সিলেট ৩০শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৯:১৬ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৭, ২০১৭
ক্রাইম ডেস্ক : রাত যত গভীর হয়, ততই জমে ওঠে ব্যবসা। রঙবেরঙের হোটেল রেস্তোরাঁগুলো তখন কানায় কানায় পূর্ণ। দামি গাড়িগুলো এক এক করে আসতে থাকে। ভিড় পড়ে যায় তরুণ-তরুণী এমনকি অনেক মধ্যবয়সীরও। সেগুলোতে তখন আর সাধারণ ক্রেতাদের ঠাঁই মেলে না। তাদের জন্য কোনো আয়োজনও থাকে না এত রাতে। গভীর রাত পর্যন্ত গুলশান, বনানী, বারিধারার কাব, হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলোর এই হলো অবস্থা। সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে কোনো কোনো এলাকায় দিনের বেলায়ও সাধারণ পথচারীদের প্রবেশে বিধিনিষেধ রয়েছে। কিন্তু হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে যারা যাতায়াত করেন তাদের ব্যাপারে কোনো বিধিনিষেধ নেই।
স্থানীয় সূত্র জানায়, অভিজাত এলাকার হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে নিয়মিত বসছে নানা আড্ডা ও পার্টি। কোনো কোনো হোটেল-রেস্তোরাঁয় ইয়াবা পর্যন্ত বিক্রি হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। আর মদ-বিয়ার চলে মিনারেল ওয়াটারের মতো। এই ব্যবসার সাথে অনেক রাঘববোয়ালই জড়িত বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র জানায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওই হোটেল-রেস্তোরাঁর বেশির ভাগের মালিক প্রভাবশালী ব্যক্তি অথবা তাদের স্ত্রী-সন্তানেরা। সেখানে যারা যাতায়াত করেন তারাও প্রভাবশালী। এ কারণে তারা নির্বিঘেœই ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারছেন।
বছর দুয়েক আগে গুলশানের ফুয়াং কাবে অভিযান চালিয়ে বিপুল মদ ও বিয়ারসহ মাহিন চৌধুরী ও গোলাম মর্তুজা নামে দু’জনকে গ্রেফতার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব-১। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সাথে র্যাব-১ যৌথভাবে ওই অভিযান চালায়। ওই বছর ক্যাপিটাল রিক্রিয়েশন কাবেও হঠাৎ অভিযান চালায় র্যাব। অভিযানে বিপুল মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়েছিল সেখান থেকে। ওই সময়ে কাবটির সভাপতি কে এম আর মঞ্জুরসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছিল। কিন্তু ওই মামলা করা পর্যন্তই শেষ। এরপর সেই মামলার কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে জানা গেছে।
ওই অভিযানের পর আর কোনো অভিযানও হয়নি অভিজাত এলাকার হোটেল- রেস্তোরাঁগুলোতে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অভিজাত এলাকার বেশির ভাগ হোটেল-রেস্তোরাঁ রাত যত গভীর হয় ততই জমে ওঠে। এর বেশির ভাগ সেবাপ্রার্থী হলো তরুণ-তরুণীরা। ধনাঢ্য পরিবারের সন্তানেরাই সেখানে ভিড় জমান। শুধু তরুণ-তরুণীই নন, মধ্যবয়সী ধনাঢ্য ব্যক্তিদেরও সেসব স্থানে দেখা যায়। সূত্র জানায়, তাদের প্রধান চাহিদা হলো শিসা সেবন। হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে আবাসিক হোটেলের মতো আলাদা কক্ষ রয়েছে। বিনোদনের জন্য ওইসব কক্ষ ভাড়া করেন তারা। কোথাও কোথাও ইয়াবা সেবনেরও ব্যবস্থা রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। আর মদ-বিয়ার তো একেবারেই হাতের নাগালে। সূত্র জানায়, এখানে যে মদ-বিয়ার বিক্রি হয় তার বেশির ভাগই সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আনা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কার্নিয়া কাব, লেক ভিউ, লেক ডিপ্লোমা, কোরিয়ান কাব এবং কেএনবিসহ অসংখ্য কাবে প্রতি রাতে পার্টির আয়োজন থাকে। কোনো কোনো কাব, রেস্তোরাঁ ও হোটেলে মদ-বিয়ার বিক্রির অনুমোদন নেই। কিন্তু সেখানেও মদ-বিয়ার বিক্রি হচ্ছে।
আবার পার্টির আড়ালে বেশ কিছু হোটেলে জুয়ার আসরও বসছে নিয়মিত। গুলশানকে ঘিরে অন্তত অর্ধশত কাব ও বার রয়েছে। যেগুলোর কোনো কোনোটিতে নিয়মিত জুয়ার আসর বসছে। কূটনৈতিক জোনের দোহাই দিয়ে কোনো কোনো এলাকায় সাধারণ মানুষের চলাচলে বিধিনিষেধ রয়েছে। এমনকি সাধারণ মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য চেকপোস্টও বসানো হয়েছে।
নিজস্ব নিয়োগকৃত নিরাপত্তারক্ষী দিয়ে সাধারণ পথচারীদের তল্লাশি ও তাদের নাম-ঠিকানা রেকর্ড করারও অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু হোটেল, বার ও কাবগুলোর কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ নেই। সূত্র জানায়, কাব, হোটেল-রেস্তোরাঁর অবৈধ ব্যবসা নির্বিঘœ করতেই সাধারণ মানুষের চলাচলে এই বিধিনিষেধ। আলী আসগর নামে এক ব্যক্তি জানান, তিনি বারিধারার একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। প্রতিদিন কয়েকবার তাকে জবাবদিহি করতে হয় রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময়। তিনি বলেন, অনেক রাস্তা রয়েছে যে রাস্তায় পায়ে হাঁটাও নিষেধ।
স্থানীয় পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেছেন, কূটনৈতিক জোনে বিদেশীদের জন্য কিছু বার রয়েছে। সেখানে কী হচ্ছে তা চাইলেও বন্ধ করা সম্ভব নয়।
সূচ- নয়া দিগন্ত
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd