বাসস: জেলার বানিয়াচং উপজেলার হাওর এলাকায় নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। অন্যতম বৃহত্তম হাওর ও শস্য ভান্ডার খ্যাত মকার হাওরে সরকার ও জাইকার অর্থায়নে গ্রহণ করা হয়েছে ৫০ কোটি টাকার প্রকল্প। ইতোমধ্যে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, মকার হাওরের ৩০ হাজার একর জমির বোরো ধান আগাম বন্যার হাত থেকে বাঁচাতে এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পে রয়েছে ২৩.৮ কিলোমিটার ডুবন্ত বাধ নির্মাণ। এ বাধ নির্মাণ করার ফলে আগাম বন্যার পানি হাওরে প্রবেশ করতে পারবে না। পাশাপাশি ৪০ কিলোমিটার খাল ও নদী খনন করা হবে এ প্রকল্পে। ৬/৭ ফুট গভীর করা হবে এ খাল ও নদী। ফলে এ খাল ও নদীতে বাড়বে মাছের উৎপাদন। শুকনো মৌসুমে সেচের জন্য অভাব হবে না পানির। তৈরি করতে হবে না দীর্ঘ ড্রেন। ফলে ধান উৎপাদনের খরচও সাশ্রয় হবে।
এ প্রকল্পে আরও রয়েছে ৭টি রেগুলেটার নির্মাণ, ৪টি কজ ওয়ে নির্মাণ, ৯টি ইরিগেশন ইনলেট নির্মাণ ও ৮টি বক্স কালভার্ট নির্মাণ।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নতুন এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বানিয়াচং ও নবীগঞ্জ উপজেলার মকার হাওর এর মাঝে থাকা শতাধিক গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার লোকের স্বচ্ছলতা আসবে। আগাম বন্যায় তলিয়ে যাবে না ফসল। আবার পানি নিস্কাশনেরও সুযোগ থাকবে। বোরো ধানের পাশাপাশি মাছ, হাঁস ও গবাদিপশুপালনসহ কৃষি ভিত্তিক বিভিন্ন কর্মকান্ড বৃদ্ধি পাবে। ওই প্রকল্প এলাকায় রক্ষা পাবে প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন ধান। যেখানে জেলার মোট চাহিদার পরিমাণ হল ৫ লাখ ৬৪ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন ধান। অর্থাৎ জেলার মোট চাহিদার তিন ভাগের এক ভাগ চলে আসবে এ একটি মাত্র হাওর থেকে।
হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান জানান, যদি প্রতি বছর মকার হাওরের প্রকল্পভুক্ত এলাকার ধান কৃষক উঠাতে পারে তাহলে সেখানে ৩০ কোটি টাকার ধান উৎপাদন হবে। মাছের পরিমাণও বাড়বে বিপুল পরিমাণ। পাশাপাশি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হাঁস ও ডিমের খামার গড়ে উঠবে ওই এলাকায়।
বানিয়াচং উপজেলার কাগাপাশা গ্রামের কৃষক আব্দুস সাত্তার জানান, মকার হাওরের ফসলের উপর ভিত্তি করেই তাদের সারা বছর চলতে হয়। কিন্তু অনেক সময় পাকা ধান তোলা যেত না আগাম বন্যার জন্য। নতুন প্রকল্প গ্রহণ করায় এখন তাদের ফসল রক্ষা পাবে।
কাগাপাশা গ্রামের পাশাপাশি মকা, মাকালকান্দি, চমকপুর, বাঘাহাতা, বগি, দৌলতুপুর,ঝিলুয়া, গোখড়াপুরসহ অর্ধ শতাধিক গ্রামের লোকজন এ হাওরের উপর নির্ভরশীল।
চমকপুর গ্রামের কৃষব সাহিদ মিয়া জানান, হাওর হল তাদের প্রাণ। এ হাওর থেকেই তারা জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু ফসলের অনিশ্চয়তায় অনেকেই পেশা ছেড়ে শহরে চলে গেছেন। ফলে কৃষি ক্ষেত্রে শ্রমিকের সংকট দেখা দিয়েছে। এখন প্রকল্পটি হলে আবার সবাই নতুন আশায় মাঠে নামবেন।
হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এম এল সৈতক জানান, সরকার ও জাইকার অর্থায়নে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। এর বহুমুখি সুবিধা পাবেন হাওর এলাকার মানুষ। প্রকল্পের কাজ শেষ হতে দুই বছর লাগলেও চলতি মৌসুম থেকেই এর সুবিধা ভোগ করতে থাকবেন কৃষকরা।
হবিগঞ্জ-২ আসনের এমপি এডভোকেট আব্দুল মজিদ খান জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রান্তিক ও হাওর এলাকার জনগণকে ভালবাসেন বলেই মকার হাওরে প্রকল্প গ্রহণ করতে পেরেছি। অতীতে দীর্ঘদিন যাবৎ হাওর এলাকাগুলো ছিল উন্নয়ন বঞ্চিত। মকার হাওর প্রকল্পে শুধু ওই এলাকার জনগণ উপকৃত হবে না। বরং দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় এ প্রকল্প ভূমিকা রাখবে।