সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৪:১৭ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩, ২০১৭
আবুল হোসেন : সাংবাদিক জাতির বিবেক। পত্রিকা সমাজের দর্পণ। জনমুখে প্রচলিত থাকা এ শব্দ দুইটি সিলেটের কিছু সংখ্যক পত্রিকার কারনে মহান পেশাটি কলুষিত হবার পাশাপাশি প্রকৃত সাংবাদিকদের মান-সম্মান ক্ষুন্ন হতে চলছে।
এমন প্রেক্ষাপট সৃষ্টি হবার কারণ অনুসন্ধানকালে বেড়িয়ে এসেছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, সমাজের বির্তকিত একাধিক ব্যক্তি পত্রিকার মালিক ও রহস্যজনকভাবে হয়েছে সম্মানিত পদগুলোর অধিকারী। এরমধ্যে অনেকেই প্রতিদিন সন্ধ্যা পর মাদকের সেবনের নেশায় টালমাটাল হয়ে উঠে। রাতে তাদের মুখের কথা শুনলে বাতাসে ভেসে আসে মদের গন্ধ।
অতীত জীবনে কেউ ছিলেন সিনামা হলের টিকিট ক্রয়-বিক্রয়ের চিহ্নিত দালাল। আবার কারো সংবাদ লেখার যোগ্যতা কিংবা পেশা সম্পর্কে জ্ঞান না থাকলেও কূটকৌশলে কয়েক সিনিয়র সাংবাদিকের যোগসাজসে হয়েছে সাংবাদিক নেতা এবং ভাড়াটিয়া পত্রিকার মালিক।
এসএসসি পাশ না করলেও কেউ রহস্যজনকভাবে হয়েছে বার্তা সম্পাদক। আবার এরা নিজেকে সাংবাদিকদের অভিভাবক বলে মনে করে নীতিবাক্য বয়ান দিলেও কর্মকান্ডে সিলেটজুড়ে এ পেশাকে নরক রাজ্যে পরিণত করে তুলছে। সচেতন মহলে এসব কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠলেও সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর প্রতিরোধ ব্যবস্থা না থাকায় সিনেমা হলের দালাল, জমির দালাল, নারী ব্যবসায়ী, বির্তকিত কয়েক রাজনৈতিক ব্যক্তি, মেকার ও সন্ত্রাসীরাসহ নগরীর ছোট-বড় সৎ-অসৎ ব্যবসায়ীরা হয়েছে প্রত্রিকার গুরুত্বপূর্ণ পদমর্যাদার অধিকারী।
এদের ছত্রছায়ায় নামের আগে সাংবাদিক শব্দ ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছে অশিক্ষিত শ্রমিক, লঞ্চের দালাল ও কেবিনবয়, হোটেলবয়সহ বিভিন্ন মামলার আসামীরা।
অস্থিত্ব টিকিয়ে রাখতে এসব অযোগ্য ও অপরাধীরা নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় জানান দিয়ে থানা, অফিস-আদালত, লঞ্চ-বাস টার্মিনালে ও রাজনৈতিক অঙ্গনে দালালি কার্যক্রমে লিপ্ত রয়েছে। এমনকি সমাজের ওই সব বির্তকিতরা তাদের স্বার্থের অনুকূলে মনগড়া সিন্ধান্তানুযায়ী অপরাধী ও অশিক্ষিতদের সাংবাদিকদের ঐতিহ্যবাহী নানা সংগঠনের সদস্য করে নিচ্ছে। ওই বির্তকিতরা যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে তখন সেই দলের লোক হয়ে যায়। অদৃশ্য ক্ষমতার অধিকারী ওই বির্তকিতরা তথ্য সংগ্রহের জন্য নিজে সরেজমিনে না গিয়ে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে তাদের ছত্রছায়ায় থাকা ওই সব অপরাধী ও অশিক্ষিতদের। ওই বির্তকিতদের শরীরে রোদ-বৃষ্টি লাগলে জ্বর-ছর্দি রোগে আক্রান্ত হয়ে যায়। তাই তারা তথ্য সংগ্রহের জন্য সরেজমিনে যায় না। তাদের ছত্রছায়ায় থাকা সাংবাদিক নামধারীরা এ পেশায় যুক্ত হবার পরও কেউ ইয়াবা, ফেন্সিডিল ও নারীসহ আইন শৃংখলা বাহিনী সদস্যদের হাতে আটক হবার পাশাপাশি একাধিক মামলায় অভিযুক্ত হয়েছে। এসব ঘটনার অনুকূলে একাধিক স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়। আবার কয়েকটি ঘটনা রহস্যজনকভাবে ধামাচাপা পরে গেছে। মজার বিষয় হচ্ছে, এদের বিরুদ্ধে যে সব পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়েছে, সেই ঘটনার আগে বা পরে, সেই সব পত্রিকাতেই তারা রিপোর্টার কিংবা ক্যামেরা ম্যান পদে কর্মরত ছিল। বিভিন্ন উপজেলা থেকে নগরীতে উঠে সাংবাদিক পেশার সাথে যুক্ত হওয়া অধিকাংশ ব্যক্তিদের স্থায়ী ঠিকানায় খোঁজ নিলেই বেড়িয়ে আসবে তারা একাধিক মামলার আসামীসহ অতীত জীবনে অপরাধমূলক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণচিত্র।নিজের অস্থিত্ব বাঁচাতে ওই সব অপরাধীরা কূটকৌশলে সাংবাদিক সাইন বোর্ড ব্যবহার করে আইনি সুযোগে সুবিধা ভোগ করছে। এ পেশার সাইনবোর্ড লাগিয়ে তারা ও তাদের অভিভাবকরা মনের আশা-বাসনা পূরণ করছে। সরকারী নিয়ম না মেনে কেউ নানা ব্যবসার সাথে যুক্ত হয়ে অসৎ উপায়ে অর্থ কামাচ্ছে। কয়েকজন রাতারাতি কোটিপতি বনে গেলেও দুদক এর ভূমিকা নিশ্চুপ। আবার কারো ঘরে স্ত্রী-সন্তান থাকলেও কু-নজর অন্য নারীসহ অসামাজিক ব্যবসার দিকে। কেউ পত্রিকা বা অনলাইনের একটি পরিচয়পত্র গলায় ঝুলিয়ে মাদক ক্রয়-বিক্রয়সহ আবাসিক হোটেলে খদ্দের-পতিতার সেবায় নিয়োজিত রয়েছে। কেউ রাজনীতি ও অফিস-আদালতের দালালি কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ত। কয়েকজন সাংবাদিকের খাতায় নাম উঠিয়ে বের করেছে পর্ণোগ্রাফি। এমন হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতির মধ্যে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরপন্থী সমর্থক অনেকেই নিজেকে সাংবাদিক পরিচয়ে জানান দিতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। পেশাটি নিরপেক্ষ হবার কথা থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফুটে উঠে যখন যে সরকার ক্ষতায় আসে তখন সেই দলের নেতা কর্মী বা তাদের আত্মীয়-স্বজনদের নাম থাকে পত্রিকার পিন্টারস্ লাইনে।
সাংবাদিকতার সমাধান কি? শিক্ষিত হলেও সমাজে বির্তকিত ব্যক্তি পত্রিকার পরিচালনাকারী এবং সম্মানিত পদগুলোর অধিকারী হয়ে তাদের পছন্দকৃত ব্যক্তিকে এ পেশায় নিয়োগ বা পরিচয়পত্র দিতে পারবে কিনা? সাংবাদিকতায় ১২ বছর অতিবাহিত করলেও আন্ডার মেট্রিক পাশ যোগ্যতার অনুকূলে বার্তা সম্পাদক হতে পারবে কিনা? এসব বিষয়গুলো এখনও স্পষ্ট হয়নি।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd