সিলেট ৩০শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৪:৪১ অপরাহ্ণ, মে ২৭, ২০১৮
ক্রাইম ডেস্ক :
সাইনবোর্ড নামধারী ডাক্তার, দালাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও রিপ্রেজেনটেটিভদের দৌরাত্ম্যে প্রতিনিয়তই হয়রানীর শিকার হচ্ছেন অসংখ্য রোগী ও তাদের স্বজনরা।
সিলেট নগরীর ডাক্তারপাড়া খ্যাত স্টেডিয়াম মার্কেট এলাকায় দালাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও রিপ্রেজেনটেটিভদের দৌরাত্ম্য এখন চরমে। শতাধিক সংঘবদ্ধ দালালরা একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে স্টেডিয়াম ডাক্তারপাড়া নিযন্ত্রণ করছে।
বিশেষ করে গ্রাম এলাকা থেকে যে সমস্ত লোকজন স্টেডিয়াম মার্কেটে আসেন তারাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হয়রানীর শিকার হন। দালালদের খপ্পরে পড়ে প্রতিদিন শত শত রোগী ও তাদের স্বজনরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
সরেজমিনে স্টেডিয়াম মার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রায় দেড় শতাধিক ডাক্তারের চেম্বার, কয়েকশ ফার্মেসী এবং প্রায় অগণিত ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। বিভিন্ন নামীদামী ডাক্তারদের চেম্বার থাকার পাশাপাশি গুটি কয়েক হাতুড়ী-ডাক্তারের চেম্বার ও রয়েছে এই স্টেডিয়াম মার্কেটে। প্রতিদিন দুপুর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এখানে রোগী ও তাদের স্বজনদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। তবে রোগীর সাথে পাল্লা দিয়ে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানীর রিপ্রেজেনটেটিভদের সংখ্যাও কম নয়।
অভিযোগ রয়েছে অনেক নিম্নমানের কোম্পানীর প্রতিনিধিরা ডাক্তারদের বড় অংকের বখরা দিয়ে নিজ কোম্পানীর ওষুধ লিখতে বাধ্য করেন। ফলে ওষুধ কোম্পানী লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হন সহজ সরল রোগী ও তাদের স্বজনরা। এরকম অসংখ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে ডাক্তারপাড়ায় আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের সাথে কথা বলে। প্রতারক দালালদের মত অনেক কোম্পানীর নিম্নমানের ওষুধ লিখে রোগীদেরও ঠকাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
গোলাপগন্জ থেকে আসা একজন রোগীর আত্মীয় তাহমিনা জান্নাত এ প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, এখানকার ডাক্তারদের ওয়েটিং রুমে রোগীদের মত ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকেন ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা। তারা ডাক্তারকে বিভিন্ন উপঢৌকন দিয়ে নিম্নমানের ওষুধ লিখতে বাধ্য করছেন। এসব ওষুধের কার্যকরিতা কম হলেও দাম অনেক বেশি। তিনি বলেন, জনৈক ডাক্তার তার মাকে রেপুটেড কোন কোম্পানীর ওষুধ লিখে দেননি। যে কোম্পানীর ওষুধ দিয়েছেন ঐ কোম্পানীগুলোর নাম অনেক ফার্মাসিস্টও জানেননা। পাশে থাকা কোম্পানি গন্জের আরেকজন রোগী বাবলা মিয়া বলেন, ডাক্তারের চেম্বারে যে সকল এটেনডেন্স থাকে ওরা ও দালালী করে। টাকা দিলে ১ নম্বর টিকেটও পাওয়া যায়। নতুবা টিকেট নেই বলে ফিরিয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, ওরা ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন নিয়ে রোগীদেরকে তাদের পছন্দের ফার্মেসীতে নিয়ে যায়। ওখান থেকে অতিরিক্ত মূল্য দিয়ে ওষুধ কিনতে অনেক সময় রোগীদেরকে বাধ্য করে। তিনি বলেন, ডাক্তার কোন টেস্টের কথা বললে ওরাই আবার অত্যন্ত নিম্নমানের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যায়। অন্যথায় পছন্দের ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে ভিজিটিং কার্ড হাতে তুলিয়ে বলে ওখানে গিয়ে পরীক্ষা করে আসুন। এমন অভিযোগ অনেক রোগীও রোগীর স্বজনদের।গ্রাম থেকে আসা অনেক সহজ সরল রোগী ফাঁদে পড়ে ঐ ডায়াগনস্টিক সেন্টারেই যান। এভাবেই চলছে সিলেট শহরের ডাক্তারপাড়া খ্যাত স্টেডিয়াম মার্কেট।
এটেনডেন্সরুপী ঐ দালালরা প্রতিনিয়ত লোকজনকে ঠকাচ্ছে। ওরা কমিশনের মাধ্যমে প্রতারণা করছে। স্টেডিয়াম মার্কেট এলাকায় যে সমস্ত দালাল কাজ করে তারা খুবই দুরন্ত। বিভিন্ন কলা কৌশলে কখনো মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে রোগী কিংবা স্বজনদের বশ করে নেয় সহজেই। ওদের কথাবার্তায় মনে হয় তারাই স্টেডিয়াম মার্কেটের হর্তাকর্তা। পোষাক পরিচ্ছদেও তাদেরকে দালাল বলে মনে হয় না। অবাক হবার মতো বিষয়, দালালদের মধ্যে নারী দালালের সংখ্যা কম হলে ৩০ জন হবে।
ওরা দীর্ঘদিন ধরে বিশাল এই মার্কেটের নিচতলা থেকে শুরু করে দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করছে। অনেক সময় ওদের কথাতেই চলতে হয় ফার্মেসী ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকদের। নিচতলায় প্রতিবেদকের সাথে এক দালালের রোগী বেশে কথা হয়। এ প্রতিবেদকের মুখ থেকে কথা বেরুনোর পূর্বেই সালাম দিয়ে এ দালাল নিজ পছন্দের ডাক্তার, ফার্মেসী ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তথ্য দিয়ে দেয়। কোথা থেকে এসেছি, কিনাম এসব জানতে চায়। পরবর্তীতে তার সাথে দেখা করব বলে ওখান থেকে চলে আসি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ফার্মেসী মালিক জানান, এখানকার দালালরা খুবই চৌকস। এরা সহজেই লোকজনকে বশ করতে পারে। ওরা কমিশনের বিনিময়ে কাজ করে। ওষুধ বিক্রিকালে ওদেরকে ১০% আবার কোন কোন ক্ষেত্রে ২০% কমিশন ও দিতে হয়। একেকজন দালাল প্রতিদিন শুধু ফার্মেসী মালিকদের নিকট থেকে হাজার খানেক টাকা আয় করে। তিনি আরো জানান, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক এবং কোন কোন ডাক্তার এদেরকে ৩০% থেকে ৪০% কমিশন দিতেও বাধ্য হন। নিরীহ রোগী ও তাদের স্বজনেরা এ সমস্ত দালালদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশন (বিএমএ) এর কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপ মহাপরিচালক ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল বলেন কড়া নির্দেশ থাকার পরও এমন ঘটনা ঘটলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযত ব্যবস্হা গ্রহন করা হবে বলে জানান।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd