সিলেট ৩০শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ২:৫৪ অপরাহ্ণ, জুন ৫, ২০১৮
স্টাফ রিপোর্টার :: সিলেট-৪ আসনে আগামী সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন প্রাপ্তি নিয়ে রীতিমতো দৌড়ঝাপ চলছে আওয়ামী লীগ, জাতীয়পাটি ও বিএনপিতে এছাড়া থাকবে জামায়াত সমর্থীত প্রার্থী। কিন্তু এবারও ওই আসনটিতে ইমরান আহমদ এমপির শক্ত অবস্থান রয়েছে। আওয়ামীলীগ থেকে তাকেই প্রথম পছন্দে নিচ্ছে দলটি। অবশ্য যদিও দলটির একাধিক প্রার্থী আছেন। কিন্তু ইমরান আহমদের গ্রহণ যোগ্যতা এখনো দলের কাছে অটুট রয়েছে বলে দলটির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এদিকে প্রতিযোগিতায় আসনটি কবজাবন্দি করতে চায় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। কারণ এ আসনে জাপার দুইজন প্রার্থী ছাড়া অন্য কোনা প্রার্থী মনোনয়ন চাওয়ার নেই। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের তিনজন প্রার্থী এ আসনে মনোনয়ন চাইবেন। আর বিএনপি থেকে ইতোমধ্যে চারজন প্রার্থী মনোনয়ন পাওয়ার প্রতিযোগিতায় রয়েছেন। ওই চারজন প্রার্থীর কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি যদি নিজেদের ঘর গোছাতে ব্যর্থ হয়-তাহলে আগামী নির্বাচনে দুই দলই বেকায়দায় পড়তে পারে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ থেকে এ আসনে বিদ্রোহী প্রার্থী থেকে যাওয়ার আশংঙ্কা করছেন আসনটির তৃণমূল নেতাকর্মীরা। বিগত নির্বাচনে এমনটাই হয়েছিল।
জৈন্তাপুর-গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৪ আসনের বর্তমান এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইমরান আহমদ। এ আসনে বার বারই মনোনয়ন পেয়ে থাকেন। সম্প্রতি এলাকার ভোটারদের সাথে তিনি বেশ যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছেন। তিনি আসনের এমপি হিসেবে ৫ম বারের মতো দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৮ এবং সর্বশেষ ২০১৪ সালে ইমরান আহমদ এমপি নির্বাচিত হন। গত নির্বাচনে তাঁর সঙ্গে মনোনয়ন দৌড়ে নেমেছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমদ। তিনি মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এমপি ইমরান চৌধুরী ঘনিষ্ঠ ভাজন হিসেবে পরিচিত গোয়াইনঘাট ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আওয়ামী লীগ নেতা মো. ফজলুল হক এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন বিগত নির্বাচনে চেয়েছিলন, কিন্তু পাননি। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা এবং উপজেলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন।
এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থী হলেন চার জন। তাঁরা হলেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ দিলদার হোসেন সেলিম, গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের ২বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও সিলেট জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আব্দুল হাকিম চৌধুরী, সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট নুরুল হক ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি অ্যাডভোকেট শামসুজ্জামান জামান। এদের মধ্যে সাবেক এমপি দিলদার হোসেন সেলিম এবং উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম চৌধুরী নির্বাচন করবেন বলেও বেশ সরব রয়েছেন। তবে উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম কখনই দলের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেননি বলে জানিয়েছেন তার অনুসারিরা। অপর দুই প্রার্থীর একজন বিএনপির প্রবীণ নেতা অ্যাডভোকেট নুরুল হক। দল তাঁকে মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরা। অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করলেও তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরা বলছেন তিনি সিলেট-৪ আসনে মনোয়ন চাইবেন। এদিকে জাতীয় পাটি হতে মনোনয়ন চাইছেন ২জন প্রার্থী ইসমাইল আলী আশিক ও এটিইউ তাজ রহমান৷ সুবিধাজনক অবস্থানে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সিলেট জেলা জাপার আহ্বায়ক এটিইউ তাজ রহমান৷ কিছুটা দুরে রয়েছেন ইসমাইল আলী আশিক৷ অপর দিকে জাময়াত সমর্থীত জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ জয়নাল আবেদীন আসন্ন সংসদ নির্বাচনে সতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন বলে গুঞ্জন রয়েছে৷ ইতো মধ্যে তিনি নির্বাচনি মাঠে সরব রয়েছেন বলে দেখা যাচ্ছে৷
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইমরান আহমদ এমপি বলেন, ‘দলের মনোনয়ন মূলত নির্ভর করে তৃণমূল নেতাকর্মী এবং দলীয় নীতি নির্ধারণী ফোরামের উপর। দল আমাকে মূল্যায়ন করে বার বার মনোনয়ন দিয়েছে। তৃণমূল নেতাকর্মী ও আসনের জনগণরা আমাকে বার বার তাঁদের সেবক করেছেন। আমিও তাঁদের পাশে থেকে উন্নয়ন কাজ অব্যাহত রেখেছি। আগামী নির্বাচনে তৃণমূল এবং কেন্দ্রীয় নীতি নির্ধারণী ফোরাম আমাকে মূল্যায়ন করলে অবশ্যই জনগণের সেবক হতে নির্বাচন করব।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক এমপি দিলদার হোসেন সেলিম জানান, ‘দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। নির্বাচনি এলাকায় সবসময় ছিলাম আছি এবং থাকব। তিনি বলেন, আমি এমপি থাকাকালে এ আসনে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। শুধু দল নয়; এ আসনের আপমর জনগণ চান আমি নির্বাচন করি। মানুষের সেবা এবং এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে মনোনয়ন চাইব।’
গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি আবদুল হাকিম চৌধুরী বলেন, ‘পরপর দু’বার আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে পরাজিত করে দলীয় সমর্থন নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। বিএনপির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কাজ করে যাচ্ছি। সিলেট জেলা বিএনপি গুরুত্বপূর্ণ পদে বার বার দায়িত্ব পালন করেছি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশ, শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শ ধারণ এবং লালন করে রাজনীতি করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, সিলেট-৪ আসনের মানুষ তাদের সেবা করতে আমাকে দলীয় মনোনয় চাওয়ার প্রেরণা জুগিয়েছেন। কেন্দ্র থেকেও আমাকে নির্বাচনি আসনে কাজ করার কথা জানানো হয়েছে। জনগণের প্রত্যাশা পূরণে মনোনয়ন চাইব। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয়, তাহলে বাকি জীবন মানবসেবাই করতে চাই। দলের জন্য অনেক ত্যাগ করেছি, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দলের জন্যই কাজ করে যাব। তাই আমার বিশ্বাস, আমি মনোনয়ন পাব। আমার প্রাণের সংগঠন বিএনপি আমাকে নিরাশ করবে না বলেই আমর ধারণা।’
গোয়াইনঘাট ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আওয়ামী লীগ নেতা মো. ফজলুল হক জানান, ‘জনগণের স্বার্থে আমি মনোনয়ন চাইব। কারণ রাজনীতির মূলমন্ত্র হচ্ছে জনসেবা। এমপি ইমরান আহমদের ঘনিষ্ঠ ভাজন হওয়া সত্যে আপনার মনোনয়ন চাওয়াটা কী কোনো কৌশল ?এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তা সঠিক, আমি এমপির ঘনিষ্ঠ মানুষ। এমপিই আমাকে রাজনীতিতে এনেছেন। তিনি আমার অভিভাবক। তবে মনোনয়ন চাওয়ার ব্যাপারে আমি কোনো কৌশল অবলম্বন করছি না। গত নির্বাচনেও আমি মনোনয়ন চেয়েছি, পাইনি। দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছি। দেশরতœ প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে যোগ্য মনে করে মনোনয়ন দেন আমি দল এবং জনগণের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করে যাব। তিনি বলেন, আমি মনোনয়ন না পেলে আওয়ামী লীগ থেকে যে মনোনয়ন পাবেন তাঁকে বিজয়ী করতে অতীতের ন্যায় কাজ করে যাব।’
জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য এটিইউ তাজ রহমান বলেন, ‘পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি পল্লিবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নির্দেশেই আমি কাজ করে যাচ্ছি। আমি দলীয় মনোনয়ন চাইব এবং আমার বিশ্বাস, দল আমাকে মনোনয়ন দেবে। আমি এমপি নির্বাচিত হলে সিলেট-৪ আসনে ব্যাপক উন্নয়ন করব। কারণ জাতীয় পার্টি উন্নয়নে বিশ্বাসী। সিলেট-৪ আসনের মানুষ আমার প্রেরণা। তাঁদের নিয়েই আগামীতে ৪ আসনের উন্নয়ন করতে চাই।’
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd