কুলাউড়ায় সন্ধ্যা নামলেই চা বাগানে বসে মদ-জুয়ার আসর

প্রকাশিত: ২:৪৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৪, ২০১৮

কুলাউড়ায় সন্ধ্যা নামলেই চা বাগানে বসে মদ-জুয়ার আসর
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি :: সারা দেশের ন্যায় কুলাউড়ায় মাদক বিরোধী অভিযানে ব্যাপক ধরপাকড় ও মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়। তবুও থামছেনা মাদক ও জুয়া। সন্ধ্যা নামলেই উপজেলার বিভিন্ন চা বাগানে বসে মাদক ও জুয়ার আসর। মাদক সেবনকারীরা এক্ষেত্রে চা বাগানের সেকশনের নির্জন স্থানকে বেচে নেয়। কারণ অনেক সেকশন এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক থাকে না। শহরের মাদক ব্যবসায়ীরা গা ঢাকা দিলেও বিভিন্ন চা বাগানে এখনও মাদকের রমরমা ব্যবসা চলছে।

তবে চা বাগান  ও সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে মাদকের বিস্তার রোধ, মাদক ব্যবসায়ীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ এবং গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধিসহ নানাভাবে পুলিশ ব্যাপক তৎপর রয়েছে বলে জানা গেছে।

কুলাউড়া থানা পুলিশের তথ্যমতে, পুলিশ, বিজিবি ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর গত মে ও জুন মাসে অভিযান চালিয়ে  ৩শ’ ৩২ পিস ইয়াবা, ৯শ’ গ্রাম গাঁজা, ২০ বোতল অফিসার চয়েস মদ, ৫ লিটার দেশি মদ জব্দ করেছে। এসব ঘটনায় ২১ টি মাদক মামলা করা হয়েছে এবং আটক করা হয়েছে ১৫ জন মাদক ব্যবসায়ীকে। এদিকে গত ১০ই জুলাই ক্লিভডন, জয়চণ্ডীর কালীবাড়ীসহ উপজেলার ৮টি মাদক স্পটে অভিযান চালায় জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লোকজন। অভিযানে ক্লিভডন চা-বাগানের ৭ নং লাইন থেকে সাবলু চৌহান নামক এক মাদক বিক্রেতাকে আটক করা হয়। এ সময় তার ঘর থেকে প্রায় ১০০ লিটার চোলাই মদ এবং মদ তৈরির আরও ৫ ড্রাম সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। অপরদিকে বুধবার ১১ই জুলাই রাতে এসআই জহিরুল ইসলামের নেতৃত্বে গাজীপুর বাগানের বালুছড়া লাইনে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় ৫০০ গ্রাম গাঁজাসহ মাখন রায় (৩৬) ও স্বপন গোয়ালা (৩৮) নামের দু’জনকে আটক করা হয়। আটককৃতদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা রুজু করে কোর্টে সোপর্দ করা হয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, কুলাউড়ার বিভিন্ন চা বাগানে দেশীয় মদের পাশাপাশি বিদেশি মদ, গাঁজার কেনা-বেচা চলছে। গাজীপুর চা বাগানের রামবিলাস দুসাদ নানকা মেম্বার ও কালিটি চা বাগানে নরসামলু রাজভরের ঘরে বসে মাদকসেবীদের আসর।
এছাড়া উপজেলার গাজীপুর, মেরিনা, বিজয়া, বরমচাল, ক্লিভডন, দিলদারপুরসহ প্রায় প্রতিটি চা-বাগানের নির্দিষ্ট স্পটে প্রকাশ্যে মদ কেনা-বেচা হয়। চোলাই মদ ও গাঁজাসহ বিভিন্ন রকমের মাদক দ্রব্য হাতের নাগালে পাওয়া যায়। যার ফলে প্রতিদিন সন্ধ্যা নামলেই কুলাউড়া-জুড়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাদকসেবীরা ছুটে যান বাগানের নির্দিষ্ট স্থানগুলোতে। মাদক সেবনের পাশাপাশি মধ্যরাত পর্যন্ত চলে জুয়ার আসর। ক্লিভডন চা-বাগানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির নেতৃত্বে মাদক সেবন চলে এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। স্থানীয়রা জানায়, ক্লিভডনের ঝুনকি জালাইর লাম্বা টিলা, পাট্টার সামনে, দিলদারপুরের পাথর টিলা, বাঁশলাইন, বিজয়ার ১০ নম্বর লাইন, কালিটি চা বাগানের বিভিন্ন স্পটে চলে মাদক ও জুয়ার আসর।
চা বাগানসূত্রে জানা যায়, মূলত বৃটিশ আমলে চা বাগানগুলোতে মদের লাইসেন্স দেয়া হয়। সেই ধারাবাহিকতায় থেকে এখন পর্যন্ত তা কার্যকর আছে। সেইসব মদের দোকানগুলো চা বাগানের লাইসেন্সধারী মাদকসেবীদের চেয়ে শহুরে মদকসেবীদের নিরাপদ আস্তানায় পরিণত হয়েছে। ফলে বেচাকেনা দ্বিগুণ হওয়ায় ব্যবসায়ীরাও এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে রাতারাতি অর্থবিত্তের মালিক হচ্ছেন। তাছাড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের চাতলাপুর সীমান্ত দিয়ে মাদক পাচারের হোতারা প্রশাসনের ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন।
গাজীপুর চা বাগানের মেম্বার রামবিলাস দুসাদ নানকা ও নরসামলু রাজভর তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে অপ্রপচার চালানো হচ্ছে। আমরা এসবের সাথে সম্পৃক্ত নই।
ক্লিভডন চা-বাগানের শ্রমিক সভাপতি মহনলাল গোয়ালা জানান, মাদক ক্রেতা-বিক্রেতাদের যন্ত্রণায় আমরা অতিষ্ঠ। সন্ধ্যা হলেই অচেনা লোকজনের আনাগোনা দেখা যায় বাগান এলাকায়। সপ্তাহের প্রতি বুধবার প্রকাশ্যে চলে মাদক বেচা- কেনা ও জুয়ার আসর। বিষয়টি বাগান ব্যবস্থাপককে অবহিত করেছি এবং একাধিকবার কুলাউড়া থানা প্রশাসনকে জানিয়েছি। তারা অভিযান করবে বলে আশ্বস্ত করলেও আদৌ অভিযান হয়নি।
কুলাউড়া থানার এসআই জহিরুল ইসলাম তালুকদার জানান, প্রকাশ্যে মাদক সেবন ও জুয়ার আসর সম্পর্কে আমাদেরকে কেউ জানায়নি। বাগান এলাকায় অভিযান করতে অনেক সময় সমস্যা হয়। নির্দিষ্ট স্পটের সন্ধান পেলে আমরা অবশ্যই অভিযান করবো।
কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শামীম মুসা জানান, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান আছে। অভিযোগ পেলে কোন ছাড় নেই।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..