সিলেট ৩০শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৯:০৪ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৮
গোলাপগঞ্জ প্রতিনিধি : সিলেটের গোলাপগঞ্জে এসএসসি এক পরিক্ষার্থীকে বখাটেদের উত্ত্যক্ত করার পর তার পরিবারকে ”একঘরে” করে রাখা হয়েছে। পঞ্চায়েতের সমজিদে যেতে নিষেধ করা হয়েছে ওই পরিক্ষার্থীর পরিবারের কোমলমতি শিশু সহ তার পরিবারের লোকজনদের। মসজিদেও ইমামকে নিষেধ করা হয়েছে এ বাড়ীর শিশুদের না পড়াতে। এলাকার কয়েকজন মাতব্বরের হিং¯্র মনোভাবের কারণে চরম বিপাকে পড়েছে এ পরিবারের অসহায় লোকজন। প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন অসহায় এ পরিবারের শিক্ষার্থী।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে দেয়া অভিযোগ থেকে জানা যায়, দীর্ঘদিন থেকে উপজেলার আমুড়া ইউনিয়নের শিলঘাট (রংপুর) গ্রামের আব্দুল মন্নানের সাথে স্থানীয় মসজিদের পঞ্চায়েক কমিটির সভাপতি আলাউদ্দিন সহ কয়েকজন লোকের বিরোধ চলে আসছে। এ বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে স্থানীয় জনপ্রতিনিধ সহ এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উদ্যোগ নেয়। এনিয়ে এলাকায় অনেক সালীশ বৈঠক হলে বিষয়টি প্রথমিক নিস্পত্তি করা হয়। এর পর আবারও পর পক্ষ শুরু করে উৎপাত। তারা বিভিন্নভাবে নাজেহাল করতে ওঠেপড়ে লাগে আব্দুল হান্নান ও তার পরিবারের লোকজনদের বিরুদ্ধে। গত শক্রবার আব্দুল হান্নানের মেয়ে ও ভাতিজিসহ কয়েকজন শিশু পঞ্চায়েতে মসজিদে পড়তে গেলে তাদেরকে ফেরৎ পাঠানো হয়। মসজিদের ইমাম তাদেরকে বলে পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি আলা উদ্দিন ও কাজল সহ কয়েকজন নিষেধ করেছেন তোমাদেরকে যেন আমি পাঠদান না করাই। এর পর আব্দুল হান্নানের বাড়ীতে লোক পাঠিয়ে বলা হয় তোমাদের এখন ”এক ঘরে” করে রাখা হয়েছে। তাদের পরিবারের লোকদের শ^াসিয়ে বলা হয়, পঞ্চায়েতে তোমাদের কোন অধিকার নেই। তোমরা পঞ্চায়েতের কোন সুবিধা পাবেনা। অসহায় এ পরিবারের আব্দুল হান্নান জানান, আমাদেরকে হুমকি ও শ^াসানোর পর মসজিদে মুষ্টি চালও নেয়া হচ্ছেনা। আমার ভাতিজি চলমান এসএসসি পরিক্ষার্থী চামেলী আক্তারকে পরিক্ষা কেন্দ্রে যেতে বাধাঁ দেয়া হচ্ছে। তাদের বাড়ীর পার্শে থাকা বাশের সাকোঁ দিয়ে যাতায়াতের রাস্তা তারা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তাদের বাধার কারণে ওই পরিক্ষার্থী একটি পরিক্ষায় পরিক্ষায় যেতে বিলম্ব হয়েছে। পরিক্ষা শুরুর ২০মিনিট পর পরিক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হয়েছে। ফলে ব্যঘাট ঘটছে তার পরিক্ষায়। এ বিষয়ে নিরুপায় হয়ে গত সোমবার উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে এসএসসি পরিক্ষার্থী চামেলী আক্তার। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, শিলঘাটস্থ সৈয়দ আদিবা হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও চলমান এসএসসি পরিক্ষার্থী। তিনি উপজেলার ঢাকাদক্ষিণে অবস্থিত এসএসসি পরিক্ষা কেন্দ্র গোলাপ-২ তে যাতায়াতের সময় প্রায়ই উত্ত্যক্ত করে এ গ্রামের হিরা মিয়ার পুত্র কাজল মিয়া ও দিলসু মিয়ার পুত্র সুরমান আলী সহ এলাকার বখাটেরা।এর পেচন থেকে কলকাটি নাড়ছেন এলাকার রহমান আলীর পুত্র মঈউদ্দিনসহ কয়েকজন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমি পরিক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার সময় তারা আমাকে একদিন গা-ধাক্কা দিয়ে বাড়িতে ফিরিয়ে দেয়। এসব অভিযেগের প্রেক্ষিতে জানতে চাইলে এসএসসি পরিক্ষার্থী চামেলী আক্তারের পিতা আব্দুল করিম জানান, পরিক্ষা কেন্দ্রে আমার মেয়ে চামেলীকে বাধা দেয়া হয়েছে। যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা দেয়া হয়েছে বন্ধ করে। এমনকি তারা নদী পারাপারে নিয়োজিত থাকা নৌকাও সরিয়ে ফেলেছে। চামেলী আক্তারের চাচা আব্দুল মন্নান জানান, শুধু আমার ভাতিজি চামেলীকে স্কুলে পরিক্ষা দিতে বাধাঁ প্রদান করেনি, তারা আমার পরিবারকে ”একঘরে” করে দিয়েছে। তারা আমাদেরকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। আমাদের পরিবারের কোমলমতি শিশুদের সমজিদে পড়ার জন্য নিষেধ করা হয়েছে। জানতে চাইলে এলাকার বিশিষ্ট মুরব্বি মাসুদ আহমদ চৌধুরী বলেন, একটি পরিবারকে একঘরে করে রাখা মোটেও কাম্য নয়। আরেক মুরব্বি আছাব আলী (৬০) বলেন, সভ্য সমাজে এ রকম হওয়া উচিত নয়। তিনি বলেন একঘরে রাখা বিষটি অত্যান্ত অন্যায় ও অবিচার। এলাকার মুরব্বি মওয়াই আলী বলেন, এলাকার কয়েকজন লোক উদ্যেশ্যমূলকভাবে এ কাজ করছে। এসএসসি পরিক্ষার্থী চামেলী আক্তার জানায়, আমাকে প্রতিনিয়ত পরিক্ষা কেন্দ্রে যেতে বাধাঁ দেয়া হচ্ছে। আমাকে হুমকি দিয়ে বলা হচ্ছে রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করলে আমাকে সায়েস্তা করা হবে। জানতে চাইলে আমুড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রুহেল আহমদ বলেন, আমি বিষয়টি সামাজিক ভাবে নিষ্পত্তি করতে অনেক চেষ্টা করেছি। প্রাথমিকভাবে শেষ হয়েছে। কিন্ত অপর একটি পক্ষের কারণে বিষয়টি একেবারে মিমাংসা করা সম্ভব হয়নি। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডর মেম্বার আব্দুল গফ্ফার কুটি বলেন, দুপক্ষের এ বিরোধ নিস্পত্তি করতে আমি কয়েকবার নিজেই উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্ত একটি পক্ষের কারণে তা সম্ভব হয়নি। জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আমি অভিযোগ পাওয়ার পর পরই সাথে সাথে থানার ওসির কাছে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ফরোয়ার্ডিং করে পাঠিয়েছি।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd