ব্রিটিশ চলে গেছে, ভারতকে রেখে গেছে: মো.নাঈমুল ইসলাম

প্রকাশিত: ৪:০৯ অপরাহ্ণ, জুলাই ৩, ২০১৮

ব্রিটিশ চলে গেছে, ভারতকে রেখে গেছে: মো.নাঈমুল ইসলাম

রাজনীতি বাংলাদেশের; রচিত করবে ভারত। শহীদ তিতুমীরের সেই জীবন বাজি রেখে সর্বসাধারণকে নিয়ে নেতৃত্বদান করে বাংলার প্রজাকুলের উপর স্থানীয় জমিদার এবং ইউরোপীয় নীলকরদের অত্যাচার প্রতিরোধ এবং ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটানো আজ যেনো কর্দমাক্ত হয়ে গেছে। কেউ মনেই রাখতে চায় না। সবার কাছে যেন বিষয়টি তুচ্ছতাচ্ছিল্য মনে হয়।

ব্রিটিশ উপনিবেশিক অত্যাচার বাঙ্গালীর উপর শুরু হয় নিজ চোখে না দেখতে পারলেও ইতিহাস পড়ে অনুমেয় কতটুকু নির্মম এবং বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ ঘটেছিলো বাংলাদেশের ইতিহাসে। তিতুমীর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে পর্যন্ত সাহায্য চাইলে তারা সাহায্য করতে দ্বিধাবোধ করে। ভারত শাসন রানী এলিজাবেথের আগমন তাহলে কিভাবে ভারত বাংলাদেশের বন্ধু হলো।

১৯৪৭ সালে যখন ভারত পাকিস্তান অবসান হয় তখন পাকিস্তানের দুটি অংশ ছিলো এবং পশ্চিম পাকিস্তান আমাদের উপর ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ এবং ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন সফল হয় মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানিসহ আরো অনেক কৃতিত্বমান সর্বসাধারণ নেতাদের ত্যাগ আর নেতৃত্বের বিনিময়ে; অর্জিত হয় আমাদের ভাষা ৫২ ও স্বাধীনতা ৭১। কিন্তু কখনো কি এটা ভেবে দেখেছি বাংলা ভাষা আমাদের, কিন্তু ভারতের যেই পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা, ত্রিপুরায় আজ বাংলা ভাষার প্রচলন রয়েছে সেই অঞ্চলগুলো আমাদের না হয়ে কেন এবং কিভাবে ভারতের হলো।

ভারতের একটি নীতিকে আমি মনে-প্রাণে স্যালুট করি তাদের মতো দেশপ্রেম আর কোনো দেশে নেই। তারা যদিও একে অপরের সাথে দ্রোহিতার পরিচয় প্রদর্শন করুক কিন্তু কখনো দেশের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে না।

ভারতের একজন মহান নেতা আজ যিনি বিশ্বখ্যাতি একজন সম্মানের পাত্র হিসেবে বিবেচ্য মোহন দাস করমচাঁদ গাঁন্ধী। পেশায় একজন উকিল ছিলেন এবং একজন পরিশ্রমি রাজনীতিবীদ, দার্শনীক, সৎ, সাহসী, অন্যায়ের প্রতিবাদী ও একজন প্রকৃত হিন্দুস্তানি দেশপ্রেমিক ছিলেন। শিক্ষাগত যোগ্যতা, মেধা এবং জ্ঞান থাকার পাশাপাশি তিনি অনেক চালাক এবং চতুরও ছিলেন। উনার বুদ্ধির কাছে সবাইকেই হার মানতে হতো তাইতো ভারত-পাকিস্তান অবসানের সময় পাকিস্তানের সিংহভাগের মধ্যে বৈষম্য এবং দ্বন্ধ সৃষ্টি করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগিয়ে হাতিয়ে নিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা এবং ত্রিপুরার মতো বাংলা জনপদসমূহকে। তা না হলে আজ বাংলাদেশের আয়তন কতো বড় হতো বিষয়টি চিন্তা-ভাবনায় আসলেই আমার চোখ কপালে উঠে যায়।

আমরা তরুণ প্রজন্ম বাংলাদেশ সম্পর্কে পড়তে চাইলে বঙ্গবন্ধু, জিয়াউর রহমান, শেখ হাসিনা, বেগম খালেদা জিয়া এখানেই সীমাবদ্ধ হয়ে যাই। যার কারণে আমরা সঠিক ইতিহাস থেকে বঞ্চিত হই। পরের প্রজন্ম যখন আসবে তারা তো ভুলেই যাবে শেখ মুজিব এবং জিয়াউর রহমান বলতে বাংলাদেশের ইতিহাসে কেউ ছিলেন। কারণ তাদের সামনে সঠিক ইতিহাসকে তুলে ধরা হয় না যেই সরকার চালাবেন তার ইতিহাস পড়তে পড়তেই আপনার ইতিবৃত্ত হয়ে যাবে। আর তুলে ধরা হলেও শুধু ৭১ এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হয় যাতে বর্তমান বাংলাদেশ প্রজন্ম শেখ মুজিব এবং শেখ হাসিনার জয়গান ছাড়া আর কোনো ইতিহাস না জানে। যার জ্বলন্ত উদাহরণ বাংলাদেশ এবং বিশ্বপরিচয় পরীক্ষায় পরিলক্ষিত হয়েছি। সেখানে প্রত্যেকটি প্রশ্নের উত্তর শেখ মুজিব এবং শেখ হাসিনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো। তরুণ প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস চর্চা দিতে হলে তাদেরকে ৭১ থেকে নয় ৪৭ থেকে দিতে হবে। বাংলাদেশ শুধু শেখ মুজিব, জিয়াউর রহমান তাদের অর্জন নয়। এই দেশের জন্য আরো অনেক বড় বড় নেতারা জীবন ত্যাগ করেছেন তাদের সম্পর্কেও জানা আমাদের দায়-দায়িত্ব এবং কর্তব্য।
৪৭, ৫২ এবং ৭১ পেরিয়ে যুগের ক্রমর্ধমানে আজ বাংলাদেশের রাজনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। বর্তমান বাংলাদেশ এমন একটি পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে যেখান থেকে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ মনে হয় না আর কোনোদিন উত্তরণ পাবে বলে। গণতন্ত্রের স্তম্ভকে ভেঙ্গে দিয়ে ১৫৪টি আসনে বিনা ভোটে নির্বাচন করে দেশ চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার। যেই জঘণ্য কাজটি হয়েছিলো ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি। সরকার দলের যেইই হোন না কেন সবার মুখেই শুধু উন্নয়ণের জয়গান। কি হবে এই উন্নয়ণ দিয়ে যদি দেশে সু-শাসন না থাকে। যদি দেশে গণতন্ত্র না থাকে। যেখানে প্রশাসন থেকে শুরু করে সবাই সরকারের কাছে জিম্মি। যাদের অধীনে সংসদ একটি পুতুলখেলা ছাড়া আর কিছুই নয়।
২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি বাংলাদেশে যে একতরফা নির্বাচন হয়েছিলো তখন থেকেই ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক একবারে উচ্চ পর্যায়ে চলে গেছে। কিন্তু গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মূল প্রতিপাদ্য জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস তাহলে ভারত কেন সেখানে এসে নাক গলাবে। তার কারণ হলো ৫ই জানুয়ারি বাংলাদেশের ইতিহাসে যে জঘণ্যতম নির্বাচন হয়েছিলো তাতে ভারত অকুন্ঠা সমর্থন জানায় যার ফলে আওয়ামীলীগের সব স্বার্থ হাসিল হয় এবং দেশ পরিচালনা করতে জোরপূর্বক ক্ষমতায় আসে। গত ৯ বছর ধরেই শেখ হাসিনার সাথে ভারতের সম্পর্ক ভালো হলেও বাংলাদেশের সাথে হয়নি। যদি অর্থনৈতিক সম্পর্কটা ভালো করতে হয় অবশ্যই আমার সমর্থন আছে কিন্তু নিজ দেশের রাজনীতিতে অন্য একটি দেশকে দাওয়াত দিয়ে নিজ স্বার্থ হাসিল করাকে দেশের উন্নয়ণ তো বলে না। নাম দেওয়া হয় অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য। কথাটির সার সংক্ষেপ ঝড়ে বক মরে, ফকিরের কেরামৎ বাড়ে।
গাজীপুর নির্বাচনে কয়েকটি খন্ড….
(১) গাছা হাই স্কুল মাঠের ভোট কেন্দ্রের মহিলা বুথে আওয়ামীলীগ নেতা ও প্রিজাইডিং অফিসার যৌথভাবে জালভোটে সহায়তা করছেন।
(২) গাছা হাই স্কুল কেন্দ্রে জাল ভোট মারছে দুজন।
নাগরিক অধিকার যারা হনন করে তাদের মুখে দেশভক্তি আর রাজাকারের বিশ্বাসঘাতকতা একই। আমার সন্দেহ হয় তারা সংসদে দাড়িয়ে বাংলাদেশের যেসব উন্নয়ণের কথা বলে সেইসব নাটকীয় নয় তো। বুঝাই বড় দায়। আমাদের তরুণ প্রজন্ম এই একটাই কারণেই রাজনীতি থেকে সরে দাড়াচ্ছে। এর দায়ভার কে বহন করবে। মূর্খ, অশিক্ষিতদেরকে বিশেষ করে গুন্ডা-পান্ডা ছাত্রলীগকে যদি ভোটকেন্দ্রে দেয়া হয় ভোটকেন্দ্রের হাল তো এমনই হবে। শুধু একটি কথা বলবো খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যেভাবে জনগণের হার হয়েছিলো গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও জনগণের হার হয়েছে।
কারণ সিটি নির্বাচনের উপর ভরসা করে লাভ নেই নিঃসন্দেহে প্রত্যেক সিটিতেই আওয়ামীলীগ জিতবে। কারণ বোকা সাধারণ জনগণকে বুঝাতে হবে আওয়ামীলীগ এর অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু এবং অবাধ হবে।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) বেশ ভালোই অভিনব কায়দা কৌশল অবলম্বন করতে জানে। ভোটগ্রহণ শেষে তাদের ভাষ্য বিএনপি’র নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে হয়রানি করবেন না। আরও বলেছেন বিএনপিকে শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকতে হবে। ঝোপ বুঝে ভালোই কোপ দিয়েছে ইসি। আর আওয়ামীলীগ ধরি মাছ না ছুঁই পানি। ওবায়দুল কাদের সাহেবের কথা আর কি বলবো, উনি তো মাশাআল্লাহ সময়মত বলেই দিলেন আমরা ইসিকে নির্বাচনে সাহায্য করেছি মাত্র। উনার কথা শুনে আমার চোখ কপালে উঠে যায়। মাদক বিরোধী অভিযানে কাউন্সিলর একরাম হত্যার পর একদিন বলেই তো দিলেন এরকম দুএকটা নিরপরাধ মানুষ নিহত হতেই পারে। তাহলে আপনাদের মতো এরকম ভোট কারচুপি হতেই পারে।
আমরা সাধারণ জনগণের আর কি করার আছে বলুন, আমি একজন সামান্য প্রতিবাদী লেখক হিসেবে গোবর গণেশ হয়ে তাকানো ছাড়া আর কোনো উপায় নেই আমার।
তবে একটি কথা স্পষ্ট ভাষায় বলতে পারি স্থানীয় নির্বাচন রসিকতার সাজে রূপ নিয়েছে আওয়ামীলীগ তারা যেভাবে চাচ্ছে সেভাবেই সাজাচ্ছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশ হাওয়ার মিটাই হয়ে গেছে। প্রিজাইডিং অফিসার নাকি অসহায় (প্রথম আলো)। ভোট ব্যবধান দেখে আসলেই প্রমাণ হলো প্রত্যেক কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার অসহায়। তাদের বারংবার মানা করার পরও আওয়ামীলীগ এর ব্যাজধারীরা জোর করে ব্যালট ছিনিয়ে নিয়ে অবৈধভাবে নৌকার ধাপ্পা দিয়েছে।
অপরদিকে সেনাবাহিনীর উপর থেকে বিশ্বাস জিনিসটা বলতে একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে যখন দেখলাম বর্তমান সেনাপ্রধান শীর্ষ তিন সন্ত্রাসীর বড় ভাই। আরও অবাক হলাম যখন বিজিবি থেকে সেনাপ্রধান নেয়া হলো সেই কাজটি দেখে।
আমি তো জানি বাংলাদেশ সেনাবিহিনী বিশ্ব দরবারে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সেনাবাহিনীতে কি অফিসারের এতোই কমতি যে বিজিবি থেকে নেয়া হলো। সদ্য সাবেক সেনাপ্রধানের উপর আস্থাভাজন থাকলেও এখন আর থাকতে পারলাম না। বর্তমান সেনাপ্রধান সরকারের বিক্রি হয়ে খাটা গোলাম । আমি গোটা বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে দোষারোপ করছি না। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে এখনও সৎ অফিসার আছে। আমার বাবা একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা আমি জানি সেনাবাহিনী কখনো তাদের নিয়ত বিসর্জন দেয় না। তবে আমি বর্তমান সেনাপ্রধান নিয়ে শঙ্কিত। গণতন্ত্র এবং সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশে গণঅভূত্থান করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
গত বৃহস্পতিবার (২৮জুন) মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে অনিয়মের খবরে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন। খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ ওঠার পর এ নির্বাচন নিয়েও একই ধরনের অভিযোগ ওঠায় উদ্বেগ বেড়েছে।
গত শুক্রবার (২৯জুন) আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বললেন একজন বিদেশি রাষ্ট্রদূত গাজীপুরের ইলেকশন নিয়ে বক্তব্য রেখেছেন, তাও সাংবাদিকদের একটি সভায়। আমি বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের প্রতি যথাযথ সম্মান রেখে বলতে চাই, আপনারা দয়া করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নাক গলাবেন না। তিনি বলেন, ‘এটি কোনও স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের জন্য কল্যাণকর নয়, গ্রহণযোগ্যও নয়।’
হাছান মাহমুদের এই বক্তব্যে অনেকটা হুমকি-ধামকির প্রভাব লক্ষণীয়। এটিই আওয়ামীলীগের বর্তমান স্বভাব। ভারত কথা বললে কোনো সমস্যা নেই কিন্তু অন্যান্য দেশ ন্যায়ের পক্ষে কথা বললে তখনই সমস্যা হয়ে যায়। কারণ ভারতকে দিয়ে স্বার্থ হাসিল হবে ছাড়া আর কিছুই নয়।
আমরা যারা সমালোচক কথা বলি যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা নাড়িভুড়ি ধরে কথা না বলি ততক্ষণ পর্যন্ত আওয়ামীলীগ নিশ্চুপ থাকবে। যখনই সত্য কথা বলতে যাবেন তখনই সমস্যা হয়ে যাবে। আমরা যদি সারাদিন নামাজ-রোজা-হজ¦-যাকাত নিয়ে মানুষকে বুঝানোর চেষ্টা করি মানুষ বুঝবে, কিন্তু যখনই আপনি হক কথা বা সুদ-ঘুষ নিয়ে কথা বলবেন তখনই আপনার প্রতি মন্তব্য হবে সব বিষয়ে নাক গলাবেন না।

মো.নাঈমুল ইসলাম
ছাত্র ব্যক্তিত্ব সাংবাদিক, লেখক, কলামিস্ট ও সংগঠক।

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..