বিশ্বনাথে ১২টি রাস্তার পাকাকরণ কাজ বন্ধ : ঠিকাদার উদাও

প্রকাশিত: ২:৩৩ অপরাহ্ণ, জুলাই ২০, ২০১৮

বিশ্বনাথে ১২টি রাস্তার পাকাকরণ কাজ বন্ধ : ঠিকাদার উদাও
মো. আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ :: ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে বিশ্বনাথ উপজেলার জনগুরুত্বপূর্ণ ১২টি গ্রামীণ রাস্তার পাকাকরণ কাজ। এর মধ্যে ৮টি রাস্তার টেন্ডার বাতিল করা হয়েছে। ফলে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকার জনসাধারণকে। আর উন্নয়ন কাজ ব্যাহত হওয়ার কাংখিত উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলাবাসী।
উপজেলা এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে উপজেলার জগদিশপুর-দশপাইকা রাস্তার ৫০০মিটার, কালিগঞ্জ বাজার-মিরেরচর-ছালিয়া রাস্তার ৫০০মিটার ও দূর্যাকাপন-হাবড়া রোড ভায়া আটপাড়া রাস্তার ৫০০মিটার পাকাকরণ কাজের টেন্ডার হয়। টেন্ডারের মাধ্যমে উক্ত ৩টি রাস্তা পাকাকরণ কাজের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘মেমার্স ইউসুফ কন্ট্রাকশন’। এর মধ্যে কালিগঞ্জ বাজার-মিরেরচর-ছালিয়া রাস্তার কাজ শুরু করতে অনুমোদনের দীর্ঘদিন পরও কাপাকরণ কাজ শুরু না হওয়ায় সম্প্রতি টেন্ডার বাতিল করা হয়েছে। অপর দুটি রাস্তার মধ্যে দূর্যাকাপন-হাবড়া রোড ভায়া আটপাড়া রাস্তায় মাটি খনন করে বক্স ও বালু ফিলিং করে এবং কালিগঞ্জ বাজার-মিরেরচর-ছালিয়া রাস্তার কিছু অংশ মাটি খনন করার পর দীর্ঘদিন ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে।
অন্যদিকে ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে টেন্ডার হওয়া রাস্তাগুলো মধ্যে উপজেলা মোট ৭টি রাস্তা পাকাকরণের দায়িত্ব পায় ‘মেঘনা এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ইতিমধ্যে ওই ৭টি রাস্তা পাকাকরণ কাজের টেন্ডার বাতিল করা হয়েছে। বাতিল হওয়া রাস্তাগুলো হলো- উপজেলার বাজিতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রাস্তার ৫০০মিটার, নোয়াগাঁও-রাজাগঞ্জ বাজার রাস্তার ৫০০ মিটার, পাড়–য়া-মীরেরচর রাস্তার ৫০০মিটার, বিশ্বনাথ কলেজ-সরুয়ালা রাস্তার ৫০০মিটার, শ্বাসরাম-নাজির বাজার রাস্তার ৫০০মিটার ও পীরেরবাজার-বরনি জামে মসজিদ রাস্তার ৫০০মিটার। উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের হাজী আব্দুল করিম, জুনাব আলী’সহ স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, নোয়াগাঁও-রাজাগঞ্জ বাজার রাস্তার ৫০০ মিটার কাজের টেন্ডার ও ওয়ার্কঅডার হওয়ার পর ‘মেঘনা এন্টারপ্রাইজ’ এর প্রোপাইটার সোনা মিয়া তার সাইট পরিচালক (সহকারী) আজমান মিয়ার মাধ্যমে নোয়াগাঁও গ্রামবাসীর কাছ থেকে প্রায় ২লাখ টাকা নিয়েছেন এবং রাস্তায় মাটি খনন করে বক্স ও কিছু অংশে বালু ফেলে রাখার পর থেকে ওই ঠিকারদার ও তার সহকারী উদাও রয়েছেন। সম্প্রতি রাস্তার পাকাকরণ কাজের টেন্ডার বাতিল করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটির মাটি খনন করে ফেলে রাখায় এলাকার লোকজন যাতায়াত করতে চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন। একই ভাবে বিশ্বনাথ কলেজ-সরুয়ালা রাস্তার ৫০০মিটার কাজ সম্পন্ন করতে এলাকাবাসীর কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা নিয়ে ‘মেঘনা এন্টারপ্রাইজ’ এর প্রোপাইটার সোনা মিয়া উদাও রয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিশ্বনাথ ইউপি চেয়ারম্যান ছয়ফুল হক।
এছাড়া ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে উপজেলার মুন্সিবাজার-লালটেক রাস্তার ৫০০মিটার ও লামাকাজী বাজার-পাকুয়াখালী ভায়া মির্জাগাঁও রাস্তার ৫০০মিটার পাকাকরণ কাজের টেন্ডার হয়। মুন্সিবাজার-লালটেক রাস্তা পাকাকরণ কাজের দায়িত্ব পায় ‘এ.আর.বি এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি ঠিকারদারী প্রতিষ্ঠান। স্থানীয়রা জানিয়েছেন প্রায় ৩০% কাজ করার পর এই রাস্তায় কাজ বন্ধ রয়েছে। অপর দিকে, লামাকাজী বাজার-পাকুয়াখালী ভায়া মির্জাগাঁও রাস্তা পাকাকরণের দায়িত্ব পায় ‘বাবুল লস্কর’ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। উক্ত রাস্তায়ও ৩০% কাজ করার পর কাজ বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এলজিইডি’র নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সত্বাধিকারী জানান, কাজের সিডিউল-এ যে মূল্য নির্ধারণ করা হয় তা থেকে জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশী হওয়ায় এবং এলজিইডি’র দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অসহযোগীতায় রাস্তার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, অনেক ঠিকাদার পুঁজি কম থাকায় ব্যাংক থেকে লোন উত্তোলন করে কাজ সম্পন্ন করেন। কিন্ত কাজের বিল উঠাতে তাদেরকে সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়। তাই অনেক ঠিকাদার কাজের দায়িত্ব নিয়ে কাজ সম্পন্ন করতে পারেন না।
এব্যাপারে মেঘনা এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী সোনা মিয়া ও মেমার্স ইউসুফ কন্ট্রাকশন’র সত্ত্বাধিকারী ইউসুফ মিয়ার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদেরকে পাওয়া যায়নি।
এব্যাপারে বিশ্বনাথ উপজেলা প্রকৌশলী এম আনোয়ার হোসেন বলেন, ওয়ার্কঅডার হওয়ার দীর্ঘদিনেও নির্মাণ কাজ সম্পন্ন না করায় উপজেলা ৮টি রাস্তার টেন্ডার বাতিল করা হয়েছে। সঠিকভাবে কাজ সম্পন্ন করতে আমাদের সহযোগীতার কমতি ছিলো না। বাতিল হওয়া রাস্তাগুলো যাতে পুনঃরায় টেন্ডার হয় এজন্য আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছি।
রাস্তার কাজ বন্ধ ও টেন্ডার বাতিল এর জন্য কাজের সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও এলজিইডির কর্মকর্তাদের দায়ী করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া। তিনি বলেন, ঠিকাদারদের গাফিলতি ও কর্মকর্তাদের অসহযোগীতার কারণে এসব রাস্তা পাকাকরণ কাজ ব্যাহত হচ্ছে। ধারাবাহিকভাবে কাজ সম্পন্ন করা হলে বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জে-ওসমানীনগরে আরো ব্যাপক উন্নয়ন করা সম্ভব হতো। এলাকার উন্নয়নে তিনি সকলের সহযোগীতা কামনা করেন।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..