নিজস্ব প্রতিবেদন : সরকারবিরোধী ২০দলীয় জোটনেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজ সোমবার সিলেট আসছেন। কালো রংয়ের গাড়িবহরে হয়ে সড়ক পথে বিকেল ৩টায় তিনি সিলেট এস পৌছাবেন। সিলেট পৌঁছে বিকেল ৪টায় হযরত শাহজালাল (র.)-এর মাজার এবং সাড়ে ৪টায় হযরত শাহপরান (র.)-এর মাজার জিয়ারত করবেন। সার্কিট হাউসে রাতযাপন করে পরদিন সকালে ঢাকার উদ্দেশ্যে সিলেট ত্যাগ করবেন। সিলেট সফরকালে বেগম খাদো জিয়াকে ঘিরে মাইক ব্যবহারের অনুমতি দেয়নি পুলিশ। তাই সম্পূর্ন নিরবে ও নিস্তব্ধে এবার সিলেট সফর করতে হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়াকে। বেগম খালেদা জিয়াকে স্বাগতম জানিয়েছে সিলেটস্থ বিএনপি জোট।
এদিকে ২০দলীয় জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সিলেট সফরকে স্বাগত জানিয়ে প্রশাসনের নিরপেক্ষ আচরণ প্রত্যাশা করেছেন সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি নেতৃবৃন্দ। দলের চেয়ারপার্সনের সিলেট সফর উপলক্ষে রবিবার দুপুরে নগরীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করেন জেলা ও মহানগর বিএনপি নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘ ‘আমরা শান্তিতে বিশ্বাসী এবং দলীয় চেয়ারপার্সনের সফরকালে আমরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীসহ সকলের সহযোগিতা চাই।’ দলীয় চেয়ারপার্সনের সফরকালে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে নেতৃবৃন্দ সকল মহলের প্রতি আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন, দলের চেয়ারপার্সনের সিলেট সফর উপলক্ষে মাইকযোগে প্রচারণা চালাতে প্রশাসন বাঁধা প্রদান করছে। দলের নেতা-কর্মীদের বাসা-বাড়িতে তল্লাশীরও অভিযোগ আনেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক দিলদার হোসেন সেলিম, সাবেক এমপি শফি আহমদ চৌধুরী, জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সদস্য আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, মহানগর সভাপতি নাসিম হোসাইন, সেক্রেটারী বদরুজ্জামান সেলিম, জেলা সেক্রেটারী আলী আহমদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
হয়রত শাহজালাল (রা:)‘র পূণ্যভূমিতে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া‘র আগমন উপলক্ষ্যে মাইকিং করে প্রচারের সুযোগ না থাকলেও লিফলেট বিতরন ও মিছিল করে দল ও জোট নেত্রীর আগমনের প্রচারানা চালিয়েছেন নেতাকর্মীরা। বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা ও সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ জেলা ও মহানগর বিএনপি এবং ছাত্রদল ও জোটের অন্যান্য দলের নেতাকর্মীরা গতকাল রবিবার দিনভর নগরীর সর্বত্র প্রচারপত্র বিতরণ করেন।
দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সিলেট সফরকে স্বাগত জানিয়ে রোববার দুপুরে নগরীতে মিছিল বের সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রদল। নগরীর চৌহাট্রা পয়েন্ট থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি রিকাবিবাজার পয়েন্টে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়। জেলা ছাত্রদলের ১ম সহ-সভাপতি ও জেলাবিএনপির সদস্য চৌধুরী মোহাম্মদ সুহেল‘র সভাপতিত্বে ও মহানগর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মির্জা স¤্রাট হোসেন‘র পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, সাবেক ছাত্রদল নেতা মলয় লাল ধর, আহমেদ জামান, জাবেদ আহমদ, মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কায়সান মাহমুদ সুমন, শাফায়েত হোসেন সাজ্জাদ, জেলা ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এম এ হাসান, মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল রহিম মতছির, কফিল হোসেন, হেলিম খান মাসুদ, সাগর সেন, বাবলু আহমদ, জাবেদ আহমদ, মহানগর ছাত্রদলের সাবেক শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক মেহেরাজ ভূইয়া পলাশ, মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আবুল হোসেন প্রমুখ।
বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সিলেট সফরকে স্বাগত জানিয়ে মিছিল করেছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সিলেট জেলা শাখা।
রবিবার দুপুরে সিলেট জজকোর্টের ৩নং বার হল থেকে মিছিলটি বের হয়ে সুরমা পয়েন্ট প্রদক্ষিণ করে পুনরায় ৩নং বার হলে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়। ফোরামের সভাপতি এডভোকেট এটিএম ফয়েজ উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মো. আতিকুর রহমান শাবু’র পরিচালনায় সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে ছাড়া এদেশে কোন নির্বাচন করতে দেওয়া হবেনা। তার সাথে দেশের জনগণ রয়েছে। আগামী ৮তারিখে রায় তার বিরুদ্ধে গেলে দেশের জনগণকে সাথে নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন এডভোকেট এম নুরুল হক, এডভোকেট মো. আব্দুল গফফার, এডভোকেট মৌলানা আব্দুর রকিব, এডভোকেট আশিক উদ্দিন আশুক, এডভোকেট জুবের আহমদ খান, এডভোকেট এখলাছুর রহমান, এডভোকেট আব্দুল মুকিত জাহাঙ্গীর, এডভোকেট কামাল হোসেন, এডভোকেট মহসিন আহমদ, এডভোকেট বদরুল আহমদ চৌধুরী, এডভোকেট এজাজ উদ্দিন, এডভোকেট খালেদ জুবায়ের, সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট ইকবাল আহমদ, এডভোকেট ওবায়দুর রহমান ফাহমি, এডভোকেট মোমিনুল ইসলাম মুমিন, এডভোকেট তানভির আক্তার খান, এডভোকেট কবি আহমদ বাবর, এডভোকেট নাজমুল হোসাইন, এডভোকেট মো. আব্দুল মুকিত, এডভোকেট মো. আতিকুর রহমান, এডভোকেট আলী হায়দার, এডভোকেট ইসরাফিল আলী, এডভোকেট আব্দুল মালিক প্রমূখ।
বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া’র সিলেট আগমন উপলক্ষে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ সিলেট মহানগর শাখার প্রচার সম্পাদক মাওলানা সালেহ আহমদ’র নেতৃত্বে রোববার দুপুরে নগরীর বিভিন্ন জায়গায় জনসাধারণের মধ্যে প্রচারপত্র বিলি করা হয়।এসময় উপস্থিত ছিলেন মহানগর যুব জমিয়তের সহ সভাপতি সৈয়দ উবায়দুর রহমান, অর্থ সম্পাদক আবু সুফিয়ান, মহানগর ছাত্র জমিয়তের সভাপতি মুহাম্মদ লুৎফুর রহমান, যুব নেতা আনোয়ারুল হক।
গত ৩০ জানুয়ারি সিলেট সফর করেন শাসকদল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাত্র একদিনের ব্যবধানে ১জানুয়ারি সিলেট সফর করেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত জেনারেল (অবঃ) এইচ এম এরশাদ। উভয় নেতাই আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজ নিজ দলের নির্বাচনী প্রচারনা শুরুর ঘোষনা দেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বর্নিল আয়োজনে আয়োজিত আলিয়া সমাদ্রাসার জনসভায় দলীয় নির্বাচনী প্রচারনার ঘোষনা দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের নৌকা প্রতীকে ভোটও চেয়েছেন। জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এরশাদ সিলেট সফরকালে জনসভা না করলেও সিলেট সার্কিট হাউসে নেতা-নেত্রীদের নিয়ে বৈঠক করে পুন্যভ’মি সিলেট থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরুর ঘোষনা দেন। খাজা বাবার দোয়া নিয়ে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩শ’ আসনে দলের প্রার্থী দেবেন, এই বার্তা পৌছিয়ে যান দলের নেতাকর্মীদের কাছে।
এই ধারাবাহিকতায় ৩দিনের ব্যবধানে ২০দলীয় জোট নেত্রী বিএনপি চেযারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ারও সিলেট সফর। বেগম খালেদা জিয়া রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বি দুই নেতার মত হযরত শাহজালাল (র.) ও হযরত শাহপরাণ (র.)-এর মাজার জিয়ারত এবং সিলেটে রাতযাপন করলেও নেতাকর্মীদের জন্য কি বার্তা নিয়ে আসছেন তা কারো জানা নেই। নিছক মাজার জেয়ারত ও ওলিদের দোয়া গ্রহণ না জেয়ারতের মধ্যদিয়ে নেতাকর্মীদের নতুন কোন বার্তা পৌছিয়ে দেবেন তা’ এখনো পরিষ্কার নয়। তবে গত শনিবারের জাতীয় কমিটির সভার সিদ্ধান্ত থেকে পরিস্কার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও জাপা চেয়ারম্যান এরশাদের ন্যায় সিলেট থেকে নির্বাচনী প্রচারনা শুরুর ঘোষনা দেবেন বলে মনে হচ্ছে না। তবে কি বার্তা পৌছাবেন সেটা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা কল্পনা। আগামী ডিসেম্বরে সরকার ও সরকারী জোটের একতরফা জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘোষনা এবং আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া আরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়, এ দুটিই প্রধান আলোচ্যসূচী থাকেত পারে সিলেট সফরকালীন নেতাকর্মীদের সাথে একান্ত বৈঠকে। প্রতিদ্বিন্দ্বি দুই দলীয় তাদের নির্বাচনী প্রচার ঘোষনা দিলেও বেগম খালেদা জিয়া এর বিপরীতে আন্দোলনের সূচনা ও ঘোষনা করতে পারেন বলে ধারনা করা হচ্ছে। আর সেটা হতে পারে সম্পূর্ন ঘরোয়া ও নিরিবিলি পরিবেশে অতি গোপনীয়তার সাথে।
Sharing is caring!