সিলেট ৩০শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৫:৩১ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৮, ২০১৮
স্টাফ রিপোর্টার :: সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারের নিয়ে গত ২২, ২৩, এবং ২৪ জুলাই সুনামগঞ্জ থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিক পত্রিকায় মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করছে। পত্রিকার এক শ্রেণীর সংবাদ কর্মী। তাদের মিথ্যা প্রকাশিত সংবাদের লিখিত প্রতিবাদ জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারের জেল সুপার আবুল কালাম আজাদ।
কারাগার সূত্রে জানা যায়, লোকবল সংকটের মাঝেও সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে কয়েদিদের মেধা ও মনন বিকাশে আধুনিক প্রযুক্তি ও বিনোদনের মাধ্যমে চলছে সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারের কার্যক্রম। জেলার এক মাত্র কয়েদি আসামীদের নিরাপদ স্থান হচ্ছে এই কারাগারটি। স্বধীনতা পরবর্তী দীর্ঘ ৪৪বছর পৌর শহরের জেল রোডের পাশে ২শতাধিক কয়েদির ধারন ক্ষমতার জরার্জীণ ভবনটিতে প্রতি নিয়ত দ্বিগুনের ও বেশী কয়েদিদের গাদাগাদি করে রাখারও নজীর ছিল।
কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে ১৯৯৮ সালে শহরতলীর বারঘর এলাকায় সুনামগঞ্জ-সিলেট রাস্তার পশ্চিম পাশে ১০ একর জায়গার উপর আধুনিক জেলা কারাগার নির্মাণের কাজ শুর হয়। শুরুর মাঝ পথে একবার কয়েক বছর কাজটি বন্ধ থাকে। পরে আবারো ভবন নির্মাণের কাজ শুর হয়। অবশেষে ২০১৫ সালের ৮ জানুয়ারি নতুন জেলা কারাগারের উদ্বোধন করা হয় এবং পুরাতন কারাগার থেকে সকল কয়েদিদের সেখানে স্থানান্তর করা হয়।
কারাগার সূত্রে জানাযায় শুর থেকেই এই কারাগারে জেল সুপারসহ ৮৭টি পদের মধ্যে ৭টি পদ শূণ্য রয়েছে। এর মধ্যে জেল সুপারের ১টি পদে ১ জন কর্মরত, ডেপুটি জেলারের ২টি পদের মধ্যেও ১জন কর্মরত থাকলেও একটি পদ শূণ্য রয়েছে, ডিপ্লোমা ২টি পদের মধ্যে ১টি পদে কর্মরত অন্য একটি পদ শূণ্য রয়েছে, সর্বপ্রধান কারারক্ষী সুবেদারের ১টি পদে কর্মরত আছেন, হিসাব রক্ষক একটি পদে কর্মরত, সহকারী হিসাব রক্ষকের একটি পদ শূণ্য রয়েছে, প্রধান কারারক্ষী ৩টি পদই কর্মরত আছেন, সহকারী কারারক্ষী ৬টি পদেই ৬ জন কর্মরত রয়েছেন, সহকারী মেট্রোন ১টি পদ শূণ্য, কারারক্ষী ৫৫টি পদের মধ্যে সব গুলি পদেই কর্মরত আছেন, মহিলা কারারক্ষী ৮টি পদের মধ্যে সব কটি কর্মরত রয়েছেন, কারাশিক্ষক ১টি পদের মধ্যে সেই পদটি রয়েছে শূণ্য, ড্রাইভার ১জন থাকার কথা থাকলেও সেই পদটি শূণ্য রয়েছে, ভাবুর্চি ২জনের মধ্যে একজন কর্মরত থাকলে ও ১টি পদ শূণ্য রয়েছে।
এ বিষয়ে সরেজমিনে কারা কর্তৃপক্ষ ও কারাগেইটে কারামুক্ত কয়েদির সাথে আলাপ করে এবং খোজঁ নিয়ে জানাযায় কারাগারের গুনজনটা যে শুধুই গুজব ছড়ানো হচ্ছে ভিতরের চিত্রটাই কিন্তু ভিন্ন। তবে কিছু কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাজারের তুলনায় কারাগারে বেশী দাম নেয়া হচ্ছে তার প্রমান পাওয়া গেছে। জেলগেইটে কারামুক্ত কয়েকজন কয়েদির সাথে কথা হয়। তারা হলেন পৌর শহরের হাছন এলাকার মাধক মামলার ২মাস সাজা কেটে আসা নোমান আলীর ছেলে মনসুর আলী, বিশ্ভম্বরপুর উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের রাজ নগর গ্রামের অপর কয়েদি তুতা মিয়ার ছেলে আব্দুস সালাম, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার দর্গাপাশা ইউনিয়নের দর্গাপাশা গ্রামের মাধক মামলার কারা মুক্ত আসামী আমির উদ্দিনের ছেলে নিজাম উদ্দিন, ছাতক উপজেলার বাঘবাড়ি এলাকার মৃত আব্দুল আজিজের ছেলে অনিকমিয়া সহ আরো কয়েকজন।
তারা জানান জেল সুপার মো: আবুল কালাম আজাদ কারাগারে যোগদানের পর থেকে তিনি ও ম্যাট মো: মিজানুর রহমান নানুকে নিয়ে কারাগারে কারাবন্দিদের মরন নাশক মাধক সেবনের কুফল ও তাদের জীবন মানের উন্নয়নের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে কারাগারের অভ্যন্তরে ব্যাটমিন্টন খেলা, ক্রিকেট,ধাবা, বলিবলসহ বিনোদনের জন্য সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া হয়েছে। পাশপাশি কয়েদিদের বিভিন্ন প্রশিক্ষনের মাধ্যমে তাদের ট্রেনিং করা হয়ে থাকে। তারা বলেন,ঐ সমস্ত ট্রেনিংয়ের ফলে অনেক কারাবন্দী কয়েদিদের মনের অনেকটা পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। তারাও টেনিং নিয়ে কারামুক্ত হয় বাড়ি যাচ্ছেন তারা মাদক সেবন করতেন এক সময় এখন তারা নিজেদেরকে সৎভাবে কর্ম করে পরিবার পরিচজন নিয়ে জীবনযাপন করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। প্রতিদিন নতুন নতুন আসামীরা কারাাগরে প্রবেশের সাথে সাথেই ম্যাট নানু নাকি সিট বাণিজ্য,খাবারে বাণিজ্য করে থাকেন এমন প্রশ্নের জবাবে তারা জানান মিজানুর রহমান নানু ২০০২সালে একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী হিসাবে তিনি দীর্ঘ ১৬বছর ধরে সুনামগঞ্জ সিলেট সহ দেশের বিভিন্ন কারাগারে কারাভোগ শেষে আবারো তাকে সুনামগঞ্জ কারাগারে পাঠানো হয়। কারাকর্তৃপক্ষ নানুকে ম্যাটের দায়িত্ব দেওয়ার পর থেকে কারাগারের ভিতরে অনিময় আর র্দূনীতি নেই বললেই চলে। তিনি প্রতিদিন সাড়ে ৪ শত কয়েদির ধারন ক্ষমতার জায়গাতে আনুমানিক ৭/৮শতাধিক কয়েদির দেখাশুনা করেন, উন্নত মানের খাবার পরিবেশন, সুপ্রিয় পানিও জলের ব্যবস্থা করা এবং প্রতিরাতে কয়েদিরা ঠিক মতো ঘুমাচ্ছে কিনা এবং কোন কয়েদি অসুস্থ হলে জেল কৃর্তপক্ষের মাধ্যমে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। মিজানুর রহমান নানু একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসাবে তার চলাফেরা ও ব্যবহারে তিনি ইতিমধ্যে সকল কয়েদিদের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছেন।
মিজানুর রহমান সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারের ভিতরে বন্ধিদের স্বাবাাভক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সংস্কিতিক চর্চা চালিয়ে যান। যাতে তারা বের হয়ে আর কোন ধরনের অপরাধে জড়িত না হয়। সম্প্রতি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বাংলাদেশের প্রধান বিচার প্রতি সহ উপস্থিত সকলের সামনে সংগিত পরিবেশন করে আইজি প্রিজনের কাছ থেকে পুরুস্কার লাভ করেন মিজানুর রহমান নানু দেওয়ান।
সম্প্রতি শিলং তীর নামক(জুয়া) খেলার অপরাধে কয়েকজনকে তীর খেলার গডফাদারকে সদর থানার দুটি মামলার জি,আর নং২৩/১৮,অন্য একটি ১৪/১৮ আসামী হিসাবে দুটি মামলায় গত ৩০জানুয়ারী পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়। কারাগারে যাওয়ার পর মো. সামারুল ইসলাম শাম কারা অম্ভন্তরে থাকা জাবত জীবন দন্ড পাপ্ত মতিন নামের ওপর এক কয়েদির সাথে তাদের পরিচয় হয়। তারা নিজেদেরকে সরকার দলীয় নেতা দাবী করে কারাগারের ভিতরে নিজেকে দাপটের সাথে প্রচার করতে থাকেন। তারা কয়েদি মতিনকে ব্যবহার করে কারাগারের ভিতরে মরন নাশক ৫/৬পিস করে ইয়াবা, হিরোইন ও গাঁজা প্রবেশ করায়। বিষয়টি নানু জানতে পেরে এর প্রতিবাদ করলে সরকারী দলীয় নামধারী ঐ সমস্ত তীর খেলার জনক তারা নিজেদের শ্রমিকলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে বলে যে তুমি এই কারাগারে ম্যাটের দায়িত্বে থাকতে হলে প্রতি মাসে তাদেরকে ৫০হাজার টাকা চাদাঁ দিতে হবে অন্যতায় কারাগার থেকে আমরা বের হয়ে ১সপ্তাহের মধ্যে তোমাকে সিলেট কারাগারে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা হবে বলে হুশিয়ার করেন মুক্ত কয়েদিরা জানান। তারা আরো বলেন গত ৩দিন ধরে সরকার দলীয় নামধারী নেতারা কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করে কারা কর্তৃপক্ষ ও নানুকে নিয়ে স্থানীয় একটি পত্রিকায় ভিত্তিহীন ও কাল্পনিক সংবাদ পরিবেশন করছেন। প্রকৃত পক্ষে আগেকার তুলনায় বর্তমান কারাগারে তুলনামুলক ভাবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বিভিন্ন খেলা ধুলার মাধ্যমে কয়েদিদের মন মানসিকতার অনেক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে বলেও তারা জানান।
এ ব্যাপারে জেল সুপার মো: আবুল কালাম আজাদের সাথে কারাগার ও নানুকে নিয়ে একটি স্থানীয় পত্রিকায় অনিয়ম ও র্দূনীতি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন,এ ধরনের কোন ঘটনা কারাগারের ভিতরে হয়নি। তথ্য প্রযুক্তি আইনে সংবাদ প্রকাশের অধিকার একজন সংবাদকর্মীর রাইট কিন্তু সংবাদ তথ্যবহুল হলে যেমন সর্বক্ষেত্রে ভাল হয় এবং সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু ঢালওভাবে এমন সংবাদ প্রচার করা ঠিক নয় যাতে করে কারগারের প্রতি সাধারন মানষের অনাস্থা সৃষ্টি হয়। তিনি আরো বলেন যে যে প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারী হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে দায়িত্বভার গ্রহন করেন তার সেই প্রতিষ্ঠানের প্রতি মমত্ববোধ বেড়ে যায়। তাই এই কারাগারের ভিতরে মাধক ঢুকানোর প্রশ্নই আসেনা বরং কয়েদিদের মন মানসিকতার পরিবর্তণের লক্ষ্যে কারাাগরে ভিতরে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষন,খেলাধূলা ও বিনোদনের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। যেন তারা কারামুক্তির পর অপরাধ জগত থেকে ফিরে স্বাভাবিকভাবে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে পরিবার পরিজন নিয়ে চলতে পারেন সেই ব্যবস্থাটাই করা হচ্ছে। তিনি বলেন প্রতিদিন সকালে একজন কয়েদীকে ৮৭.৪৮ গ্রাম দিয়ে একটি রুটি ও ১৪.৫৮ গ্রাম আখেড় গুড় দিয়ে নাস্তা দেয়া হয় এবং দুপুর ও রাতের খাবারে ২ শত ৬০ গ্রাম পিওর চাল ,৩৬ গ্রাম মাছ দিয়ে খাবার দেয়া হয় এবং প্রতিসপ্তাহে মাছ মাংস তো আছেই।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd