সিলেট ৩০শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৮:৪৫ অপরাহ্ণ, জুলাই ২২, ২০১৮
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : পৃথিবীটাই থমকে গিয়েছিল নার্গিসের। জীবনের মূল স্রোত থেকে বাতিল হতে বসেছিলেন। কিন্তু আব্দুল তা হতে দেননি। নার্গিসের যাবতীয় শারীরিক সমস্যার কথা জেনেও তাকে ভালোবাসলেন, ধৈর্য ধরে আগলে রাখলেন তিনি। বিয়ে করলেন দু’জনে। আব্দুলের সাহস ছড়িয়ে গেল নার্গিসের মধ্যেও। তিনিও ঘুরে দাঁড়াতে পারলেন। হঠাৎ পঙ্গুত্ব বরণ করা মানেই যে এক নিমেষে সবকিছু শেষ হয়ে যাওয়া নয়, তার নজির তৈরি করলেন ভারতের বীরভূমের পাড়ুইয়ের নার্গিস আর আব্দুল।
তারা বুঝিয়ে দিলেন একটু ভরসা পেলে আর কাছের মানুষেরা পাশে থাকলে পড়ে গেলেও আবার জীবনে ফিরে আসা যায়।
বছর ছয়েক আগে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় শিরদাঁড়ায় মারাত্মক আঘাত পান নার্গিস। ১৮ দিন কোমায় ছিলেন সদ্য বিবাহিত ১৭ বছরের ওই তরুণী। সেই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তার প্রথম স্বামীর। নার্গিসকে ‘রেফার’ করা হয় কলকাতায়। এখানে ‘বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোলজি’ এবং এসএসকেএম হাসপাতালে সব মিলিয়ে টানা প্রায় তিন বছরের চিকিৎসা। এখনও একা দাঁড়াতে পারেন না।
বসে-বসেই চলাফেরা করতে হয়। ঘরের টুকিটাকি কাজও করেন বসে। বসতে হয় পিছনে বালিশ দিয়ে। মলমূত্র ত্যাগেও সমস্যা রয়েছে। কিন্তু তাকেই সহধর্মিণী করতে এক মুহূর্ত সময় নেননি আব্দুল কুদ্দুস।
গত ৩ জুলাই সুস্থ-সবল শিশুপুত্রের জন্ম দিয়েছেন নার্গিস ওরফে সোমা। সুখের সংসার করছেন তারা।
বীরভূমের কেন্দ্রডাঙাল গ্রামের আব্দুল শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ। ফলে সামাজিক বাধা আসা স্বাভাবিক ছিল। জেনেশুনে প্রতিবন্ধী মেয়েকে কে আর সুস্থ ছেলের ঘরণী বলে মানতে পারে? কিন্তু কোনো বাধাই আব্দুলকে তার সিদ্ধান্ত থেকে টলাতে পারেনি। বিয়ের পরে কোনও আফসোস, অনুশোচনা বা কোনো হীনমন্যতা বোধ কারোরই নেই।
আব্দুল বলেন, ‘একটা মেয়ে টানা কয়েক বছর সুস্থ হতে লড়ছে। ঝড় বয়ে গিয়েছে ওর উপর দিয়ে। তা-ও যখনই ওর সঙ্গে দেখা হয়েছে, তখনই ওকে ঝলমলে দেখেছি। পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার কঠিন লড়াইটা চালাচ্ছে নিঃশব্দে, হাসিমুখে।’
আব্দুল আরো বলেন, ‘শুধু একটা মানুষের দৈহিক সৌন্দর্য দেখে ভালোবাসা হয় না। নার্গিসের মনের জোর, জীবনে ফেরার তাগিদ আর লড়াইয়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম। এই লড়াইয়ে আমি ওর পাশে থাকতে চাই আজীবন।’
আর লাজুক হেসে নার্গিস বলেন, ‘আমার স্বামী বা বাড়ির লোক কখনও এমন আচরণ করেননি, যাতে মনে হয় যে, আমি তাদের বোঝা বা আমাকে নিয়ে ওরা লজ্জিত।’
স্বামীর কথা উঠতেই নার্গিস বললেন, ‘আব্দুল সব জায়গায় আমাকে কোলে করে নিয়ে যায়। কোলে করে চেয়ারে বসায়, গাড়িতে তোলে। ওর কোলে চড়েই একসঙ্গে কেনাকাটা করি, সিনেমা দেখি, আত্মীয়দের বাড়ি যাই। এমনকি, বাড়ির দোতলাতেও ও আমাকে কোলে করে তোলে।’
দুর্ঘটনায় আঘাত পেয়ে পঙ্গু হয়ে যাওয়া মানুষের পুনর্বাসনে বাড়ির লোকের বা কাছের মানুষের এই ভরসা বা পাশে থাকার গুরুত্ব যে অপরিসীম বলে জানালেন নার্গিসের চিকিৎসক, এসএসকেএমের ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ রাজেশ প্রামাণিক।
তার কথায়, ‘পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় ওষুধের থেকে কোনো অংশে এর প্রভাব কম নয়।’
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd