সিলেট ৩০শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১:৪৯ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৮
নিজস্ব প্রতিনিধি :: ভাষা আন্দোলনসহ নানা আন্দোলন সংগ্রামের স্মৃতি বিজরিত সুনামগঞ্জ শহরের পুরাতন কলেজ চত্বর (বর্তমান টাউন হল মার্কেট) অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে। জেলা প্রশাসনের খতিয়ানভূক্ত এই জমিতে ১৯৭৯-৮০ সালে বহুতল বিপণি বিতান করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও এটি হয়ে ওঠেনি। নির্মাণাধীন এই বিপণি বিতান এখন শহরের সৌন্দর্যহানির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারী জমিও বেহাত হয়েছে।
শহরের প্রাণকেন্দ্রের (বর্তমান আলফাত স্কয়ার) বাম পাশে এক সময় একচালা ঘরে সুনামগঞ্জ কলেজ ছিল। এর সামনের চত্বর ছিল সভা-সমাবেশের স্থান। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ভাষা আন্দোলন, পাকিস্তানের সামরিকজান্তা বিরোধী আন্দোলন জমে ওঠতো এই চত্বরকে ঘিরেই। অথচ. এই চত্বরে ঐতিহাসিক কোন স্মৃতি নেই।
১৯৭৯-৮০ ইংরেজিতে তৎকালীন পৌর চেয়ারম্যান প্রয়াত ইকবাল হোসেন চৌধুরী পুরাতন কলেজ চত্বরে টাউন হল মার্কেট নাম দিয়ে একটি ৭ তলা বিপণি বিতান করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তেঘরিয়া মৌজার ৪৩৩ নম্বর দাগের এই জমিতে ১৯৮০ সালে বিপণি বিতানের কাজ শুরু হয়। ভবনের ভিত্তির কাজ শেষ হতেই তৎকালীন পৌর কর্তৃপক্ষ কাজ বন্ধ করে দেন। পরে যাদের দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল, তারা দায়সারাভাবে এক তলার কাজ শেষ করে দোকানের দখল নেন।
এখন এই বিপণি বিতাণের ভেতরে ঢুকার পরিবেশ নেই। ভেতরে যার যেমন ইচ্ছা কাজ করেছে। পাকা ভেঙে পানি যাওয়ার ড্রেন করা হয়েছে। তিনটি বাথরুমই দখল করে ভিডিও গেইমের দোকান হয়েছে। বিপণি বিতানের সিড়ি কোঠা দখল করে নি¤œমানের জুতার দোকান, সামনের অফিস কক্ষ সবই দখলে। এসব দোকান কোঠাতে ফুটপাতের মতো দোকান করে রাখা হয়েছে। শহরের বিপণি বিতানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নিম্নমানের পরিবেশ এখন এই বিপণি বিতানে।
টাউন হল মার্কেটের দোকান মালিক আবু হোসেন মোহাম্মদ ফাহিম বলেন,‘প্রয়াত পৌর চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন চৌধুরী এই মার্কেটের ভিত্তির কাজ করার পর, এক পর্যায়ে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরে মার্কেট কমিটির সভাপতি মরহুম দেওয়ান কামাল রাজা চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মরহুম আমিরুল ইসলামসহ দোকান মালিকদের চেষ্টায় এক তলার কাজ কোনভাবে শেষ করা হয়। এখন মার্কেটের সিঁড়িঘর, বাথরুম দখল হয়ে আছে। সামনেও চালা বেধে অপরিচ্ছন্ন করে রাখা হয়েছে। ওয়ান ইলিভেনের সময় একবার এসব ভাঙা হয়েছিল, আবার দখলে চলে গেছে।’
মার্কেটের দোকানী হাসানুজ্জামান বলেন,‘এই মার্কেটের ফটকসহ কোন কিছু নষ্ট হলে বা পানি নিস্কাশনে সমস্যা হলে দোকানীদের নিজেদেরই ঠিক করতে হয়। অন্য কেউ দেখার নেই।’
প্রবীণ আইনজীবী লেখক হোসেন তওফিক চৌধুরী বলেন,‘পুরাতন কলেজ চত্বর এক সময় শহরের রাজনৈতিক চত্বর ছিল। এই চত্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও বক্তৃতা দিয়েছেন। ভাষা সংগ্রামীরা এখানেই সমাবেশ করেছিলেন। এই ঐতিহাসিক চত্বরের এখন অস্তিত্ব নেই। এই জমিতে নির্মিত টাউনহল মার্কেটটি শহরের সৌন্দর্য্যহানির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
জেলা জাসদের সভাপতি আতম সালেহ বললেন,‘ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, পাকিস্তানের সামরিক জান্তা বিরোধী আন্দোলন সবই হয়েছে এই চত্বর থেকে। এই চত্বরে অপরিকল্পিতভাবে টাউন হল মার্কেট করা হয়েছে। অথচ এই চত্বরে একটি সভামঞ্চ, একটি স্মৃতিসৌধ করেও মার্কেট করা যেতো। এটি এখন এমন অবস্থায় আছে, না হয়েছে মার্কেট, না চত্বর, মার্কেটের সামনে চালা ঘর করে দখলে নেওয়া হয়েছে। শহরে প্রবেশ করলেই এমন খারাপ অবস্থা দেখতে হয়। আমরা বার বার পৌরসভার মেয়র ও জেলা প্রশাসককে বলেছি, এই ভবনকে দৃষ্টিনন্দন করার জন্য। বহুতল করার জন্য। এটি হচ্ছে না। অন্যদিকে আমরা ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর শহীদ মিনার করার জমি পাই না। অথচ. এটি জেলা প্রশাসকের খতিয়ানভুক্ত জমি, ব্যবহার হচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে।’
পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মীর মোশারফ হোসেন বলেন,‘টাউন হল মার্কেটের জমি জেলা প্রশাসকের এক নম্বর খতিয়ানভূক্ত। টাউন হল কমিটি এই মার্কেট করেছিল। আমার যতটুকু জানা জনাব ফয়জুর রহমান জেলা প্রশাসক থাকার সময় এই ভবনকে বহুতল ও আধুনিক করার জন্য কমিটি করা হয়েছিল। ঐ কমিটির সভাপতি ছিলেন জেলা প্রশাসক ও সম্পাদক করা হয়েছিল পৌরসভার মেয়র মহোদয়কে। পরবর্তীতে শেখ রফিকুল ইসলাম জেলা প্রশাসক যখন ছিলেন, তখন আবার এই নিয়ে আলোচনা হয়েছিল, কিন্তু কোন কাজ আগায়নি।’
জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি প্রবীণ রাজনীতিক অ্যাডভোকেট আপ্তাব উদ্দিন বলেন,‘এই জমিতে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের আগে এমনভাবে করা উচিৎ ছিল, যাতে ঐতিহাসিক স্মৃতিও থাকে, বিপণিও হয়। কিন্তু কোনটাই হয়নি। আগে এখানকার সামনের টিনশেড ঘর বিএনপির দখলে ছিল। এখনও অনেকে দখলে রেখেছে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd