তিন ভাইকে বিয়ে করতে হলো খাদিজাকে!

প্রকাশিত: ৩:৫৭ অপরাহ্ণ, জুন ৪, ২০১৮

তিন ভাইকে বিয়ে করতে হলো খাদিজাকে!

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : বয়স যখন ছয়, তখন তার চেয়ে ১৫ বছর বেশি বয়সী একজনের সঙ্গে বিয়ে হয় খাদিজার। তারপর স্বামীর অপর দুই ভাইকেও বিয়ে করতে হয়েছে খাদিজাকে। বর্তমানে খাদিজার বয়স এখন ১৮ বছর। খবর: এবেলার।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম দি ইন্ডিপেন্ডেন্টের এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এবেলা জানায়, প্রথমে খাদিজার বিয়ে হয় এক তালেবান জঙ্গির সঙ্গে। তিনি নিহত হয় মার্কিন সেনার হাতে। তার পরে তার বিয়ে হয় এক পুলিশ সদস্যের সঙ্গে।

সে নিহত হয় তালেবানদের সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে। তার তৃতীয় স্বামী ছিলেন এক দোভাষী। মার্কিন সেনাদের দোভাষী হিসেবে কাজ করতে হতো তাকে। এখন তার জীবনও বিপন্ন। কারণ তালেবানরা তাকে এবং তার শিশুপুত্রকে খুনের হুমকি দিচ্ছে।

জানা যায়, খাদিজার তিন স্বামী আসলে তিন ভাই। তাদের পাখতুন সমাজের নিয়ম, মৃত ভাতৃজায়াকে বিয়ে করতে হবে স্বামীর পরের ভাইকে। এভাবেই তাকে পর পর তিনটি বিয়ে করতে হয়।

ঘটনাটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ আফগানিস্তানের। দক্ষিণ আফগানিস্তানের এক আফিম উৎপাদক কৃষক পরিবারের মেয়ে খাদিজা। জন্মের আগেই তার বাবা তার খুড়তুতো ভাইয়ের সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক করে রেখেছিলেন। সেই মতো ৬ বছর বয়সে খাদিজার বিয়ে হয় তার থেকে ১৫ বছরের বড় জিয়া উল হকের সঙ্গে।

সেইসময়ে তাদের বাসভূমি মারজা ছিল তালেবানদের স্বর্গ। জিয়া তালেবানদের খাতাতেই নাম লেখায়। মাঝে মাঝে সে বাড়ি আসত। কিন্তু মারজায় মার্কিন সেনার প্রভাব বাড়লে তার আসা যাওয়া কমে যায়। এক সময়ে এক এনকাউন্টারে সে নিহত হয়। খাদিজার বয়স তখন ১০।

জিয়ার পরের দুই ভাই পুলিশে চাকরি করত। পুলিশও এই সময়ে যুদ্ধে লিপ্ত। তাদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ ভাই আমিনুল্লাহর সঙ্গে খাদিজার আবার বিয়ে হয়। তখন আমিনুল্লাহর বয়স ২২ বছর।

পরে ২০১৪ সালে আমিনুল্লাহও মারা যায়। খাদিজার গর্ভে তখন সন্তান। ১৪ বছর বয়সে তার এক কন্যাসন্তান জন্মায়। পবিত্র কোরআন নির্ধারিত চার মাস পরে বিধবা খাদিজার পুনরায় বিয়ে হয় পরের ভাই শামসুদ্দিনের সঙ্গে।

শামসুদ্দিন তার পরিবার নিয়ে হেলমন্দ প্রদেশের রাজধানী লস্কর গড়ে চলে যায় এবং সেখানে সে প্রতিদিন ২৫ ডলারের বিনিময়ে মার্কিন সেনাদের দোভাষীর কাজ করতে থাকে। কিন্তু সেই চাকরিও চলে যায়।

পরে রিকশা চালানো শুরু করে শামসুদ্দিন। ইতিমধ্যে তাদের পরিবারের বাকি পুরুষরা মারা যায়। কখনও তালেবান হামলায়, কখনও বা যুদ্ধে। শামসুদ্দিন একাই বেঁচে থাকে খাদিজা আর শিশুকন্যাটিকে নিয়ে।

সংবাদমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সামসুদ্দিন জানায়, সে খাদিজাকে বিয়ে করতে চায়নি। দেশের নিয়মের কারণেই তাকে বাধ্য করেছে বড় ভাইয়ের বিধবাকে বিয়ে করতে। সে চেয়েছিল, খাদিজা অন্য কারোকে বিয়ে করুক। কিন্তু তখন কিছুই করার ছিল না।

এখন খাদিজা ও শামসুদ্দিনের কোলে এক পুত্রসন্তানও রয়েছে। তালেবানরা নিয়মিত ফোন করে সেই শিশুটিকে হত্যার হুমকি দেয়। শামসুদ্দিনকেও নিয়মিত প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়। যুদ্ধ আর তালেবানি শাসন তাদের সমস্ত স্বপ্নকে শেষ করে দিয়েছে।

এ ঘটনা শুধু এক খাদিজার নয়; এটা আফগান গ্রামাঞ্চলের বেশিরভাগ পরিবারেই এমন চিত্র।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

June 2018
S S M T W T F
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  

সর্বশেষ খবর

………………………..