সিলেট ৩১শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৪:০৯ অপরাহ্ণ, মে ৬, ২০১৮
আজিজুর রহমান :: সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার হাওরে ধান কাটার শ্রমিক সংকটের কারনে চাহিদা বেড়েছে কম্বাইন হারভেষ্টার যন্ত্রের। এই আধুনিক মেশিনটি এক সঙ্গে ধানকাটা, মাড়াই ঝাড়া ও বস্তাবন্দী করার এ যন্ত্রটি হাওরের কৃষকদের কাছে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে চাহিদা মোতাবেক যন্ত্র না থাকায় কৃষকরা পর্যাপ্ত সুফল পাচ্ছেন না। শনিবার নলুয়ার হাওরে কম্বাইন হারভেষ্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটার দৃশ্য দেখা যায়। একসঙ্গে ধানকাটা, মাড়াইঝাড়া ও বস্তাবন্দী করার এ যন্ত্র দিয়ে ধানকাটা, মাড়াই, ঝাড়া ও বস্তাবন্দী করার দৃশ্য দেখতে কৃষকদের ভীড় লক্ষ্য করা যায়।
কৃষকরা জানান, ধান কাটার প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে এ যন্ত্র দিয়ে ধান কাটলে খরচ কম ও সময় সাশ্রয় হয়। এছাড়াও মাঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ধানের অপচয় হয়না। এ যন্ত্র দিয়ে ধান কাটলে এক দিনে ১০ কেদার বোরো জমির ধান, কাটা, মাড়াই ,ঝাড়া ও বস্তাবন্দী করা যায়। প্রচলিত পদ্ধতিতে এক দিনে ১০ জন কৃষি শ্রমিক আড়াই থেকে তিন মণ ধান কাটতে পারেন। বর্তমানে জনপ্রতি কৃষিশ্রমিকের প্রতিদিনের মজুরী রয়েছে ছয় থেকে সাতশত টাকা। হারভেষ্টার যন্ত্রদিয়ে কেদার প্রতি ধানকাটা হচ্ছে এক হাজার ৫০০ টাকায়। দলুয়ার হাওরের হবিবপুর গ্রামের বাসিন্দা কৃষক আকবর হোসেন বলেন, আমি দুই লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে এবছর ধান কাটার জন্য এযন্ত্রটি সরকারী ৭০ ভাগ ভুর্তকি সুবিধা নিয়ে এনেছি। প্রথমে নিজের ২৫ কেদার জমির ধানকাটা, মাড়াই, ঝাড়া ও বস্তাবন্দী করতে শুরু করেছি। যা দেখে অনেক কৃষক ভাড়ায় এ যন্ত্রটি নিতে অগ্রিম টাকা দিতে চাইছেন। তিনি কৃষকদেরকে সুবিধা মতো ১ হাজার ৫০০ টাকা কেদারে মেশিন দিয়ে ধান কেটে দিচ্ছেন। তিনি গত এক সপ্তাহে নিজের ১০ কেদার সহ ৫০ কেদারের বেশী জমির ধান কেটেছেন বলে জানান।
টিয়ার গাঁও গ্রামের বাসিন্দা কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, হাওরে এ বছর এমনিতেই কৃষি শ্রমিক সংকট রয়েছে। এ যন্ত্রটি আমাদের খুব উপকারে আসছে। এরকম যন্ত্র পর্যাপ্ত থাকলে কৃষকদের ধানকাটা, ঝাড়া, মাড়াই ও বস্তাবন্দীর কষ্ট সময় ব্যয় সাশ্রয় হতো। সৈয়দপুর গ্রামের কৃষক নুর মিয়া জানান, কৃষক আকবর হোসেন এর হারভেষ্টার মেশিন দলুয়ার হাওরের কৃষকদেরকে এবার উপকৃত করেছে। তিনি বলেন, আমি ওই যন্ত্র দিয়ে ১০ কেদার জমির মধ্যে ছয় কেদার জমির ধান কেটে বস্তাবন্দী করে বাড়ি নিয়ে গেছি। শ্রমিক দিয়ে ধানকাটালে, ঝাড়া, মাড়াই দেয়া, বস্তাবন্দী করাসহ নানা ঝামেলা পোহাতে হতো এবং বিলম্ব হতো। তাই এ যন্ত্রটি কৃষকদের জন্য উপকারী। জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্র জানায়, সরকারীভাবে এ যন্ত্রটি কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয় করে তুলতে সরকার ৭০ ভাগ ভুর্তকির মাধ্যমে যন্ত্রটি প্রদান করছে। গত বছর প্রথমবারের মতো এ উপজেলায় একটি যন্ত্র দেয়া হয়। এবার উপজেলার ১২ জন ভাগ্যবান কৃষক ৭০ ভাগ ভুর্তকির মাধ্যমে এ যন্ত্র পেয়েছেন। তবে অভিযোগ রয়েছে আওয়ামীলীগ নেতাদের অনুরোধে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিজেদের লোকদের এই মেশিন সরবরাহ করা হয়েছে। তবে এ অভিয়োগ অস্বিকার করে জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শওকত উসমান মজুমদার জানান, সরকারী নীতিমালা মেনে যারা দরখাস্থ করেছেন এবং নিয়মমত টাকা পেমেন্ট করেছেন শুধু মাত্র তাদেরকে এই ধান কাটার মেশিন সরবরাহ করা হয়েছে। তবে হাওর অধ্যুষিত এ অঞ্চলে ধান কাটার মেশিনের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এ ব্যাপারে আমি কমপক্ষে ১০০টি ধান কাটা মেশিনের চাহিদা চেয়ে উদ্ধৃর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে চিঠি পাঠিয়েছি। যাতে জরুরী ভিত্তিতে এ মেশিনগুলো সরবরাহ করা হয়। জগন্নাথপুর উপজেলায় ছোট বড় ১৫টি হাওরে এবার প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৬০% ধান কাটা হয়ে গেছে। উপজেলায় হারভেষ্টার যন্ত্র রয়েছে মাত্র ১২টি। দলুয়ার হাওরে রয়েছে মাত্র একটি যন্ত্র। যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। তিনি বলেন, ক্রমানয়ে যন্ত্রটির বিষয়ে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে।জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, কৃষিকাজে আধুনিকতার বিকল্প নেই। তাই বেশী করে হাওরে হারভেষ্টার মেশিন বিতরণ করা দরকার। তিনি বলেন, হাওর অঞ্চলে অকাল বন্যাসহ নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে অনেক সময় পাকাধান কৃষকরা কাটতে পারেন না। তাই এসব দিক বিবেচনা করে কৃষি বিভাগের তত্বাবধানে কম খরচে ধানকাটার ব্যবস্থা করলে হাওরের কৃষকরা উপকৃত হবেন। জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ বলেন, জগন্নাথপুর উপজেলার হাওরগুলোতে এখন পাকা ধানের ঝিলিক। কৃষি শ্রমিক সংকটের কারণে এসব ধানকাটা যাচ্ছে না। হাওর অঞ্চলের জন্য হারবেষ্টার মেশিন খুবই প্রয়োজন।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd