সিলেট ৮ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৫:২৮ অপরাহ্ণ, জুন ১৯, ২০১৮
স্টাফ রিপোর্টার :: সিলেটে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে বন্যা পরিস্থিতি। এরই মধ্যে অন্তত ছয়টি উপজেলা আক্রান্ত হয়েছে। জকিগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, বালাগঞ্জ, বিয়ানীবাজার ও ওসমানীনগরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। এর মধ্যে জকিগঞ্জের অবস্থা সবচেয়ে করুণ। এদিকে মৌলভীবাজারে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে মৌলভীবাজারে শহরের সঙ্গে চার উপজেলা ও সিলেটের সড়ক যোগাযোগ এখনো বিছিন্ন রয়েছে। এক সপ্তাহে বন্যার পানিতে ডুবে সাতজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
জকিগঞ্জ : গত কয়েকদিনের অবিরাম বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে জকিগঞ্জের সবকটি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। উপজেলার বারঠাকুরী ইউনিয়নের উত্তরকূল মেইন রোড প্রবল স্রোতের তোড়ে ভেঙে যাওয়ায় সিলেটের সঙ্গে জকিগঞ্জের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। উপজেলার প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকার গ্রামীণ রাস্তাঘাট
ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখন পানির নিচে। সরকারিভাবে এখনো কোনো আশ্রয়শিবির খোলা হয়নি। ত্রাণসামগ্রীর জন্য বন্যার্ত মানুষ হাহাকার করছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজন কুমার সিংহ সোমবার জানান, সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি কিছুটা হ্রাস পেলেও ভাটি এলাকায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। অনেক মানুষ পানিবন্দি রয়েছে এবং বিভিন্ন স্কুল এবং মাদ্রাসায় তারা আশ্রয় নিয়েছে। অনেক বীজতলা ও আমন ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এ পর্যন্ত ১২ টন চাল ও নগদ দেড় লক্ষাধিক টাকা সরকারি বরাদ্দ পাওয়া গেছে। সোমবারের মধ্যেই বন্যার্ত মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।
এদিকে উপজেলার সুরমা ও কুশিয়ারা ডাইকের প্রায় ১২টি স্থানে ভাঙন দেখা দেওয়ায় প্রবল বেগে পানি ঢুকে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত করছে। উপজেলার প্রায় ২৫ হাজার মানুষ এখন পানিবন্দি।
গত শুক্রবার সংসদের বিরোধীদলীয় হুইপ সেলিম উদ্দিন এমপি ও গত রবিবার সিলেটের জেলা প্রশাসক নুমেরী জামান বন্যা উপদ্রুত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
জকিগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী সাইফুল ইসলাম জানান, বন্যার কারণে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছুটি একদিন বৃদ্ধি করা হয়েছে।
গোয়াইনঘাট : ১৪ জুন থেকে টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে।
পিয়াইন ও সারী নদীর পানি বেড়ে উপজেলার পূর্ব জাফলং, আলীরগাঁও, রুস্তুমপুর, ডৌবাড়ী, লেঙ্গুড়া, তোয়াকুল ও নন্দীরগাঁও ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে আছে প্রায় ১০ হাজার মানুষ। তবে গতকাল সোমবার উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত কুমার পাল জানান, পাহাড়ি ঢল ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে। গ্রামীণ রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ বিতরণ করার জন্য উপজেলার প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে।
মৌলভীবাজার : কিছুটা উন্নতির দিকে যাচ্ছে মৌলভীবাজারে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি। মনু ও ধলাই নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। এদিকে বন্যাকবলিত জেলা শহর থেকেও পানি নামতে শুরু করেছে। তবে পানি নেমে শহরের পশ্চিমাঞ্চল নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। এ পর্যন্ত গত এক সপ্তাহে জেলায় বন্যার পানিতে ডুবে সাতজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। শহরের সঙ্গে সিলেট ও চার উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। দুর্ভোগে পড়েছে বন্যাকবলিত মৌলভীবাজার সদর, রাজনগর, কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া উপজেলার প্রায় দুই লাখ মানুষ।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, মৌলভীবাজারে বন্যাদুর্গত প্রায় ৬০টি আশ্রয়কেন্দ্রে সাড়ে ৬ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। এ পর্যন্ত গত এক সপ্তাহে জেলায় বন্যার পানিতে ডুবে সাতজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd