বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: সিলেটে বিশ্বনাথে রশিদপুর-বিশ্বনাথ-রাপমপাশা-লামাকাজী সড়কের প্রায় দীর্ঘ ১৭ কিলোমিটার সড়কের পার্শ্বস্থ গাছের ডালপালা ছাটাই এবং বাঁশ ও কলাগাছ অপসারণের নামে চলছে বড় বড় গাছ কর্তন করে লুট। সড়ক ও জনপদ (সওজ) এর সংশ্লিষ্ট কর্তকর্তার উপস্থিতিতে এসব গাছ কর্তন করে লুট করা হলেও অদৃশ্য কারণে সওজ কর্তৃপক্ষ রয়েছেন নিরব।
উক্ত সড়কের ১৭ কিলোমিটার জুড়ে, সড়কের দু’পার্শ্বে রয়েছে কয়েক শতাধিক সরকারি গাছ। কিন্ত এভাবে যদি গাছের ডালপালা ছাটাইর নামে গাছগুলো কর্তন করে লুট চলতে তাহলে সরকার লাখ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে।
জানা গেছে, রশিদপুর-বিশ্বনাথ-রাপমপাশা-লামাকাজী সড়কের প্রায় দীর্ঘ ১৭ কিলোমিটার সড়কের পার্শ্বস্থ বিভিন্ন স্থানে গাছের ডালপালা, বাঁশ ও কলাগাছ সড়কের উপরে আসার ফলে পেভমেন্টের ক্ষতি হচ্ছে। যার কারণে সামান্য বৃষ্টি গাছ থেকে পানির ফোটা পড়ে সড়কের কার্পেটিং উঠে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়ে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন হয়। তাই উক্ত গাছের ডালপালা ছাটাই এবং বাঁশ ও কলাগাছ অপসাণের জন্য জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সিলেটের সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী উৎপল সামন্ত ২০১৭ সালের ১২ নভেম্বর সওজ’র উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী বরাবর লিখিত আবেদন করেন। এরপর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, বিশ্বনাথের ৩ইউপি চেয়ারম্যান ও পল্লী বিদ্যুৎ’র ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজারের কাছে অবগতির জন্য উক্ত অনুলিপিটি প্রেরণ করা হয়। এরই ভিত্তিতে বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের আমতৈল ধলিপাড়া গ্রামের জনৈক আকবর আলী গত ২/৩দিন ধরে শুরু করেছেন উক্ত সড়কের পার্শ্বস্থ গাছের ডালপালা ছাটাই। কিন্ত ডালপালা ছাটাইর নামে তিনি সড়কের পার্শ্বস্থ বড় বড় সরকারি গাছ কর্তন করে পিকআপ গাড়িতে করে অন্যত্র সড়িয়ে নেয়া হয়।
স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে গতকাল রোববার দুপুরে বিশ্বনাথ-রামপাশা-লামাকাজী সড়কের মদনপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায় গাছ কর্তনের উৎসব চলছে। আকবর আলীর নিযুক্ত শ্রমিকরা গাছ কর্তন করে গাড়িতে করে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছেন। গাছ কর্তনরত শ্রমিকদের কাছে জানতে চাই, তারা জানান সওজ ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতির ভিত্ত্বিতে গাছগুলো কাটা হচ্ছে। এসময় প্রায় কিলোমিটার দূরে (প্রতাবপুর) অবস্থান করছিলেন আকবর আলী ও সওজ’র সুপারভাইজার মুজিবুল হক। সেখানে গিয়ে গাছ কর্তনের ব্যাপারে সাংবাদিকরা আকবর আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি গাছ কর্তনের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি গাছের ডালপালা ছাটাই করছি। মদনপুর এলাকার গাছটি স্থানীয় লোকজন কর্তন করেছেন বলে তিনি দাবি করেন। এসময় তার কথায় সম্মতি জানান সওজ’র সুপারভাইজার মুজিবুল হকও। এরপর সাংবাদিকরা সুপারভাইজার মুজিবুল হককে কর্তনকৃত গাছগুলোর সমানে নিয়ে গিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপড়ে পড়া একটি গাছ ও মরে যাওয়া একটি গাছ কর্তন করা হয়েছে। কর্তনকৃত গাছগুলো ও ডালপালা কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো আকবর আলীকে দেওয়া হয়েছে। এদিকে, সাংবাদিকরা উপস্থিত থাকায় কর্তনকৃত কিছু গাছ গাড়িতে করে নিয়ে আমতৈল গ্রামের ভিতরে রাস্তার পার্শ্বে রাখা হলেও সাংবাদিকরা সেখান থেকে চলে আসার পর সেই গাছগুলো সড়িয়ে ফেলা হয়েছে বলে জানা যায়।
এব্যাপারে সওজ’র এসডিই আব্দুল মজিদ বলেন, আমরা শুধু গাছের ডালপালা ছাটাই অনুমতি দিয়েছি।
বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অমিতাভ পরাগ তালুকদার বলেন, সরকারি গাছ কর্তনের খবর পেয়ে আমি তাৎক্ষণিকভাবে রামপাশা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তলিশদারকে ঘটনাস্থলে প্রেরণ করি। আগামী কাল (আজ) প্রয়াগমহল ভূমি অফিসের তশিলদার সরেজমিন গিয়ে পরিদর্শন করে লিখিত প্রতিবেদন দিবেন। গাছ কর্তনের সাথে জড়িতের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। যদি এর সাথে সওজ’র কোন কর্মকর্তা জড়িত থাকেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে তিনি জানান।
Sharing is caring!