সিলেট ৩০শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৬:৩২ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৫, ২০১৮
নিজের নির্বাচনী ইশতেহারে কামরান সর্বপ্রথমেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন শিক্ষাকে। তিনি বলেন- সিলেট নগরকে শতভাগ নিরক্ষরতামুক্ত করতে পদক্ষেপ নেয়া হবে। নগরীতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিশ্বমানের স্কুল, কওমি মাদরাসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করবেন তিনি। আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা, উচ্চশিক্ষা নিশ্চিতকরণে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজিয়েট স্কুল স্থাপন করা হবে। ভোলানন্দ নৈশ বিদ্যালয়কে কলেজে রূপান্তরসহ সিলেট নগরীর মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের জন্য চালু করা হবে শিক্ষাবৃত্তি।
এছাড়াও তিনি একে একে নগরবাসীর অন্যান্য সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে নিজের পরিকল্পনার কথা জানালেন তার নির্বাচনী ইশতেহারের মাধ্যমে।
তিনি বলেন- নগরবাসীর স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে বিশ্বমানের নগর ক্লিনিক স্থাপন করা হবে। প্রতিমাসে ওয়ার্ডভিত্তিক ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পের ব্যবস্থা করা হবে।
কামরানের প্রস্তাবনায় অন্যান্য প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে- নগরীতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতে পুরো নগরে পাতাল বিদ্যুৎলাইন স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হবে। যানজট নিরসনে তৈরি করা হবে লিংক রোড। নগরীর সকল রাস্তা প্রশস্তকরণের ব্যবস্থা করা হবে। গড়ে তোলা হবে একাধিক স্ট্যান্ড। গড়ে তোলা হবে সেন্ট্রাল কার পার্কিং জোন। নগরবাসীর নিরপদ হাঁটা নিশ্চিতে ফুটপাত প্রশস্থকরা হবে। ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। বিশ্বমানের বাসস্ট্যান্ড ও ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। নির্মাণ করা হবে ফ্লাইওভার। আলাদা সাইকেল লেন করা হবে নগরীতে।
সিলেট নগরীর ফুটপাতকে করা হবে হকারমুক্ত। হকারদের পুনর্বাসনে প্রতিষ্ঠা করা হবে চারটি হকার মার্কেট। সাপ্তাহিক বন্ধের দিন রাখা হবে বিশেষ মার্কেট। লালদিঘী মার্কেট ভেঙে নির্মাণ করা হবে বহুতল ভবন। সেখানে পেশাজীবীদের জন্য স্বল্পমূল্যে আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।
জলাবদ্ধতা নিরসেন ছড়া ও খালগুলো উদ্ধার করে খনন করা হবে। ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে নেয়া হবে বিশেষ প্রকল্প। সুরমানদী ড্রেজিংয়ের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকায় স্থবির হয়ে আছে আবাসন ব্যবসা। নতুন বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগ চালুর ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হবে।শতভাগ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুরনো ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট সংস্কার ও নতুন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন করা হবে।
যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নে চালু করা হবে আধুনিক নগর পরিবহন। মহিলাদের জন্য থাকবে পৃথক পরিবহন ব্যবস্থা।
নগরীর পর্যটন স্পটগুলোর মান উন্নয়নের আরোও উদ্যোগ নেয়া হবে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিশেষায়িত স্থাপনা নির্মাণ ও দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হবে।
বর্তমান কারাগারের স্থলে প্রতিষ্ঠা করা হবে আধুনিক নগরপার্ক। নগরীতে বিদ্যামান পার্কগুলো আরোও আধুনিকায়ন ও নতুন বিনোদনকেন্দ্র গড়ে তোলা হবে।
টেমস নদীর দুইপারের আদলে সুরমা নদীর দুই পার আধুনিকায়ন করা হবে। তীর সংরক্ষণ ও সৌন্দর্য বর্ধন করা হবে।
নগরীর খেলার মাঠ, দিঘী আর টিলা যেগুলো এখনও টিকে আছে সেগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চান কামরান। সেই সঙ্গে নতুন মাঠ তৈরির উদ্যোগ নেয়া হবে। সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড বেগবান করতে নির্মাণ করা হবে একটি অত্যাধুনিক সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স।
তরুণ প্রজন্মকে সামাজিক অবক্ষয় থেকে রক্ষা করতে খেলাধূলায় সক্রিয় করা হবে। মেয়র কাপ ফুটবল ও ক্রিকেটসহ চালুকরা হবে অন্যান্য প্রতিযোগিতা।
মানসম্মত কারিগরি শিক্ষা ও উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে নেয়া হবে নতুন উদ্যোগ। সেজন্য প্রতিষ্ঠা করা হবে একাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠান। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণ মেধাবীদের বিশেষ ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করে কাজের সুযোগ করে দেয়া হবে নগরভবনে। শিশু নির্যাতন ও শিশুহত্যা রোধে এবং নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে।
সিলেট উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠিত না-হওয়ায় পরিকল্পিত উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নগরবাসী। হবে হচ্ছে বেড়াজালে আবদ্ধ থাকা ‘সিলেট নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনে উদ্যোগগ্রহণ করা হবে। গ্রিন সিটি গড়তে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে চালানো হবে বৃক্ষরোপন অভিযান। নিরাপত্তা নিশ্চিতে নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে বসানো হবে ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা।
মহাজোট সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার অংশ হিসেবে গৃহীত প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন কামরান। তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারে স্থাপন করা হবে আইসিটি পার্ক। সিলেট নগরকে ডিজিটাল নগর হিসেবে গড়ে তোলা হবে। নগরীর বিভিন্ন এলাকা ও স্থাপনায় ফ্রি ওয়াই-ফাইয়ের ব্যবস্থা করা হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে চালু হবে ই-তথ্য সেবাকেন্দ্র।
প্রতিটি ধর্মীয় উৎসবে নগরভবন থেকে সহযোগিতা করা হবে। মসজিদ, মাদরাসা, কবরস্থান, মন্দির ও অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়সমূহে সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হবে। রমজান মাসে বয়স্ক কোরআন শিক্ষা নতুন করে কোন কর আরোপ করা হবে না নগরবাসীর উপরে। অবকাঠামোগত উন্নয়নে দেয়া হবে যথাযথ ক্ষতিপূরণ। ওয়ার্ডভিত্তিক উন্নয়ন কমিটি গঠনের মাধ্যমে নগরবাসীকে উন্নয়ন কর্মকান্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হবে।
মেধাবী ও অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে। তরুণ প্রজন্মের কর্মসংস্থানের জন্য সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নগরীতে বসবাসরত মুক্তিযোদ্ধাদের সিটি কর্পোরেশন বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হবে। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গঠন করা হবে মুক্তিযুদ্ধ পাঠাগার। সাধারণ ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলরদের উন্নয়ন কর্মকান্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত করা হবে।
জনগণকে সাথে নিয়ে বদর উদ্দিন আহমদ কামরান মাদকমুক্ত সিলেট নগরী গড়ে তোলার প্রত্যয়ও তুলে ধরলেন তার ইশতেহারে। মাদকের অভিশাপ থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
নগরীতে ভেজালমুক্ত খাদ্যসামগ্রী বিক্রয় নিশ্চিত করা হবে।
বিশেষ অর্থনৈতিক জোন ও আধুনিক শিল্পপার্ক স্থাপন করা হবে। শিল্পে বিনোয়োগে প্রবাসীদের আকৃষ্ট করা হবে।
প্রতিবন্ধীদের অধিকার নিশ্চিতে নেয়া হবে কার্যকর পদক্ষেপ। প্রতিবন্ধীদের বিদ্যমান সকল প্রকার নাগরিক সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে।
সবশেষে কামরান আবারোও তাকে নগরীর সেবক হিসেবে নির্বাচিত করার আহ্বান জানান। এসময় তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তার চোখ দিয়ে জলও গড়ায়। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন- ‘এবারের সিটি নির্বাচনই আমার জীবনের শেষ নির্বাচন। তাই শেষবারের মতো আমাকে নগরবাসীর ঋণ শোধ করার সুযোগ দান করুন। ইনশাআল্লাহ স্বাধীনতার প্রতীক নৌকার বিজয় হলে নগরীতে উন্নয়নের জোয়ার বইবে।’
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd