সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৪:৪১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৯, ২০১৭
হাবিবুল আলম :: বাংলাদেশে ব্যবসা করছে এমন অনেকগুলো বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব এখন বাংলাদেশীদের দখলে। দেশীয় প্রতিষ্ঠানের গন্ডি ছাড়িয়ে বাংলাদেশী পেশাজীবীরা বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের বহুজাতিক কোম্পানিকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। নেতৃত্ব প্রদানে বাংলাদেশীদের এই অর্জন গর্বের। তবে সুযোগের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে বাংলাদেশের পেশাজীবীদের নেতৃত্ব বিকাশে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ম্যারিকো বাংলাদেশ।
পেশাজগতে যাত্রা শুরুর পরেই নানান চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে এগিয়ে চলেন পেশাজীবীরা। এই বিশ্বায়নের যুগে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শুধু দেশে নয় বিদেশেও মেধাবীদের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য নেতৃত্ব বিকাশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই বাজার কখন প্রাতিষ্ঠানিক কখনও পারস্পারিক আবার কখনও ব্যক্তিগত চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলতে থাকে তাদের ক্যারিয়ার। কেউ হয়ত সঠিক মেন্টরের দেখা পেয়ে সঠিক পথটি খুঁজে পান আবার কেউ হয়ত হোঁচট খেয়ে থেমে যান। যারা এমন চড়াই উৎরাই পেরিয়ে সফলতার সাথে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পেশা ও সামাজিক আচরণ পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের অভিজ্ঞতার গল্পগুলো শুনতে প্রতিমাসে একটি ‘লিডারশীপ ‘সিরিজ’ আয়োজন করছে ম্যারিকো বাংলাদেশ।
ম্যারিকো আয়োজিত লিডারশীপ সিরিজ একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে বিভিন্ন স্তরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পেশাজীবীরা যোগদেন। যারা এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা তাদের সাফল্য-ব্যর্থতার অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করেন। আবার যারা গল্পগুলো শুনতে আসেন তারাও তাদের দৃষ্টিভঙ্গি, সমস্যা নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনা করেন। সকলের পারস্পরিক স্বত:র্স্ফূত অংশগ্রহণ ক্যারিয়ার তৈরির গাইড হয়ে উঠে। এবছরের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয় লিডারশীপ সিরিজের যাত্রা।
যাত্রা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত তাদের পথচলার গল্প শুনিয়েছেন লিন্ডে বাংলাদেশের সিইও মোহসিন আহমেদ, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্লাস্টের নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন, এপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মানজুর, স্ট্যান্ডার্ড চার্টাড ব্যাংকের গ্লোবাল- হেড, ট্রেড এন্ড ট্রানজেকশন ফারুক সিদ্দিকি।
সর্বশেষ গত ২৬ অক্টোবর ‘ট্র্যাম্পের যুগে নেতৃত্ব’ নিয়ে কথা বলেছেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক শামেরান আবেদ। ম্যানেজম্যান্ট পর্যায়ে কর্মরত ব্যাংক, ফামাসিটিউক্যালস, ফাস্টটেস্ট গ্রোয়িং কনজিউমার গুডস (এফএমসিজে) ও উন্নয়ন খাতের ৫৩ জন তরুণ-তরুণী এই লিডারশিপ সিরিজে অংশগ্রহণ করেন। এই সিরিজ সর্ম্পকে তরুণ-তরুণীদের আগ্রহ বাড়াতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম্যে প্রচারণা চালায় ম্যারিকো বাংলাদেশ। ম্যারিকো বাংলাদেশের ফেসবুক পেজে লাইভ করা হয় সর্বশেষ এই লিডারশিপ সিরিজ। অসংখ্য দর্শক ফেসবুকে লাইভ উপভোগ করেন এই আয়োজন।
সফল নেতৃত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেন শামেরান আবেদ। তিনি বলেন, ‘দক্ষ নেতরার ক্ষমতার দ্বন্দ্ব অবসানে ইতিবাচক ভূমিকা রাখেন। ব্যবস্থাপনায় ক্ষমতার দ্বন্দ্ব বা ইতস্ততা থাকলে তা প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। সৃজনশীল নতুন চিন্তাকে গুরুত্ব দেয়ার কথা উল্লেখ করে মি. শামেরান বলেন, আমাদের নতুন ভাবনা বের করে নিয়ে আসার সুযোগ দিতে হবে। ঝুঁকি এবং সাফল্যের বসবাস সমান্তরালে শামেরান আবেদের কথায় পাওয়া গেল ঝুঁকির নেয়ার প্রশ্নের উত্তর। তিনি বলেন, আমাদের দেশের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা ম্যানেজমেন্টের পরামর্শ ব্যতিত স্ব-প্রণোদিত হয়ে কাজ করতে ও ঝুঁকি নিতে আগ্রহী হয়না। কিন্তু কর্মীদের ঝুঁকি নিতে উৎসাহ দিতে হবে। কর্মীরা ঝুঁকি নিয়ে যেন বিপদে না পড়ে, সে ব্যবস্থাও ম্যানেজমেন্টকেই করতে হবে। কর্মীদের উদ্ভাবনী ভাবনাকে স্বাগত জানাতে হবে। ভাবনা বাস্তবায়নে ব্যবস্থাপকদেরই সাহায্য করতে হবে। উদ্ভাবনী ভাবনা একটি সংস্থাকে সামনে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে। সেজন্য কর্মীদের নতুন চিন্তা ভাগাভাগির উৎসাহ দেওয়া উচিত।’
স্ট্যান্ডার্ড চার্টাড ব্যাংকের গ্লোবাল-হেড: ট্রেড এন্ড ট্রানজেকশন ফারুক সিদ্দিকিও এসেছিলেন তার বর্ণীল ক্যারিয়ারের অভিজ্ঞতা জানাতে। তার বিভিন্ন দেশের কাজের অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, ‘বহুজাতিক সংস্কৃতির সাথে তাল মিলিয়ে চলা ছিল তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে নিজেকে বদলে ফেলা জরুরী না নিজের স্বকীয়তাকে সংরক্ষণ করতে হবে এমন এক আলোচনার প্রেক্ষিতে ফারুক সিদ্দিকি বলেন, ‘বি ইউরসেলফ’ তোমার মত থাক’। নিজের মত থাকতে গিয়ে হয়ত পথ সংকটাপূর্ণ হবে কিন্তু চূড়ান্ত বিজয় আসবে। তাই কেবল কর্মের খাতিরে নিজের মত বদলে ফেলার বিপেক্ষে এই সফল নেতা। তবে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ও মতামত উন্মুক্ত মনে গ্রহণ করে সমস্যা সমাধানে মুক্তচিন্তার চর্চা করা উচিত বলে মনে করেন ফারুক সিদ্দিকি।’
এপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মানজুর কর্মজীবনে নেতৃত্বের বহুমাত্রিক ব্যবহার দেখেছেন ও কর্মক্ষেত্রে এর কার্যকর ব্যবহার করেছেন। ম্যারিকো লিডারশীপ সিরিজে তিনিও শুনিয়েছেন সফল নেতা হওয়ার কৌশল।
তিনি বলেন, ‘পেশা যাই হোক না কেন নেতৃত্ব বিকাশে পরিশ্রমের বিকল্প নেই। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় থেকে এখন পর্যন্ত অনেক ব্যতিক্রমী নেতার উদাহরণ আছে বলেই বাংলাদেশ এই অল্প সময়ে ‘দ্যা আদার এশিয়ান টাইগার’ হিসেবে জায়গা করে নিতে পেরেছে। ভবিষৎতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নেতৃত্বকে ‘ব্যর্থ’ মানতে প্রস্তুত ও সেইসাথে পরিবর্তনমুখী হতে হবে।’
লিডারশীপ সিরিজ কেবল অভিজ্ঞতা বিনিময়ের প্ল্যাটফর্ম নয় বরং একটি নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্মও। পেশাজীবনে কখনও প্রতিযোগী কখনও অন্যকোন স্টেকহোল্ডার হিসেবে যাদের সাথে দেখা হয় তাদের নিয়েই চায়ের আড্ডায় যাত্রা শুরু হয় এক নতুন সম্পর্কের। সেই নেটওর্য়াক সমৃদ্ধ করে ম্যারিকো কর্মকর্তাসহ অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যতের নেতৃত্বকেও।
উদ্ভাবনী এই উদ্যোগের প্রশংসা করে অংশগ্রহণকারী সুমাইয়া সাদিয়া হুদা, হেড অফ লিগ্যাল, নোভারটিস বলেন, “এই লিডারশিপ সিরিজ একটি চমৎকার উদ্যোগ। নেতৃত্ব বিকাশে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কিছু পরামর্শ ও করণীয় সর্ম্পকে জানতে পারলাম। এমন অসাধারণ উদ্যোগ অন্যান্য হাউজগুলোও শুরু করতে পারে।”
মেক এ ডিফারেন্স মূলমন্ত্র নিয়ে ম্যারিকো বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়। সংস্থাটি বিশ্বাস করে, যথাযথ সুযোগ পেলে তরুণরা নিজেদের মেধার পূর্ণ বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হবে। পূরণ হবে তাদের স্বপ্ন। তাদের স্বপ্নপূরণেই আমাদের এই উদ্যোগ। এই উদ্যোগের ফলে মেধাবীরা ও সফল নেতারা একটি প্লাটফর্মে চলে আসবেন যা মেধাবীদের উদ্ভাবনী চিন্তার বিকাশে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। ম্যারিকো বাংলাদেশের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের এই ইতিবাচক মন্ত্রে উদ্বীপ্ত করতেই আমরা এই আয়োজন করেছি। আগামীর বাংলাদেশে এমনকি বিশ্বে আরো অনেক প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশী নেতৃত্ব তৈরির মহাযাত্রায় লিডারশীপ সিরিজএকটি ছোট্ট পদক্ষেপ।
লেখক : সাবেক শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd