সিলেটের ইবনে সিনা হাসপাতালে আর কত জীবন যাবে এমন অবহেলায়?

প্রকাশিত: ৩:৫৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ১০, ২০১৮

সিলেটের ইবনে সিনা হাসপাতালে আর কত জীবন যাবে এমন অবহেলায়?

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : সিলেটের বেসরকারি চিকিৎসালয় ইবনে সিনা হাসপাতালে স্বেচ্ছাচারিতার শেষ কোথায়? এনিয়ে এক ভোক্তভোগি রোগীর জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাস্টাস দিয়েছেন। সেখানে চাঞ্চলকর তথ্য দিয়েছেন ও কিছু প্রশ্ন রেখেছেন তিনি।

তার সেই স্ট্যাস্টাস আমাদের পাঠকের জন্য তুলে দেয়া হলো:

জীবন নিয়ে কসাইয়ের (ডাক্তার) খেলা!
সেপি বেগম(২৬), বারহাল গ্রামের জকিগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। গত ৪-৬-১৮ সোমবার সকাল ৯ টার দিকে সিলেট হাতিমবাগ এলাকার দিকে ট্রাকের সাথে দুর্ঘটনার গুরুতর আহন হন। দ্রুত নিয়ে আসা হয় সিলেট “ইবনে সিনা” হসপিটাল। ইমার্জেন্সি ডাক্তার ভর্তি রেফার্ড করেন এবং সার্জন ডাক্তার দ্বারা ট্রিটমেন্ট হতে হবে জানিয়ে দেন। ৯.৩০ মিনিটের দিকে ভর্তি দেয়া হয় এবং অপেক্ষা করা হয় সার্জন ডাক্তারের। বার বার ফোন দেয়া হচ্ছে সার্জন সাহেব কে, আসছি আসছি করে দুপুর ২ টা।
নিয়ে যাওয়া হয় ‘পোস্ট ওপারেটিভ’ রুমে। আবারো অপেক্ষা সার্জন আসিতেছেন। এতক্ষণে রোগীর আত্মীয় স্বজন চিল্লাচিল্লি শুরু করলে ডা: সামাদ রোগীকে নিয়ে যান “অপারেশন থিয়েটারে। তখনও আসেন নি সার্জন, অত:পর তিনিই হাতে দেন “ব্যান্ডেজ ” এবং আবারো পোস্ট ওপারেটিভ রুমে। রোগীর লোকজন তখন দেখতে পেলেন মহিলার কাঁধে এবং পায়ে জখমকৃত অংশে কোন ধরনের মেডিসিন বা ব্যান্ডেজ হয় নি।
সময় গড়িয়ে দুপুর ৩.৩০ এর দিকে আসেন কাংকিত সার্জন ডা: চৌধুরী ফয়জুর রব জোবায়ের সাহেব। আবারো “ওটিতে” রোগী এবং দেখলেন রোগীকে। বাকী অংশতে দেয়া হলো ট্রিটমেন্ট। হাতে রয়ে গেলো ডা: সামাদ সাহেবের করা #ব্যান্ডেজ! কথা বললেন রোগীর আত্মীয় স্বজনের সাথে। বুজিয়ে বললেন রোগীর সার্বিক অবস্থা মোটামুটি ভাল। চিন্তার কোন কারণ নেই, রোগীর এখন “পিরিয়ড” চলতেছে তাই অপারেশন সম্ভব হচ্ছেনা। তাই রবিবার এর আগে অপারেশন করা যাবে না।
রোগীর আত্বীয় প্রশ্ন করলেন রবিবার পর্যন্ত এই ব্যান্ডেজ থাকবে কিনা? উত্তরে ডাক্তার চৌধুরী ফয়জুর রব জোবায়ের, উনার টিম এর ডা: সামাদ কে দেখিয়ে বললেন যেহেতু উনি ব্যান্ডেজ করেছেন সেহেতু সমস্যা না।
এর মধ্যে #ভয়ংকর ব্যাপার ছিলো ডাক্তার সাহেব এই ব্যান্ডেজ আর খুলেন নি বা রোগীর হাতে উনি হাত দিয়েও দেখনি ব্যান্ডেজ ঠিক আছে কিনা?
অত:পর রিলিজ দিয়ে দিলেন রোগীকে। রোগীর আত্মীয় স্বজন থাকতে চাইলে তিনি জানান, এ ধরনের প্রবলেমে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই যাওয়া যায়। সমস্যা হবে না।
রোগীর আত্মীয় স্বজন ব্যাপার টা বুজে উঠতে পারছিলেন না, এতো গুরুতর এক্সিডেন্ট ডাক্তার সাহেব এতো হালকা ভাবে নিচ্ছে কেন?
হসপিটালের বিল পরিশোধ করতে যেয়ে দেখা যায় ২৪ ঘণ্টায় বিল আসছে ২৪ হাজার টাকারও বেশি। বাধ্য হয়ে পুরো টাকা পরিশোধ করে আসেন।
ডাক্তারের কথায় ভরসা ও বিশ্বাস করে রোগীকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই #ব্যান্ডেজের ফাঁক দিয়ে শুরু হয় ব্লিডিং, দ্রুত নিয়ে আসা হয় সিলেট “আইডিয়াল হসপিটাল”। ভর্তি দেয়া হয় রোগীকে, দেখতে আসেন ওসমানীর অর্থোপেডিক্স ডিপার্টমেন্ট এর অধ্যাপক ডা: শংকর কুমার রায়। রোগী আবারো “ওটি” তে। ১ ঘণ্টা পরে বের করা হয় “ওটি” থেকে।
ডা: শংকর স্যারের সাথে কথা বলে জানা যায়, রোগীর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপারেশন জরুরী ছিল। আর হাতে যে ব্যান্ডেজ হয়েছে তা সঠিকভাবে হয় নি, হাতের হাড্ডি রয়ে গেছে বাইরে এবং সাথে সাথে অপারেশন করে হাড্ডি জায়গা মতো না বসানোর কারণে সেখানে সামান্য পচন/ইনফেকশন ধরে গেছে। এখন চাইলেও অপারেশন করা সম্ভব হচ্ছেনা। কারণ সেই ইনফেকশন শুকাতে হবে, এর পর অপারেশন করতে হবে। রোগী আইডিয়াল হসপিটাল ভর্তি আছেন এবং ট্রিটমেন্ট চলতেছে।
এখন রোগীর আত্বীয় বা জাগ্রত বিবেকের কিছু প্রশ্ন :-
১. ডা: সামাদ ব্যান্ডেজ যে করেছেন সেই ব্যান্ডেজ ডা: চৌধুরী ফয়জুর রব জুবায়ের আর খুলে দেখেন নি। যদি খুলে দেখার প্রয়োজন ছিলই না বা উনার ব্যান্ডেজ এনাফ ছিলো তাইলে তিনি আর আসার দরকার কি ছিলো?
২. ডা: সামাদের ব্যান্ডেজ এর উপর উনার ভরসা যেহেতু ছিলো তাইলে কেনো হাড্ডি বাইরে ছিলো এবং প্রপার হয়েছে কিনা তিনি কেনো চেক করেন নি?
৩. ডা: চৌধুরী ফয়জুর রব জুবায়েরের মতে রবিবার পর্যন্ত এই ব্যান্ডেজ থাকলে হাতের কি অবস্থা এবং রোগীর অবস্থা কি হতো?
এবার কিছু কথা কসাই কেনো বলেছিলাম!
৪. ব্যান্ডেজ বা ট্রিটমেন্ট করেছেন ডা: সামাদ কিন্তু বিলের কাগজে একটু দেখেন, সেখানে ডা: চৌধুরী ফয়জুর রব জুবায়েরের নামে ৮০০০/- বিল। কিন্তু উনি তো রোগীর ভাঙ্গা হাতে স্পর্শও করেন নি? তাইলে এই বিল কিসের?
উনার ভিজিট চার্জ ১ থেকে দেড় হাজারের উপরে তো হওয়ার কথা না!
রোগীর জীবনের ঝুঁকি, কষ্ট, টাকা এবং সময়ের দায়ভার কে নিবে??
ডাক্তারের সাথে কথা বলতে চেম্বারে যেয়ে জানা যায় উনি এখন ঢাকায় আছেন। অনেকবার ফোন দেয়ার পরেও ফোন রিসিভ করেন নি।
তাইলে কি উনি ঢাকা সফরে থাকবেন বলেই অপারেশন তারিখ পেছনে নিয়েছিলেন?
নাকি উনার ভুল চিকিৎসা?
নাকি অবহেলা?
আমরা কি প্রতিবাদ করতে পারিনা?
আর কত জীবন যাবে এমন অবহেলায়?

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..