সিলেট ৩০শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৩:০১ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৯, ২০১৮
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : রাজধানীর মাদারটেকে লাগেজে করে জনশক্তি ব্যবসায়ী মো. শাহ আলম ভুইয়ার লাশ ফেলে যাওয়া এবং ওই হত্যার ঘটনার রহস্য উন্মোচিত হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। শাহ আলমের ছেলে সৈকত হাসান ও ছেলের প্রেমিকা লাবনী আক্তার কণিকা (২৩) তাঁকে হত্যা করেছেন বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। এরই মধ্যে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং কণিকা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
গত ৮ এপ্রিল মধ্যরাতে শাহ আলমের লাশ উদ্ধারের পর রাজধানীর সবুজবাগ থানায় পুলিশ বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করে। গতকাল বুধবার মামলাটি পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) স্থানান্তর করা হয়েছে।
ডিবির একটি সূত্র জানায়, কণিকা রাজধানীর রামপুরা এলাকার একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্সের ছাত্রী। তিনি ডিজে পার্টিতেও যাওয়া-আসা করতেন। ডিবির ডিসি মো. নুরুন্নবী গতকাল বিকেলে কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, এ ঘটনায় কণিকাকে গ্রেপ্তারের পর বুধবার সকালে আদালতে পাঠানো হয়। কণিকা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার পর তাঁকে কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছেন আদালত।
কণিকার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে দেওয়া তথ্য উল্লেখ করে পুলিশ জানায়, কণিকা নিহত শাহ আলমের মেয়ে নাসরিন জাহান মলির বন্ধবী। একপর্যায়ে বান্ধবীর ভাই সৈকতের প্রেমে পড়েন তিনি। কিন্তু পরে জানতে পারেন সৈকতের স্ত্রী-সন্তান রয়েছে। এর পরও তিন-চার বছর ধরে সৈকতের সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক চলছিল।
এরই এক পর্যায়ে সৈকতের বাবা শাহ আলম তাঁকে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন বলে কণিকার ভাষ্য। একদিন বিষয়টি সৈকতকে জানান তিনি। এতে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন সৈকত। পরে গত ৮ এপ্রিল শাহ আলম রাস্তায় কণিকাকে উত্ত্যক্ত করলে তিনি তাঁকে উত্তর গোড়ানে তাঁদের বাসায় নিয়ে যান। এরপর খবর পেয়ে সৈকত লুকিয়ে ওই ঘটনা দেখতে থাকেন। একপর্যায়ে কণিকার সঙ্গে অশালীন আচরণ করলে সৈকত ও কণিকা মিলে শাহ আলমকে গলা টিপে হত্যা করেন। পরে সৈকতের পরামর্শে একটি কালো লাগেজে লাশ ভরে নির্জন স্থানে ফেলে দেওয়ার জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন কণিকা। বাড়ির কাছে একটি অটোরিকশা ডেকে সৈকতই ওই লাগেজ তুলে দিয়েছিলেন। পরে অটোরিকশা নিয়ে রাত সাড়ে ৮টার দিকে মাদারটেক প্রজেক্টের সামনে যান কণিকা।
কণিকার ভাষ্য উল্লেখ করে পুলিশ জানায়, মাদারটেক প্রজেক্টের কাছে গিয়ে মজিবর রহমান নামের এক চালকের সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁর নয়াপুর যাওয়ার কথা বলেন কণিকা। অটোরিকশাটি কিছুদূর যাওয়ার পর যানজটে আটকে যায়। আর তখন পানি খাওয়ার কথা বলে সটকে পড়েন তিনি।
পুলিশ জানায়, রাত ১২টার দিকে খবর পেয়ে সবুজবাগ থানার পুলিশ শাহ আলমের লাশ উদ্ধার করে। এরপর লাগেজ ফেলে যাওয়া তরুণীর খোঁজে মাঠে নামে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দল। পরে তারা প্রযুক্তি ব্যবহার করে কণিকাকে শনাক্ত করে। ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে গত মঙ্গলবার রাতে মাগুরা এলাকার একটি বাস থেকে তাঁকে আটক করা হয়।
এরপর মামলাটিও সবুজবাগ থানা থেকে ডিবিতে স্থানান্তর হয়। ডিবির পরিদর্শক আরিফুর রহমান মামলাটি তদন্ত করছেন। গতকাল বিকেলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কণিকাকে মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা তদন্ত করে দেখছি কিভাবে ঘটনাটি ঘটেছে।’
নিহতের মেয়ে নাসরিন জাহান মলি কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, কণিকার সঙ্গে খিলগাঁও আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে একসঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশোনা করেছেন তিনি। পরে কণিকা অন্য প্রতিষ্ঠানে অনার্সে ভর্তি হন। খিলগাঁওয়ের উত্তর গোড়ানে তাঁদের বাড়ির কাছেই কণিকাদের বাড়ি। সহপাঠী হিসেবে একে অন্যের বাড়িতে তাঁদের যাওয়া-আসা ছিল। মলি জানান, তাঁর বাবার লাশ পাওয়ার পরদিন ৯ এপ্রিল তাঁদের বাড়িতে এসে সান্ত্বনাও দিয়েছিলেন কণিকা।
মলি গতকাল বলেন, ‘আমরা বাবার মৃত্যুতে শোকগ্রস্ত ছিলাম। বুঝতেই পারিনি এ ঘটনার সঙ্গে কণিকা জড়িত থাকতে পারে। তাকে গ্রেপ্তারের পর জানলাম।’
এক প্রশ্নের জবাবে মলি বলেন, ‘আমার ভাইয়ের সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা জানতাম। কিন্তু পরিবার থেকে চেষ্টা করেও ফেরানো যাচ্ছিল না।’
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তদন্তে নেমে পুলিশ কণিকার ছোট ভাই অনিক, বোন মৃত্তিকা ওরফে হীরা, ফুফু কুলসুম, বান্ধবী মিথি ও কণিকার পরিচিত মনির ওরফে আলমগীর এবং নিহত শাহ আলমের ছেলে সৈকত হাসানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। গ্রামের বাড়িতে বাবার লাশ দাফন করে ঢাকায় ফেরার পর সৈকতকে আটক করে পুলিশ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কণিকা যখন ছোট তখন তাঁর মা মারা যান। এরপর বাবা আরেকটি বিয়ে করে অন্যত্র থাকেন। তাঁরা তিন ভাই-বোন দাদির কাছে বড় হন।
কণিকা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, সৈকতকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁরা বাবা। এর ওপর আবার তিনি তাঁর দিকে দৃষ্টি দিলে হত্যা করতে বাধ্য হন বলে দাবি কণিকার।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd