সিলেট ৩০শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৬:৫৭ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৬, ২০১৮
ক্রাইম ডেস্ক :: সরকারী সকল নিয়মনীতি উপক্ষো করে শ্রীমঙ্গলে সেন্ট মার্থাস উচ্চ বিদ্যালয়ে চলছে রমরমা কোচিং বাণিজ্য। স্কুলে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে কোচিং’র নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, শ্রীমঙ্গল শহরের দেববাড়ী লেনে অবস্থিত ক্যাথলিক মিশনারী নিয়ন্ত্রিত সেন্ট মার্থাস স্কুলটিতে পঞ্চম, অষ্টম ও নবম শ্রেণীতে অধ্যায়নরত ছাত্রছাত্রীদের সপ্তাহের রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শেষ প্রিরিয়ডে ৪৫মিনিটের এই কোচিং ক্লাস নেয়া হচ্ছে। গত ফেব্রুয়ারী মাসে শিক্ষা মন্ত্রনালয় দেশের সব স্কুলে কোচিং বাণিজ্য নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়। স্কুলে অতিরিক্ষ ক্লাস নেয়া অনুমতি থাকার সুযোগে সেন্ট মার্থাস স্কুলে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে নিয়মিত শেষ পিরিয়ডে অতিরিক্ত ক্লাসের নামে অবৈধ কোচিং বাণিজ্য চালানো হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ১০ম শ্রেণীর কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছে ৫ম ও ৮ম শ্রেণীতে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এই কোচিং ক্লাস নেয়ার জন্য প্রতি মাসে ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকা হারে নেয়া হচ্ছে। এই অতিরিক্ত অর্থ নেয়ার জন্য স্কুল থেকে রশিদ দেয়া হয় না। ক্লাস রূমে টিচাররা পকেটে থাকা নোট বের করে ছাত্রদের কোচিং ফি হালনাগাদ তথ্য দিয়ে টাকা আদায় করেন।
শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন, কোচিং ফি, আইসিটি ক্লাস ফি, বিজ্ঞান ক্লাস, ক্লাস পার্টিসহ নানা সিকিমের ফি আর ডনেশনের অর্থ যোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছেন স্কুলের ছাত্র অভিভাবকরা।
যদিও স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের স্কুলে কোচিং বাণিজ্যর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
খোজঁ নিয়ে জানা গেছে, সেন্ট মার্থাস স্কুলে অতিরিক্ত ক্লাসের মোড়কে এই কোচিং বাণিজ্যে পরিচালনার পাশাপাশি নেয়া হয় তথ্য বিষয়ক (আইসিটি) ও বিজ্ঞান ক্লাস। সপ্তাহে ২টি আইসিটি অধ্যায়নরত ৫২৮ জন ও একটি বিজ্ঞান ক্লাস নেয়ার বিপোরীতে ৮১১জন স্কুলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতি মাসে ২শ’ টাকা হারে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। এছাড়া স্কুলে সিসি ক্যামেরা বসানোর নামে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সকল শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১শ’ টাকা হারে এরই মধ্যে ৮৫ হাজার অর্থ গ্রহনের অভিযোগ রয়েছে। বঙ্গবন্ধু’কে পুঁজি করে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে রয়েছে অর্থ হাতানোর অভিযোগ। স্থানীয় এক সাংবাদিকের সঙ্কলনে প্রকাশিত বইটির কয়েক শ’ কপি স্কুলের শিক্ষার্থীদের কাছে বিক্রির দায়িত্ব হাতে তুলে নিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। অভিযোগ রয়েছে ৫০ ভাগ কমিশনে বিক্রি করার অর্থ পুরোটাই মেরে দেন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সিস্টার মেরী মার্গেট রিবেরু (আরএনডিএম)। এনিয়ে উপজেলা প্রশাসন থেকে প্রধান শিক্ষিকাকে শো’কজ করলে তিনি ক্ষমা চেয়ে বিক্রিকৃত সকল বই প্রত্যাহার ও বিক্রয়লব্ধ অর্থ শিক্ষার্থীদেও ফিওে দিতে বাধ্য হন। ছাত্র ও অভিভাবকদের সাথে অসদাচরণের জন্য এরই মধ্যে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্কুলের ৬ষ্ট শ্রেণীর শিক্ষার্থীর অভিভাবক উত্তর ভাড়াউড়ার শারমিন আক্তার অভিযোগ করেন ২ মাসের কোচিং ফি বকেয়া থাকায় গত বছর তার ছেলের পিইসি পরীক্ষার এডমিট কার্ড আটকে দেয়া হয়েছিল। তিনি জানান, প্রধান শিক্ষকাকে অনুরোধ করলে তিনি জানিয়েছিলেন স্কুলের ষ্ট্যান্ডার্ড বজায় রাখতে না পারলে বাচ্চার টিসি নিয়ে যান। এই অসম্মানজনক জবাব শুনে খুবই মর্মাহত হয়ে এ বছর তিনি তার ৬ষ্ঠ শ্রেনীর ছেলেকে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নেনে। স্কুলের অভিভাবক ফোরামের আহবায়ক সাইফুদ্দীন সিদ্দিকি সাবলু বলেন, স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে কেচিং বাণিজ্য ও অন্যান্য বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে অভিভাবকদের সাথে কথা হচ্ছে।
এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সিস্টার মেরী মার্গেট রিবেরু (আরএনডিএম) বলেন, পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষাকে সামনে রেখে শিক্ষার্থীদের মোটিভেটেড করার লক্ষে উল্লেখিত ২ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের এক্সট্রা ক্লাস নেয়া হয়। এটা মোটেও কোচিং নয়। আলাদা ক্লাস নেয়ার সরকারী নিয়মের বাহিরে অতিরিক্ত টাকা নেয়া হচ্ছে কেন? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন সরকারী বিধি মোতাবেক নেয়া হচ্ছে।
২৪ এপ্রিল মঙ্গলবার যোগাযোগ করা হলে, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার দীলিপ কুমার বর্ধন বলেন, আমি কিছু জানি না। আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। তিনি বলেন, স্কুলে কোচিং নয় সরকারী প্রজ্ঞাপন রয়েছে যে কোন স্কুলে নিয়মিত ক্লাসের আগে বা পড়ে একটি করে অতিরিক্ত ক্লাস নেয়ার। আর এজন্য প্রতি বিষয়ের ফি ১শ ৫০ টাকা। তবে এই অতিরিক্ত ক্লাস নেয়ার জন্য ছাত্র বা ছাত্র অভিভাবকদের পক্ষে আবেদন করতে হবে বলে তিনি জানান। অতিরিক্ত ক্লাসের নামে ৮শ টাকা করে ফি নেয়া বা স্কুলে ক্যামেরা বসানোর জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৮৫ হাজার টাকা ডনেশন নেয়ার নিয়ম আছে কিনা জানতে চাইলে শিক্ষা অফিসার ক্ষুদ্ধ হয়ে বলেন, বিকেলে অফিসে আসেন, ফোনে কোন কথা বলবনা’। মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ‘কিছুই জানেন না’ বা ‘কেউ অভিযোগ করেননি’ বলে জানান। অথচ ৫ দিন আগে গত ১৯ এপ্রিল জহুরুল ইসলাম নামে এক ছাত্র অভিভাবক এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন এটা জানেন কিনা? জবাবে শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন হাঁ জানি। এনিয়ে খুব শিঘ্রই স্কুলটিকে নোটিশ করার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান।
সম্প্রতি স্কুলের ৪ ছাত্রের দুই মাসের বেতন বাকি থাকায় ছাত্রদের টেস্ট পরীক্ষায় বাঁধা প্রদান ও ছাত্রদের সাথে অমানবিক আচরণে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে। এনিয়ে দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবক সিলেট বিভাগীয় কমিশনার,মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।
২০১৪ সালে লুঙ্গি পড়ে স্কুল ক্যাম্পাসে প্রবেশের অপরাধে দরিদ্র এক ছাত্র অভিভাবককে স্কুল থেকে তিরষ্কার করে বের করে দেয়ার ঘটনায় সে সময় শহরে তোলপাড় সৃষ্টি করে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd