সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৩:১৮ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ২০, ২০১৭
ক্রাইম ডেস্ক : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সারাদেশে বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী হাওয়া। প্রতি আসনে একাদিক সম্ভাব্য প্রার্থীর সরব উপস্থিতি জানান দিচ্ছে আসন্ন নির্বাচনে লড়াই হবে হাড্ডা-হাড্ডি। সিলেট-৩ আসনে আওয়ামী লীগ বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির ১৩ জন সম্ভাব্য প্রার্থী মনোনয়ন পেতে এরই মধ্যে উচ্চ পর্যায়ে করছেন লবিং। বিশেষ করে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের নেতারা অনেকটাই রয়েছেন এগিয়ে। কেউ কাউকে কোনো ছাড় দিতে রাজি নন তারা। দল থেকে কে প্রার্থী হবেন তা নিয়ে এরই মধ্যে পাড়ার ক্লাব, বাজারের চায়ের দোকান ও দলীয় অফিসে চলছে মুখরোচক আলোচনা। সিলেটের ছয়টি আসনের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই সিলেট-৩ আসনের মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে রাজনৈতিক মাঠে চলছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের শীর্ষ চার নেতা এ আসনে মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে আছেন এগিয়ে। অপর দিকে ভোটের মাঠে বিরোধী বলয়ের বড় শক্তি বিএনপির ৪ হেভিয়েট নেতা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। তবে পিছিয়ে নেই জাতীয় সংসদের বর্তমান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও। সিলেট-৩ আসন থেকে জাপার মনোনয়ন চাইবেন ৫ প্রার্থী। এমনটাই শুনা যাচ্ছে জাতীয় পার্টির সাথে যুক্তদের কাছ থেকে।
দক্ষিণ সুরমার ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জের একাংশ নিয়ে গঠিত সিলেট-৩ আসন। এ আসনের শক্তিশালী প্রার্থী হচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বর্তমান এমপি মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী ও কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য সাবেক এমপি শফি আহমদ চৌধুরী। আসনটিতে আওয়ামী লীগে দ্বিধাবিভক্তি থাকার কারণে অন্য দলের প্রার্থীরা সুযোগ কাজে লাগাতে চাচ্ছেন।
বিশেষ করে বর্তমান এমপি মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী এমপি হওয়ার পর থেকেই তিনি নানা কারণে আলোচিত। তার বিরুদ্ধে নেতাকর্মীদের সাথে দুরত্ব বজায় রেখে চলার অভিযোগ রয়েছে। মূলত তাদেরই একটা অংশ তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে নানা অভিযোগ তুলে চলেছেন। আর এ সুযোগকে ঢাল হিসেবে কাজে লাগাতে চান ১২ প্রার্থী। যদিও শোনা যাচ্ছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য প্রথম ধাপে ১৫১ প্রার্থীর প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশনা এসেছে। এ তালিকায় যারা রয়েছেন তাদের অনেককেই ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকে মনোনয়নের বিষয়টি জানিয়ে নির্বাচনী এলাকায় জনসংযোগ করতে বলা হয়েছে। তার মধ্যে আছেন সিলেট-৩ আসন থেকে মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী। বর্তমান এমপি মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরীকে আটকাতে তার নিজ দল আওয়ামী লীগসহ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা এখন মরিয়া। যদিও সিলেট-৩ আসন থেকে টানা দুবার নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। এবার তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মনোনয়ন লড়াইয়ে নেমেছেন নিজ দল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব।
সিলেটের ঐতিহ্যবাহী দক্ষিণ সুরমার সিলেট-৩ আসনে বিএনপি থেকেও বিদ্রোহ প্রার্থীর কমতি নেই। দলীয় মনোনয়ন চান অন্তত চারজন। তাঁরা হলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, সাবেক এমপি শফি আহমদ চৌধুরী, সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল গফ্ফার, বিএনপি নেতা আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী ও যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতা ব্যারিস্টার এম এ সালাম।
আর বর্তমান সরকার বিরোধীদল জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিক এ আসন থেকে আগে একবার নির্বাচন করে পরাজিত হয়ে ছিলেন। তিনি এবারও এ আসন থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মনোনয়ন প্রাপ্তির দৌড়ে আছেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও জেলা জাপার সদস্য সচিব, বর্তমান তেতলী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান উছমান আলী, কেন্দ্রীয় সদস্য ও যুক্তরাজ্য জাপার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতা এবং যুক্তরাজ্য প্রবাসী জাপা নেতা ব্যারিস্টার ইম্মানুল হামিদ এনাম ও মুহিদুর রহমান।
সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমি এবারও মনোনয়ন চাইব। দল এবং নেত্রী যদি আমাকে প্রার্থী করেন তাহলে আমি নির্বাচনের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত আছি। তিনি বলেন, গত দুবারে একজন নির্বাচিত এমপি হিসেবে সিলেট-৩ আসনে (দক্ষিণ সুরমার ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জের একাংশ) সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করেছি। জনগণ তা জানেন এবং উন্নয়নের ফল ভোগ করছেন। জনগণের ভালোবাসা আর দলের জন্য কাজ করার কারণে আগামী নির্বাচনে দল আমাকে মূল্যায়ন করবে বলে তিনি আশাবাদী।
দলেও নেতাকর্মীদের মাঝে ক্লিন ইমেজ ও পরিশ্রমী রাজনীতিবিদ, সিলেটের জননন্দিত নেতা, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ দলিও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘সিলেট-৩ আসনের সাধারণ মানুষ এবং তৃণমূল নেতাকর্মীরা প্রার্থী হিসেবে দেখতে চাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে আমি দেশরত্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তকেই অগ্রাধিকার দেব। তিনি আমাকে যে আসনে মনোনয়ন দেবেন সেই আসন থেকেই নির্বাচন করব।’
সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ জানান, ‘মনোনয়ন চাওয়ার এখতিয়ার নেতাদের আছে। রাজনীতি করে একজন জনপ্রতিনিধি হতে চাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।’ সিলেট-৩-এ একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন চাইতে পারেন এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মনোনয়ন চাওয়া একটা ব্যাপার আর দল থেকে মনোনয়ন পাওয়াটা হলো ভিন্ন ব্যাপার। বিএনপির হাইকমান্ড মনোনয়ন দেয়ার ব্যাপারে সবসময়ই যোগ্য নেতাদের অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। সিলেট-৩ আসনের ক্ষেত্রে শফি আহমদ চৌধুরী একজন যোগ্য নেতা। তিনি সাবেক দু’বারের এমপি ছিলেন। এখনো নির্বাচনী এলাকার মানুষের পাশে থেকে কাজ করছেন আগের মতো। সেক্ষেত্রে তিনি মনে করেন এ আসনে দলের চেয়ারপার্সন বেগম জিয়ার আস্থাভাজন নেতা শফি চৌধুরীই মনোনয়ন পাবেন। যোগ করেন আলী আহমদ।
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তিনি ১০ বছর থেকে সিলেট-৩ আসনের মানুষের পাশে থেকে কাজ করছেন। জনপ্রতিনিধি না হয়েও অনেক উন্নয়নমূলক কাজে রয়েছে তার সম্পৃক্তা। মনোনয়ন চাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নেত্রী আমাকে এলাকায় কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া সাধারণ মানুষ এবং আওয়ামী লীগের সব শ্রেণীর নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল নেতারাও চান আমি মনোনয়ন চাই। সবার প্রত্যাশা পূরণে মনোনয়ন চাইব। আগামীতে মানুষের পাশে থেকে সেবামূলক ও উন্নয়ন কাজ আরো বেশি করে দেশের অগ্রযাত্রায় একজন কর্মী হিসেবে স্থান পেতেই এগিয়ে চলছি।’
বর্তমান সরকার বিরোধীদল জাতীয় পার্টির নেতা, জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব, ইউপি চেয়ারম্যান উছমান আলী জানান, ‘দলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিব অনেক আগেই আমাকে সিলেট-৩ আসনে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। গত নির্বাচনেও আমাকে এ আসন থেকে পার্টির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়। কিন্তু দলের সিদ্ধান্তের কারণে আমি মানোনয়ন প্রত্যাহার করি। এবারও দল আমাকে মনোনয়ন দেবে বলে আমি আশাবাদী। এরই মধ্যে পল্লিবন্ধু হুসেইস মুহম্মদ এরশাদ আমাকে গ্রীন সিগন্যাল দিয়েছেন।’
এই হেভিয়েট ১৩ মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীর দৌড়ে শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক মাঠে কে থাকছেন বা বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছেন। সেটা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে আরো কয়েকমাস।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd