিউজকে বলেন, প্রথম থেকেই আমাদের সন্দেহ ছিল পরকীয়াজনিত কারণ। জিজ্ঞাসাবাদে সেটাই উঠে আসছে। তবে এক্ষেত্রে পরিকল্পনার ভূমিকায় ছিল স্ত্রী। আর তা বাস্তবায়ন করে প্রেমিক শাহিন। শনিবার তাদের আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চাওয়া হবে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd