সিলেট ৩০শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ২:৪৫ অপরাহ্ণ, মে ২২, ২০১৮
ক্রাইম ডেস্ক :: গুলশান-ভাটারা থানা পুলিশের মদদে মাদক-নারী-জুয়ার অবাধ বানিজ্যের অভিযোগপুলিশি প্রহরায় বসুন্ধরা গেট এলাকায় চলছে হোটেল স্টার নামের সাইনবোর্ডবিহীন পতিতালয়। সেখানেই চলছে ইয়াবার হোলসেল বাজার। অত্র এলাকার ২০/২২ জন ইয়াবা ও নারী ব্যবসায়ির দিন রাত নারী-নেশার বাণিজ্য চলছে অবাধে। দিনেদুপুরে আবাসিক হোটেলে অসামাজিক কার্যাকলাপের খবরে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশের নাকের ডগায় হোটেলটিতে অসামাজিক কার্যকলাপ চললেও কার্যত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
গুলশানের ডিসি বরাবরই এ হোটেলে নারী বাণিজ্যের ঘোর বিরোধী বলে শোনা যায়। কিন্তু সেখনে পোশাকে ও সিভিলে পুলিশ অবস্থান নেওয়ায় খোদ ডিসির ভূমিকাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। গত ঈদের বন্ধ চলাকালে এক নারীর মৃতদেহ পাওয়ার পর থেকে হোটেলটি তালাবদ্ধ করে এর চাবি ভাটারা থানায় রাখা হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে নানা তদবীরের মাধ্যমে হোটেলের চাবি আনা হলেও ডিসির নির্দেশ ছিল সেখানে কোনো রকম নারী বোর্ডার যেন উঠারও সুযোগ না পায়। কিন্তু ডিসির চোখে ধূলা দিতে হোটেল স্টার এর সাইনবোর্ড খুলে ফেলে নামবিহীন হোটেলে দেদারছে চলছে নারী বাণিজ্য। সাথে যোগ হয়েছে বেপরোয়া ইয়াবার ব্যবসা। পাশেই একটি পত্রিকা অফিসের স্থাপনকৃত সিসি ক্যামেরাটি থেকে এসব তথ্যের একশ ভাগ সত্যতা পাওয়া সম্ভব। প্রতিদিন ওই অবৈধ হোটেলটিতে স্কুল পড়ুয়া নাবালিকা মেয়ে থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের শতাধিক নারীর আনাগোনা ও অসামাজিক কার্যকলাপ চলে। আর হোটেলের রুমগুলোতে রাত দিন চলে ইয়াবা কেনাবেচা ও সেবনের আসর। ভাটারা, খিলক্ষেত, গুলশান-বনানী থানা এলাকার ইয়াবা ডিলারদের কাছে এখান থেকেই ইয়াবার সরবরাহ যায়।
হোটেলটির মালিকপক্ষের স্বপন ইয়াবার পাইকারি বানিজ্যটি নিয়ন্ত্রণ করলেও খুচরা বাজার পরিচালনা করে হারুন নামের এক যুবক। সেখানে ইয়াবার মূল চালান সরবরাহ দিয়ে থাকেন আর্মি রাসেল। বসুন্ধরা এ ব্লকের তিন নম্বর রোডে ভাড়া বাড়িতে বসবাসকারী আর্মি রাসেল নদ্দা, বসুন্ধরা গেট, যমুনা ফিউচার পার্ক গেট, আজিজ রোডসহ আশপাশ এলাকার ইয়াবা ডিলার হিসেবেই পরিচিত। নিজের কোমরে ভূয়া রেজিস্ট্রেশনবিহীন একটি পত্রিকার আইডি কার্ড ব্যবহার করে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দহরম মহরম সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তিনি বেশিরভাগ সময় আড্ডা দেন সায়েদ আলী মার্কেটের (বসুন্ধরা রোডের) দোতলায়। সেখানে সবসময় মার্কেট মালিকের ছেলে ইয়াবা সেবনের আসর বসিয়ে রাখেন বলে জানা গেছে।
কালাচাঁদপুর পশ্চিমপাড়ায় সাজুর মেসে চলে জুয়া বাণিজ্য। সাজুর বউ ইয়াবার ডিলার হিসেবে এ মেসকে কেন্দ্র করেই ইয়াবার রমরমা বাণিজ্য ফেঁদে বসেছেন। জুয়া ও ইয়াবার স্পটটি থেকে পুলিশ দৈনিক হারে বখড়া পায়। সাজু ও তার বউ স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ঘোর সমর্থক বিধায় তিনি সবকিছু জেনেও না জানার ভান করে থাকেন। নদ্দা সরকার বাড়ী, অলিপাড়া, সাওড়া বাজার, কুড়িল যমজ রোড, সিরাজ গার্ডেন এলাকা ইয়াবার পাইকারি আড়ত হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব স্পট থেকে পুলিশের পক্ষ হয়ে নিয়মিত বখড়া তোলে সোর্স সাইদ, সোর্স সবুজ, সোর্স নাইম, সোর্স এরশাদসহ আরও কয়েকজন অপরাধী। এসব সোর্স ও তার সহযোগিদের বিরুদ্ধে খুন, ছিনতাই, মাদক বাণিজ্যের মামলা থাকা সত্তেও তারা পুলিশের গাড়িতে ঘুরে বেড়ায়, দারোগাদের সঙ্গেও তাদের দহরম মহরম সম্পর্ক। উক্ত সোর্সরা নানামুখি ধান্ধাবাজি চালিয়ে এবং নিজেরাই পুলিশ পরিচয়ে বিভিন্ন অভিযান চালিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন বলে এন্তার অভিযোগ আছে। ফুটপাতের টোকাই পরিচয়ে বেড়ে ওঠা এসব যুবক শুধু সোর্স পরিচয়েই গুলশান-ভাটারায় জায়গা কিনে বহুতল ভবন পর্যন্ত গড়ে তুলেছেন।
গুলশান থানার নদ্দা-কালাচাঁদপুর কেন্দ্রীয় মসজিদের ঠিক সামনেই মাদকের খোলা বাজার বসিয়েছেন জেলখাটা আসামি নবী মিয়া। ভাটারা থানা থেকে সদ্য বদলি হওয়া দারোগা মোশাররফ হোসেন ও দারোগা বাবুল মিয়ার ওপেন সহযোগিতায় পরিচালিত নবীর মাদক স্পটটি নিয়ে মসজিদের মুসুল্লিসহ এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি করছে। আসন্ন রমজান মাসে এ মাদক স্পটকে ঘিরে যে কোনো সময় অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কাও করছেন বাসিন্দারা।
ভাটারা থানার নদ্দা হারেজ রোডের শেষ প্রান্তের ডান দিকেই মসজিদ গলির অবস্থান। এই গলির বাসা বাড়িতে বেশ কিছু উপজাতি পরিবার ভাড়া থাকে। তাদের নাম ভাঙ্গিয়েই স্থানীয় কয়েকজন বছরের পর বছর ধরে বাংলা মদ বেচাকেনা ও সেবনের আসর বসিয়ে থাকেন। এখানে প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সব ঘরেই পাবেন অত্র এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও ইয়াবা ব্যবসায়িদের গোপন বৈঠক বসে। তাদেরকে কেউ কিছু বলার সাহসও রাখে না। বাংলা মদের এসব স্পট থেকেও প্রতিদিদন থানার সোর্স পরিচয়ধারীরা বখড়া আদায় করে থাকে। মাদকের বিরু্েধ এলাকার কেউ টু শব্দটি করলেই ওই সোর্সরা পুলিশের সাহায্য নিয়ে প্রতিবাদকারীদের নানারকম হয়রানি করে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
কুড়িল চৌরাস্তা মোড়ে নানা অপরাধের আখড়া হিসেবে পরিচিত শিকদার হোটেলটি এখন নাম বদলিয়ে হয়েছে কুড়িল ইন্টারন্যাশনাল হোটেল। গুলশানের ডিসির আন্তরিক চেষ্টা থাকা সত্তেও এ হোটেলটিরও মাদক ও নারী বাণিজ্য কোনভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না। নাম পাল্টে ভিন্ন ম্যানেজমেন্ট দেখানো হলেও কুড়িল থেকে বসুন্ধরা এলাকা পর্যন্ত গড়ে ওঠা নামে-বেনামের হোটেলগুলোর মূল মালিকানা ঠান্ডু শিকদারের হাতেই রয়েছে।
টাঙ্গাইলের বিএনপি পরিবারের কর্ণধার খ্যাত ঠান্ডু শিকদার গত প্রায় দুই যুগ ধরেই রাজধানীর নারী দেহ বাণিজ্যের অপ্রতিরোধ্য গডফাদার। কুড়িল ও বসুন্ধরা এলাকায় তাকে শেল্টার দেয় সদ্য আওয়ামীলীগে যোগদানকারী বিএনপি নেতা কুড়িলের সুলতান মিয়া। তিনিই এখন ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে থানা প্রশাসন, স্থানীয় মাস্তান ম্যানেজ করে আবাসিক হোটেলের নামে বহুমুখি অপরাধ আখড়াগুলো পরিচালনা করে চলছেন। তার নেতৃত্বেই কুড়িলের হোটেল দুটিতে হররোজ লাখ লাখ টাকার জুয়া, মাদক ও নারী দেহের ওপেন বাণিজ্য চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি প্রকাশ্যেই ঘোষণা দিয়ে বলেন, এই এলাকার চারটি হোটেল নির্বিঘেœ পরিচালনার গুলশান ডিসি অফিসে প্রতি সপ্তাহে ৬০ হাজার টাকা বখড়া দিতে হয়। যেখানে খোদ ডিসি এসব অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে আপোষহীন, তাহলে ডিসি অফিসের নামে নিয়মিত চাঁদার টাকাগুলো হাতিয়ে নিচ্ছে কারা? তবে কি ডিসি অফিসের অন্য কোনো কর্মকর্তা এই অপরাধের নেপথ্যে রয়েছেন?
বুলেট বাবুর ছবি টাঙ্গানো আছে বাড্ডা থানায়, অথচ সে বীরদর্পে ঘুরে বেড়ায় সর্বত্রই। গুদারাঘাট, লিংক রোড, কাইয়ুম কমিশনার বাড়ির পেছনের গলিতে সে হরদম দলবল নিয়ে আড্ডা দেয়। নির্মানাধীন একটি ভবনে তারা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অবস্থানও করে। এখান থেকেই চাঁদাবাজিসহ নানারকম অপরাধমূক কর্মকান্ড পরিচালিত হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। একইভাবে ভাটারা থানার অপরাধী বোর্ডে যেসব মাদক ব্যবসায়ির ছবি টাঙ্গানো রয়েছে তার বাই পুলিশের সোর্স পরিচয়ে অবাধে মাদক ব্যবসাই করে বেড়াচ্ছে। তাহলে অপরাধীদের আলাদা তালিকা তৈরির করার মানেটা কী??
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd