হবিগঞ্জের পুটিজুরীর দি প্যালেস প্রতি রাতের ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা ভাড়া

প্রকাশিত: ১:২৩ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ৩০, ২০১৮

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : চা, কমলা লেবু, আনারস লেবু আর রাবার বাগান। এগুলো সিলেট বিভাগের ঐতিহ্য। দেশ বিদেশ থেকে পর্যটকরা আসেন এসব বাগান দর্শন করতে। দুর্গম পাহাড় পাড়ি দিয়ে এর সৌন্দর্য্য উপভোগ করার পর বিশ্রাম নেয়া আর রাত কাটানোর জন্য যখন পর্যটকরা একটি ভাল জায়গা খুঁজতেন তখন তাদেরকে হতাশ হতে হত। তবে এখন আর সেই হতাশা নেই। হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার পুটিজুরী পাহাড়ে প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে ওঠা ৫ তারকা হোটেল দি প্যালেস রিসোর্ট এন্ড স্পা সবাইকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে।

সবুজে ঘেরা পাহাড়, গিরিখাদ, সরোবর, ঝরনা আর ৩০ হাজার গাছে ঢাকা ১৫০ একর ভূমিকে এমনভাবে সাজনো হয়েছে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না এতটুকু খুত। আর চারিদেকে চা বাগান, আনারস বাগান, রাবার বাগান আর লেবু বাগান দেখে মনে হবে যেন পুরো সিলেট দেখা হয়ে গেল এক স্থান থেকেই। রয়েছে বিদেশী পাইন আর দেবদারুর সাড়ি।


পাঁচ তারকা হোটেল বলতেই ইট পাথরের শহরের বিশাল অট্টালিকাকে বুঝালেও দি প্যালেস গড়ে উঠেছে প্রাকৃতিক পরিবেশে এবং প্রকৃতিকে বুকে ধারণ করে। আবাসনের জন্য এখানে রয়েছে পাহাড়ের চূড়ায় পাঁচ তারকাসুবিধা সমেত পাখিডাকা, ছায়াঢাকা ২৩টি ভিলা। তন্মধ্যে ১ বেডরুমের ৮টি বাংলোর প্রতি রাতের ভাড়া ১৫ হাজার টাকা। ২ বেডরুমের ৮টি বাংলোর ভাড়া প্রতি রাতে ২৫ হাজার টাকা। ৩ বেড রুমের ৪টি বাংলোর ভাড়া প্রতি রাতে ৩৫ হাজার টাকা। ২টি প্রেসিডেন্সিয়াল ভিলার প্রতি রাতের ভাড়া ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এগুলোতে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা রয়েছে। আর নামকরণে রয়েছে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি। আমেরিকায় মুক্তিযুদ্ধের তহবিল গঠনে কাজ করা পন্ডিত রবি শংকর ও জর্জ হ্যারিসনের নামে নামকরণ করা হয়েছে ভিলা দুটির।

স্থাপত্য শৈলীর অনুপম নিদর্শন রয়েছে প্রধান টাওয়ার বহুতল ভবনটির। এটিতে থাকার জন্য আছে ১০৭টি রুম। আর রুমগুলো সাজানো হয়েছে প্রসাদ বলতে যা বুঝায় তার স্বার্থকতা নিশ্চিত করতে যা প্রয়োজন তার সবদিয়ে। রুমগুলোর ভাড়াও আলাদাভাবে নির্ধারণ করা। এক্সিকিউটিভ কিং ৫৫টি রুমের ভাড়া ১০ হাজার টাকা করে। সিগনেচার কিং ২২টি রুমের ভাড়া ১১ হাজার টাকা করে। আর সিগনেচার টুইন ৩০ রুমের ভাড়া ১২ হাজার টাকা করে।
দিনের বেলা পাখির ডাক আর রাতের বেলা ঝি ঝি পোকার ডাকের মাঝে প্রাকৃতিক পরিবেশে শোনা যায় শেয়ালের ঢাক। আর চোখে পড়বে খরগোসের দৌঁড়ঝাপ। এর বাহিরেও সুযোগ সুবিধার এত বেশী সমাবেশ যা বাংলাদেশের আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। প্যালেস কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করছে এটি এশিয়া মহাদেশের মাঝেই অনন্য।

প্যালেসে রয়েছে চারটি বড় সভাকক্ষ, ৪শ’ জনের ব্যাংকুয়েট হল, ছোটদের খেলার জায়গা তিনটা, বিলিয়ার্ড, ফুটবল, বাস্কেটবল, ২টি টেনিস কোর্ট, ব্যাডমিন্টন কোর্ট, ক্রিকেট নেট প্র্যাকটিস এর সুবিধা, দুটি জিম, রিমোট কন্ট্রোল কার রেসিংয়ের ব্যবস্থা। দুটো সুইমিংপুল (১টি পুরুষ আর একটি মহিলা), একদিক থেকে জলধারা এসে পাহাড়ের গা বেয়ে নিচে নেমে যাচ্ছে, এটাকে নাকি বলে ইনফিনিটি পুল। এর চতুর্দিকে সবুজ ছন গাছগুলোও সিলেটের ঐতিহ্য। দুটো সিনেপ্লেক্স এর মধ্যে ১টি থ্রিডি ও অন্যটি টুডি। স্থাপত্যশৈলীর দেখা মেলে দুটি ঝুলন্ত সেতুতে। মসজিদটিতেও রয়েছে নির্মাণশৈলী। দুটো নিজস্ব বিদ্যুত কেন্দ্র থাকায় নেই কোন ভোগান্তি। ‘হেলিকপ্টার নামার হেলিপ্যাড আছে তিনটা। এগুলোও দেখার মত করে নির্মাণ করা হয়েছে। লেকে মাছ ধরা যায়। মাছ ধরার জন্য রয়েছে বড়শি আর আধারের ব্যবস্থা। এক সাথে ৫০ জন এখানে মাছ শিকার করতে পারবেন। তবে মাছ শিকারের পর তা রান্না করতে যেতে হবে রেস্টুরেন্টে। এর জন্য দিতে হবে চার্জ। এ ধরনের ৫টি রেস্টুরেন্ট রয়েছে প্যালেসে। এগুলো হল অলিভ রেস্টুরেন্ট, রেভ্যুলেশন ক্যাপে, নস্টালজিয়া, সাইগন ও সিসা লাউঞ্জ। আর বড়শিতে যাতে মাছ ধরে তার জন্য লেকে চাষ করা হয়েছে অনেক রকম মাছ। অচিরেই সেখানে বোটিং করা যাবে। হাঁটার জন্য রয়েছে ৭ কিলোমিটার ট্রেইল। বাই-সাইকেল চালানোর জন্যও ট্রেইল রয়েছে। আর হাটা চলার সময় পুরো এলাকা জুড়ে রয়েছে সাউন্ড সিস্টেমে মিষ্টি মধুর সঙ্গীত উপভোগ করার। ওয়াইফাই সুবিধা রয়েছে পুরো এলাকাজুড়ে। এখানে রয়েছে সব ধরনের মৌসুমী ফলের গাছ। অতিথিদেরকে এই ফল আপ্যায়ন করানো হয়। আর সব ধরনের সবজি চাষ করা হয় কমপ্লেক্সের ভিতরে। ফলে এখানে নেই কোন ভেজাল খাবার। সেখানে রয়েছে ২টি ট্যারেস। একটি হল ফাউন্টেইন ভিউ ট্যারেস আর অপরটি হল টি-গার্ডেন ভিউ ট্যারেস।

দি প্যালেসে রিসোর্ট অ্যান্ড স্পার পরিচালক মাহবুব আলম জানালেন, রিসোর্টে অচিরেই স্পা চালু হচ্ছে। ১ বছরের মধ্যেই গলফও চালু হবে। প্রথম দিকে পরিকল্পনা ছিল এখানে গো-কার্ট ট্র্যাক তৈরি করার। কিন্তু আপাতত সেই পরিকল্পনা বাদ দেয় হয়েছে। সেখানে ভবিষ্যতে ছোট প্রাইভেট বিমান ল্যান্ডিং এর জন্য রানওয়ে নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। পার্কিং জোনে রাখা যায় ৮০টি গাড়ি।

দি প্যালেসের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১১ সালে। তবে উদ্বোধনের পরই রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য অতিথিদের আগমন তেমনভাবে হয়নি। এখন প্রতিদিনই বাড়ছে অতিথিদের আগমন। দেশের বাহিরে ইংল্যান্ড ও ইউরোপ থেকে আসছেন অতিথিরা। বহুজাতিক কোম্পানী লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট, বৃটিশ আমেরিকান টোবাকো কোম্পানী ও বাংলা লিংকসহ কর্পোরেট হাউজগুলোও পুরোটাই বুকিং নিয়ে এখানে অনুষ্ঠান করেছে। আর অতিথিদের সেবা করার জন্য সেখানে কর্মরত রয়েছেন ২৯০ জন কর্মী। অতিথিদের যাতে কোন ধরনের বিঘœ না ঘটে তার জন্য ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্বেও দর্শনার্থীদেরকে প্রবেশের সুযোগ দেয়া হয় না। এমনকি রেস্টুরেন্ট ও সিনেপ্লেক্সেও বাহিরের অতিথির প্রবেশ নিষিদ্ধ। অ্যারাবিয়ান খাবার সিসা ইতালিয়ান, মেক্সিকান, ইন্ডিয়ান, কন্টিনেন্টাল, ভিয়েতনামি খাবার এবং আন্তর্জাতিক বুফেতে মিলে সবধরনের খাবার।

ঢাকা থেকে বাসে, ট্রেনে, গাড়িতে এবং হেলিকপ্টারে আসা যাবে এই প্যালেসে। ঢাকা থেকে দুরত্ব মাত্র ২শ কিলোমিটার। যানজট একটু বেশী হওয়ায় সড়ক পথে গাড়িতে চার ঘণ্টা লাগবে। সিলেট থেকে দুরত্ব ৬০ কিলোমিটার। হবিগঞ্জ শহর থেকে এর দুরত্ব ৩০ কিলোমিটার। এর পাশেই মৌলভীবাজার জেলা। নাগরিক জীবনের একঘেয়েমী দূর করতে বিদেশে না গিয়ে এখানেই আসা হবে বুদ্ধিমানের কাজ। এখানে আসলে শুধু সুন্দর প্রকৃতিতে বসবাসই নয়। ইচ্ছা করলেই হবিগঞ্জ জেলার মধ্যে ঘুরে দেখা যাবে অনেক কিছু। ২৪টি চা বাগান, ৩টি রাবার বাগান, বিস্তৃত হাওর, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, রেমা-কালেঙ্গা জাতীয় উদ্যান, খাসিয়াপুঞ্জি, গ্রীণল্যান্ড পার্ক, শাহজিবাজার গ্যাসফিল্ডে অবস্থিত ফ্রুটস ভ্যালি, সাগরদীঘি, মহাগ্রাম বানিয়াচঙ্গ, সিপাহসালার সৈয়দ নাছির উদ্দিনের মাজার, শাহ সোলায়মান ফতেহ গাজীর মাজার, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত তেলিয়াপাড়া চা বাগানসহ অনেক কিছু।
ওয়েবসাইট:www.thepalacelife.com
ই-মেইল: info@thepalacelife.com

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..