লুনায় আস্থা বিএনপির আ’লীগ-জাপায় কোন্দল

প্রকাশিত: ২:৫৯ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৮

কাইয়ুম উলস্নাস সিলেট : সিলেট-২ আসনে (বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর-বালাগঞ্জ) বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর একটি শক্ত অবস্থান ছিল। কিন্তু এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের শফিকুর রহমান চৌধুরী আধিপত্য বিস্ত্মারে করে সাংসদ নির্বাচিত হন। এখন আওয়ামী লীগের নতুন মুখ আনোয়ারম্নজ্জামান চৌধুরী এবং জাতীয় পার্টির সাংসদ এহিয়া চৌধুরীর দাপটে খানিকটা অস্বস্ত্মিতে আছেন শফিকুর রহমান চৌধুরী। যে কারণে ইলিয়াসপত্নী তাহমিনা রম্নশদীর লুনা সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন। অন্যদিকে একক প্রার্থী মুনতাসিরকে নিয়ে সরব প্রচারণায় রয়েছে খেলাফত মজলিস। আওয়ামী লীগ-জাপার কাড়াকাড়িতে বিএনপি অথবা খেলাফত মজলিস আসনটি দখল নেয়ায় মরিয়া হয়ে আছে।

দলীয় সূত্র জানায়, ১৯৭১ সালের পরে দুবার সিলেট-২ আসন জাতীয় পার্টির দখলে ছিল। পরে ১৯৯৬ সালের (সপ্তম জাতীয় সংসদ) নির্বাচনে মকসুদ ইবনে আজিজ লামাকে হারিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহ আজিজুর রহমান এমপি নির্বাচিত হন। দীর্ঘ ২৫ বছর পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসে এবং সরকার গঠন করে। শুরম্ন হয় আওয়ামী লীগের নতুনভাবে ঘর গোছানো। তবে আওয়ামী লীগও এ আসনটি বেশিদিন কব্জায় রাখতে পারেনি। ২০০১ সালে এই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিএনপির প্রভাবশালী নেতা ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াছ আলী। ২০০৮ সালে এম ইলিয়াস আলী বিএনপির মনোনয়ন পান। তবে দলীয় নেতাদের অসহযোগিতার কারণে তৎকালীন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীর কাছে প্রায় ৩ হাজার ৪০০ ভোটের ব্যবধানে হেরে যান তিনি। ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল নিজ গাড়ি চালক আনসার আলীসহ ঢাকা থেকে নিখোঁজ হন এ প্রভাবশালী নেতা। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সিলেট-২ আসনে জাতীয় পার্টি, আওয়ামী লীগ, বিএনপি ক্ষমতায় গেলেও পর পর দু’বার কোনো দলই এ আসনটি ধরে রাখতে পারেনি। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও খেলাফত মজলিসে একক প্রার্থী থাকলেও আওয়ামী লীগে একাধিক প্রার্থী এখন থেকেই প্রচার প্রচরাণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

বিএনপির এই দুর্গ আওয়ামী লীগ (সিলেট-২ আসনটি) গত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি (দশম জাতীয় সংসদ) নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে সমঝোতায় উপহার দিয়েছিল। ‘নিশ্চিত জয়ের নির্বাচনে’ শফিকুর রহমানের বদলে প্রার্থী দেয়া হয় জোট-শরিক জাতীয় পার্টির তরম্নণ নেতা ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়াকে। বর্তমানে তিনি কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির যুগ্ম-মহাসচিব এবং সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য। এ আসনটি আবারও নিজেদের দখলে নিতে যেমন মরিয়া আওয়ামী লীগ, তেমনি ধরে রাখতে মরিয়া জাতীয় পার্টি। আবার বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি এম ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ ইসু্যতে আসনটি পুনরম্নদ্ধারে মরিয়া এখন ইলিয়াসপত্নী লুনা।

মনোনয়ন দৌড়ে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থীর মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও সিলেট জেলা আওয়মী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারম্নজ্জামান চৌধুরী ও সিলেট জেলা ছাত্র লীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা জগলু চৌধুরী। প্রচার প্রচারণার দিক থেকে জগলু চৌধুরী নীরব থাকলেও সাবেক সংসদ সদস্য ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী এবং যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারম্নজ্জামান চৌধুরী জোর প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। দুজনেই বিশ্বনাথ, ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জে নিজস্ব বলয় গড়ে তুলেছেন। আনোয়ারম্নজ্জামান নিজ গ্রম্নপকে নিয়ন্ত্রণ করেন লন্ডনে থেকে আর শফিক চৌধুরী নিজ গ্রম্নপকে নিয়ন্ত্রণ করেন সিলেটের টিলাগড় থেকে।

এদিকে প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত্ম সময় কাটাচ্ছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ মুনতাসির আলী। সম্প্রতি ওসমানীনগরের দয়ামীরে জনসভার মাধ্যমে তিনি তার প্রার্থিতা ঘোষণা করেন। অন্যদিকে ইসলামী ঐক্যজোট সিলেট জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ.ক.ম এনামুল হক মামুনও দলীয় প্রার্থী হচ্ছেন। ইসলামী ঐক্যজোটের একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছে- নির্বাচনের প্রায় বছর দেড়েক আগেই সিলেটের অন্যান্য প্রার্থীদের সঙ্গে প্রবাসী অধু্যষিত এই আসনে এনামুল হক মামুনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় এখনও এক বছরের মতো হাতে আছে। প্রার্থীরা আগে থেকে সকলেই এলাকায় সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদারের পাশাপাশি মাঠ-ঘাট, গ্রাম-গঞ্জের প্রত্যন্ত্ম অঞ্চলে চষে বেড়িয়ে জনমত তৈরিতে ব্যস্ত্ম সময় পার করছেন।

অনেকটা কৌশলগতভাবে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে নিয়মিত যোগ দিচ্ছেন ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়ানুষ্ঠানে। মতবিনিময় করে চলছেন বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে।

এ আসনে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর সহধর্মিণী তাহসিনা রম্নশদীর লুনা। গত ২৯ ডিসেম্বর ইলিয়াস আলীর মা সূর্যবান বিবিকে দেখতে এসে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রম্নহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু লুনাকে সিলেট-২ আসনের একমাত্র প্রার্থী ঘোষণা করে গেছেন। ওই দিন উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্যকালে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘ইলিয়াসের অবর্তমানে তার সহধর্মিণী তাহসিনা রম্নশদীর লুনাই এ আসনে নির্বাচন করবেন।’

বিএনপির প্রার্থী সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির ৪ চৌধুরীর ভাগ্য অনেকটা নির্ভর করছে জোটগত সিদ্ধান্ত্মের ওপর। কারণ বিএনপি থেকে যেমন আর কোনো প্রার্থী নেই, তেমনি জাতীয় পার্টি থেকে এককভাবে রয়েছেন এমপি এহিয়া। ২০১৪ সালের নির্বাচনে এ আসন জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী। এতে জাতীয় পার্টির ইয়াহইয়া চৌধুরীর কপাল খুললেও আর ছাড় দিতে নারাজ স্থানীয় আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী শফিক চৌধুরী ও আনোয়ারম্নজ্জামান চৌধুরীকে নিজেদের সিদ্ধান্ত্মের আগে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে দলীয় সিদ্ধান্ত্মের ওপর। জোটগত কারণে জাতীয় পার্টির হাই কমান্ডের কাছে যেমন ইয়াহ্‌ইয়া চৌধুরী এহিয়া পছন্দের তালিকায়, তেমনি আওয়ামী লীগের হাই কমান্ডের নিকট শফিক চৌধুরী ও আনোয়ারম্নজ্জামান চৌধুরী দুজনই রয়েছেন পছন্দের তালিকায়। কারণ তাদের দুজনেরই রয়েছে দেশে বিদেশে জোর লবিং।

গত নির্বাচনে দলের কাছে আত্মত্যাগের প্রতিদান হিসেবে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন শফিকুর রহমান চৌধুরী। তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে এম ইলিয়াস আলীকে পরাজিত করে এ আসনটি জননেত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিয়েছিলাম। বিগত নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত জেনেও শেখ হাসিনার নির্দেশেই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে বিজয়ী করেছিলাম। কিন্তু বিগত ৪ বছরে নির্বাচিত হয়ে জাতীয় পার্টির এমপি এলাকায় কোনো উন্নয়ন করেননি, সাধারণ মানুষ উন্নয়ন বঞ্চিত হয়েছেন। কাজেই এবার আমি শতভাগ আশাবাদী এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে দলীয় সভানেত্রী আমাকে সিলেট-২ আসনে মনোনয়ন দেবেন।

যুক্তরাজ্যে বসবাসরত আনোয়ারম্নজ্জামান চৌধুরীর জানান, দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে দলের জন্য কাজ করায় তিনিও আশাবাদী তাকে সিলেট-২ আসনে মনোনয়ন দেবেন দলীয় সভানেত্রী।

বাংলাদেশ বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত্ম সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বর্তমান সংসদ সদস্য ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া যায়যায়দিনকে জানান, তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সিলেট-২ আসনের উন্নয়নে নিরলস পরিশ্রম করে আসছেন। বিগত সাংসদদের তুলনায় গত ৪ বছরে বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর-বালাগঞ্জে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকা- দিগুণেরও বেশি করতে সক্ষম হয়েছেন। তাই আগামী সংসদ নির্বাচনে তাকেই এ আসনে প্রার্থী করা হবে। জাতীয় পার্টির তিনিই একক এবং একমাত্র পছন্দের প্রার্থী। জোটবদ্ধ নির্বাচন হোক বা না হোক তিনি লাঙল মার্কা নিয়েই নির্বাচন করবেন। তবে জোটগতভাবে বিগত সময়ের ন্যায় আগামী নির্বাচনেও একক প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারেও আশাবাদী রয়েছেন তিনি।

বিএনপির সম্ভাব্যপ্রার্থী তাহসিনা রম্নশদীর লুনা এখনো স্বামীর আগমনকেই গুরম্নত্ব দিচ্ছেন। তিনি যায়যায়দিনকে বলেন, ‘নির্বাচনের সময় আসলে তখন দেখা যাবে কি করা যায়, সঠিকভাবে এখনও বলা যাচ্ছে না। তবে দলীয় সিদ্ধান্ত্ম আসলে নির্বাচন করব।’

এদিকে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটি সহায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ শান্ত্মিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়ে মুহাম্মদ মুনতাসির আলী যায়যায়দিনকে বলেন, ‘বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের পক্ষ থেকে সিলেট-২ আসনে ঘোষিত ও মনোনীত একজন প্রার্থী। খেলাফত মজলিস ২০ দলীয় জোটে আছে, সময় আসলে এটা সমন্বয় করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে। আশাবাদী জোট থেকে মনোনয়ন পাব।সত্র – যায় যায় দিন

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

February 2018
S S M T W T F
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
2425262728  

সর্বশেষ খবর

………………………..