সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১:৫০ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ২০, ২০১৭
ডেস্ক নিউজ : প্রথমবারের মত কোনো সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন কোনো হিজড়া। ১৮ বছর আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজীতে স্নাতকোত্তর পাস করেন তিনি। বলছি রংপুর সিটি করপোরেশনের (রসিক) সংরক্ষিত মহিলা আসনে তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থী নাদিরা খানমের কথা।
এর আগে যশোরের বাঘারপাড়া পৌরসভা এবং সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভাতেও সংরক্ষিত নারী আসনে তৃতীয় লিঙ্গের দুইজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন বলে জানান নাদিরা খানম। তবে কোন সিটি করপোরেশনে তিনিই প্রথম প্রার্থী।
আগামী ২১ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তিনি মোবাইল প্রতীক নিয়ে সংরক্ষিত মহিলা আসন ৭ (১৮,২০ ও ২২ ওয়ার্ড) এ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন আরও সাতজন। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারণার কাজ চালাচ্ছেন নাদিরা। ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট ও দোয়া চাচ্ছেন।
নাদিরা বিডিমর্নিংকে বলেন, আমি জনগণের জন্য কাজ করতে এসেছি।আমি শেখ হাসিনার অধিনে ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য কাজ করব। আমি নিজের নামটি স্বর্ণাক্ষরে লিখে রেখে যেতে চাই।
নাদিরা বলেন, ভোটাররা আমাকে যেভাবে গ্রহণ করার কথা ছিল তার চেয়ে বেশি গ্রহণ করেছে। বিভিন্নভাবে সহায়তা করছে। ভালো সাড়া পাচ্ছি। অনেক নারী পুরুষ আমার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। মাঠের অবস্থাও ভালো।
নাদিরা খানম আরও বলেন, সমাজের অবহেলিত, সুবিধাবঞ্চিত ও নির্যাতিতদের সহায়ক হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি আমার মতো যারা তৃতীয় লিঙ্গ ওরাও কিছু কাজ করতে পারে এবং সমাজে তাদেরও কিছু কন্ট্রিবিউশন আছে, এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা। নির্বাচিত হলে এসব মানুষের সমস্যা সমাধানে নিজেকে উৎসর্গ করবো। আমার কমিউনিটির মৌলিক চাহিদা পূরণে কাজ করব।
নগরীর ২২ ওয়ার্ডের বালাপাড়ায় বসবাস করেন নাদিরা। ওই এলাকার বাসিন্দা পান দোকানি আকবর হোসেন বলেন, মেয়েটা খুব ভালো। অনেক লেখাপড়া করেছে। এম এ পাশ। অনেক দিন থাকি আমার বাড়ির পাশে থাকে। একদিন কইলো, মামা নির্বাচন করব্যার চাই। আমরা সাহস দিলাম, ব্যস নির্বাচনে নামি গ্যালো। এখন আমরা এলাকার মুরুব্বীরা তার পক্ষে কাজ করছি।
আদমজী জুট মিলসের প্রোডাকশন ম্যানেজার সিরাজুল ইসলামের চার সন্তানের মধ্যে নাদিরা দ্বিতীয়। তারা থাকতেন দিনাজপুরের নিউ টাউনের নিজ বাড়িতে।
নাদিরা খানম। ছবি তুলেছেন আবু সুফিয়ান জুয়েল।
নাদিরা বলেন, বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। ১৯৯১ সালে এসএসসি পাস করেছি। ছোট বোনের বিয়ের কথা পাকাপাকি। হঠাৎ বরপক্ষ থেকে কথা উঠল-মেয়ের বড় বোন তো ‘হিজড়া’। তার ছোট বোন বিয়ে করায় যদি উত্তরসূরিও তাই হয়! বিয়েটা তাই ভেঙ্গেই গেল। বাবা আমার মাকে চাপ দিতে থাকলেন। এই সন্তানের জন্য কি আরেক সন্তানের জীবন নষ্ট হবে? একে বাড়ি থেকে বের করে দাও। মায়ের কষ্ট দেখে আমি নিজেই বাড়ি ছেড়ে চলে যাই দিনাজুরের পার্বতীপুর মামার বাড়িতে।
মামার এক বন্ধু ছিলেন নিঃসন্তান। তিনিই আমাকে সন্তান হিসেবে লালন-পালনের দায়িত্ব নিলেন। দিনাজপুর আদর্শ ডিগ্রি কলেজ থেকেই বিএ পাস করার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে এমএম পূর্বভাগে ভর্তি হই। রাজশাহীতে নাদিরা ‘পালক বাবার’ সহায়তায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে ভাড়া বাসায় থেকে পড়াশুনা শেষ করি ১৯৯৯ সালে।
নাদিরা বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তিদের কাছ থেকে অনুদান নিয়ে বর্তমানে ৩৭০ জন তৃতীয় লিঙ্গের উন্নয়নে কাজ করছি। তাদের নিয়ে কাজ করতে করতেই সমাজের মূল ধারায় কাজ করার তাগিদ অনুভব করি। সেই থেকেই চিন্তা হলো জনপ্রতিনিধি হওয়ার। আর এ চিন্তা থেকেই সংরক্ষিত আসনের প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছি।
রংপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জি এম সাহাতাব উদ্দিন বলেন, নাদিরা তৃতীয় লিঙ্গের হলেও নারী হিসেবে ভোটার হয়েছেন। তিনিসহ আরও ভোটার রয়েছেন ছয়জন।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd