সিলেট ৩০শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৬:৪১ অপরাহ্ণ, জুলাই ১১, ২০১৮
জামাল আহমদ :: সিলেটে এক শ্রেণীর দেহপসারীনিরা ভয়ংকর ফাঁদ গড়ে তুলেছে। ওদের ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব খুইয়েছেন গ্রাম থেকে আসা সহজ সরল মানুষ। তাদের সর্দার আর পুলিশের কতিপয় অসাধু ব্যক্তি এই ফাঁদের নিয়ন্ত্রক বলে অভিযোগ উঠেছে। ওরা পুণ্যভূমিকে শুধু কলুষিত করছে না, সিলেটের মারাত্মক সম্মানহানী ঘটাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশিষ্টজন। এরা এতোটাই ভয়ংকর যে, ওদের আশপাশ দিয়ে হেঁটে যেতে মানুষজন ভয় পায়। নগরীর সুরমা মার্কেট থেকে সিটি পয়েন্ট পর্যন্ত ওদের দখলে। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ওদের পদচারনায় এই এলাকা কলুষিত হচ্ছে, বিব্রত হচ্ছেন মানুষ। পরিবার-পরিজন নিয়ে এই এলাকা পাড়ি দিতে আত্মসম্মানে মারাত্মক আঘাত লাগে যে কারোরই। ওদের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে হয়রানীর শিকার হওয়া ভূক্তভোগী অনেকেই ক্রাইম সিলেট অফিসে অভিযোগ দিয়েছেন।
এমনি একজন ভূক্তভোগী সমশের আলী (ছদ্মনাম) বিশ্বনাথ থেকে এসে সুরমা মার্কেট পয়েন্টের পতিতাদের হাতে হেনস্থা হয়েছেন। চল্লিশোর্ধ এই ভদ্রলোক এ প্রতিবেদককে বলেন, গত ২৪ মার্চ বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটার দিকে সুরমা মার্কেট এলাকা থেকে জজ আদালত ভবনের ফুটপাত দিয়ে হেঁটে সিটি পয়েন্টের দিকে যাচ্ছিলাম। জেলা প্রশাসকের অফিসের সম্মুখ গেইটের সামনে আসা মাত্র বোরকা পরিহিত এক মহিলা উনার শার্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে দেয়। সাথে সাথে তিনি ঐ মহিলার হাতে ঝাপটে ধরেন। হাতে ধরা মাত্রই আরো ৪/৫ জন বোরকা পরিহিত মহিলা দ্রুত এসে এই ভদ্রলোককে মারধর করতে থাকে। কিছু বুঝে উঠার আগেই তারা তার গায়ের শার্ট টেনে হিঁচড়ে ছিঁড়ে ফেলে এবং সাথে থাকা মোবাইল ও শার্টের পকেট থেকে টাকা পয়সা নিয়ে চলে যায়। অদূরেই বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির কয়েকজন সদস্য দাঁড়িয়ে ঘটনাটি দেখছিলেন। কিন্তু তারা এগিয়ে আসেননি। এমন অভিযোগ করেছেন ভূক্তভোগী শমসের আলী।
শুধু শমসের নয়, ভাসমান এ সকল পতিতাদের অত্যাচারে অতিষ্ট হচ্ছেন অসংখ্য সহজ সরল মানুষ। এদের রয়েছে বিশাল সিন্ডিকেট। খদ্দের সংগ্রহ করার সাথে সাথেই সিন্ডিকেটের কাজ শুরু হয়। খদ্দেরকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে সিএনজি অটোরিকশা কিংবা রিকশাতে তুলতে পারলেই বাজিমাত। সিএনজি যোগে কিছুদূর যাওয়ার পরই পূর্ব থেকে ওঁৎ পেতে থাকা অসাধু কতিপয় পুলিশ সিগন্যাল দিয়ে অটোরিকশা আটকে দেবে। সাথে সাথে পতিতা নেমে দ্রুত চলে যায়। পুলিশ খদ্দেরকে নিয়ে নির্জন স্থানে চলে যাবে। সেখানে নিয়ে আটকের ভয় দেখিয়ে টাকা-মোবাইল ফোন নিয়ে নেয় অসাধু পুলিশ। এমন অভিযোগ ভুক্তভোগিদের।
সরেজমিন সুরমা মার্কেট থেকে সিটি পয়েন্ট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। এদেরকে সহযোগিতা করে কিছু অ-সিলেটি ধান্ধাবাজ। এরা আদালত ভবন প্রাঙ্গণে ঘুরাফেরা করে দেহপসারিনী আর তাদের সর্দারকে নিয়ন্ত্রণ করে। মোবাইলে এরা একে অন্যের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে। সিলেটের বিশিষ্টজনেরা পুণ্যভূমিতে এ ধরনের অনৈতিক কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা আর প্রতিবাদ জানিয়ে দ্রুত এসব বন্ধে উদ্যোগ নিতে প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
সিলেট জেলা বারের সাবেক সভাপতি বিশিষ্ট আইনজীবী এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহিন এ বিষয়ে বলেন, পুণ্যভূমি সিলেটে এবং পবিত্র আদালত প্রাঙ্গণের আশপাশে এ ধরনের অনৈতিক কর্মকান্ড উদ্দেশ্যজনক। দীর্ঘ দিন যাবত আদালতে যাওয়া আসার পথে এসকল মহিলাদের চোখে পড়ে। অবাক হই অদূরেই বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি। অথচ প্রকাশ্যে এ ধরনের বেহায়াপনা ঘটলেও পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আমি মনে করি কতিপয় অসাধু পুলিশ সদস্যের ছত্রছায়ায় এরা এখানে ভাসমান পতিতালয় গড়ে তুলেছে। নগরীর মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেদের আনাগোনা এই এলাকায় প্রতিনিয়ত লক্ষ্য করা যায়। এতে করে যুবসমাজ বিপথগামী হচ্ছে। পুলিশের দায়িত্ব এসকল ভাসমান পতিতাদের গ্রেফতার নয় উদ্ধার করে সামাজিক প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো। পাশাপাশি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে বিপথগামী তরুণদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। তিনি আরো বলেন, সমাজসেবা অধিদফতরের অধীনে সামাজিক প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কার্যক্রম রয়েছে। তাদের উচিত পুলিশের সহযোগিতায় এসকল মহিলাদের উদ্ধার করে পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া। নতুবা পুণ্যভূমিতে এ ধরনের অবৈধ কর্মকান্ড বন্ধ হবে না। তিনি এ ব্যাপারে প্রশাসনকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান।
সংবাদপত্রে নিউজ হলে পুলিশ অভিযান চালায়। কিছুদিন পর একই অবস্থা। তাই স্থায়ীভাবে এদের এখান থেকে উচ্ছেদ করতে হবে। পাশাপাশি সরকারীভাবে এদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করারও দাবী জানান তিনি। তবে সরকারী দলের জনপ্রতিনিধিদের উদ্যোগী হওয়া জরুরী বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd