সিলেট-২ আসনে ফিরিয়ে না নিলে নির্বাচন বর্জন

প্রকাশিত: ৬:১৫ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৮, ২০১৮

সিলেট-২ আসনে ফিরিয়ে না নিলে নির্বাচন বর্জন
আজমল খান : সিলেটের দক্ষিণের উপজেলা বালাগঞ্জ। এ উপজেলা দীর্ঘ সময় সিলেট-২ সংসদীয় আসনে ছিল। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে এর তিন ইউনিয়নকে সিলেট-৩ আসনে যুক্ত করা হয়। এরপর থেকেই ওই তিন ইউনিয়নকে সিলেট-২ আসনে ফিরিয়ে নেয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন এলাকাবাসী। এরই মধ্যে আসন্ন সংসদ নির্বাচনের জন্য সীমানা পুনর্বিন্যাসের খসড়া করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আর তাতে পুরো বালাগঞ্জই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সিলেট-৩ এ। স্থানীয়রা তাই ক্ষুব্ধ। বিভিন্ন কর্মসূচিতে তারা হুশিয়ারি দিয়ে বলছেন, বালাগঞ্জকে আগের সীমানায় ফিরিয়ে না নেয়া হলে আসন্ন নির্বাচন বর্জন করবেন তারা। এ ইস্যুতে একাট্টা আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ অন্য দলগুলোও।

স্থানীয় জনপ্রতিধিরা জানান, ২০০৮-এ তিন ইউনিয়ন- দেওয়ান বাজার, পূর্বগৌরীপুর ও পশ্চিম গৌরীপুর সিলেট-৩ আসনে যুক্ত হলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এসব ইউনিয়নের অধিবাসীরা। পরে এক উপজেলায় দুই এমপির কর্তৃত্ব ও কিছু দুর্ভোগের কারণে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। উপজেলার সর্বস্তরের মানুষের সমন্বয়ে ২০১৩ সালে গঠিত হয় ‘সর্বদলীয় সম্মিলিত নাগরিক কমিটি’। তিন ইউনিয়নকে আগের সীমানায় ফেরাতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে তারা।

জনপ্রতিধিরা আরও বলেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচনের জন্য ২১ জানুয়ারি অর্ধশতাধিক সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয় ইসি। পরদিন থেকেই ‘সর্বদলীয় সম্মিলিত নাগরিক কমিটি’ সভা-সমাবেশ, মতবিনিময় ও মানববন্ধন করে আগের সীমানায় ফিরে যাওয়ার দাবি জানাতে থাকে। ১৫ মার্চ সীমানা পুনর্বিন্যাসের খসড়া প্রকাশ করে ইসি। তাতে সিলেট-২ ও ৩ আসনের নামোল্লেখ ছিল না। তবে পরে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা যায়, বালাগঞ্জকে সিলেট-৩ এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকেই বালাগঞ্জবাসী ফুঁসে উঠতে শুরু করেন।

‘সর্বদলীয় সম্মিলিত নাগরিক কমিটি’র আহ্বায়ক জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জুয়েল আহমদ বলেন, সংসদীয় আসন পুনরুদ্ধারে এপ্রিলব্যাপী কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ, প্রতিবাদ সমাবেশ, বিক্ষোভ ও মানববন্ধন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। শিগগিরই আমরা ঢাকায় গিয়ে নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে যুক্তি তুলে ধরব। কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম মুজিবুর রহমান বলেন, ইতিহাস ঐতিহ্যে ভরপুর বালাগঞ্জের ওপর বেশ কিছু দিন ধরে শকুনের দৃষ্টি পড়েছে। হীন স্বার্থে বালাগঞ্জকে বারবার খণ্ড-বিখণ্ড করা হচ্ছে। কমিটির সদস্য সাবেক ইউপি সদস্য হারুন মিয়া বলেন, শেষ পর্যন্ত বালাগঞ্জকে সিলেট-২ আসনে পুনর্বহাল করা না হলে সংসদ নির্বাচন বর্জনের কর্মসূচি দেবেন উপজেলাবাসী। যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এতেও যদি কাক্সিক্ষত ফল না আসে জাতীয় নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে বিরত থাকার বিষয়ে ভাবা হবে।

বালাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান আনহার মিয়া বলেন, বালাগঞ্জকে সিলেট-২ আসনে ফিরিয়ে আনতে আমরা সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করছি। ১ মে ইসিতে আপত্তি জানানো হয়েছে। যদি হ্যাঁবাচক সিদ্ধান্ত না আসে, অবশ্যই আমরা উচ্চ আদালতে যাব। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সিলেট-৬ আসন থেকে সিলেট-২ আসনের সৃষ্টি। তাই এ আসনে থাকা মানেই আমাদের ঐতিহ্য বজায় রাখা।

বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল মুনিম বলেন, রাজনৈতিক পেশিশক্তির বলে পুরো উপজেলাকে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমরা অস্তিত্ব হারাতে চাই না। জোর করে অন্য আসনে ঠেলে দেয়া হলে কঠোর হতে বাধ্য হব। প্রয়োজনে জাতীয় নির্বাচন বয়কট করব।

‘সর্বদলীয় সম্মিলিত নাগরিক কমিটি’র যুগ্ম আহ্বায়ক দেওয়ান বাজার ইউপি চেয়ারম্যান নাজমূল আলম নজম বলেন, বালাগঞ্জ আমাদের শিকড়। তা সিলেট-২ আসনে ফিরিয়ে দিতে হবে। পূর্ব পৈলনপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মতিন বলেন, নতুন প্রজন্মের হাতে বালাগঞ্জবাসীর ভবিষ্যৎ গতিপথ নির্ধারিত হবে, সেই প্রজন্মের জন্য আমরা আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য রেখে যেতে পারব না- তা মেনে নেয়া যায় না। উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা শাহ আলম সজীব বলেন, শুধু রাজনৈতিক ও ব্যক্তি স্বার্থের কথা চিন্তা করে যারা বালাগঞ্জকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছে জনগণ তাদের কোনোভাবেই ক্ষমা করবে না।সূত্র-যুগান্তর

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..