সিলেট ৩০শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১১:২০ অপরাহ্ণ, জুলাই ৩১, ২০১৮
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি :: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে কলেজ ছাত্রীকে উত্যক্ত করা, ছাত্রীকে জড়িয়ে ধরে ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করার আসামী ধরতে গেলে আসামী পক্ষের হামলায় হাতকড়া ভেঙ্গে দুই এএসআই আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় নারী নির্যাতন আইন ও পুলিশের উপর হামলার অভিযোগে কমলগঞ্জ থানায় দুটি পৃথক মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ২টায় শমশেরনগর ইউনিয়নের ভাদাইর দেউল গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটে।
শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ি সূত্রে জানা যায়, শমশেরনগর সুজা মেমোরিয়াল কলেজ থেকে এ বছর উত্তীর্ণ ছাত্রী (সাদিয়া আক্তার)-কে গত এক বছর ধরে উত্যক্ত করছিল ভাদাইর দেউল গ্রামের কসাই হারুন মিয়া ওরফে লুন্দুর মিয়ার ছেলে রাহেল আহমদ (২০)। রাহেলের উৎপাতে ছাত্রীটি ঠিকমত কলেজে যাতায়াত করতেও পারতো না। বছর একদিন ছাত্রীটি কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে বখাটে রাহেল তাকে জড়িয়ে ধরে এক বন্ধুর সহায়তায় ভিডিও ধারণ করেছিল। ধারণকৃত ভিডিওটি আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে সে। এ ঘটনায় ছাত্রীর মা হামিদা বেগম (৪৫) কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগও করেছিলেন।
কিছু দিন উৎপাত বন্ধ থাকার পর ৩১ জুলাই মঙ্গলবার দুপুরে আবারও বখাটে রাহেল ছাত্রীকে একা পেয়ে তার পরনের ওড়না টেনে নিয়ে টানা হেছড়া করার চেষ্টা করে। ঘটনাটি জানার পর শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক (তদন্ত) অরুপ কুমার চৌধুরীর নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল অভিযুক্ত রাহলেকে ধরতে তার বাড়ি যায়। বেলা ২টায় বখাটে রাহেলের বাসায় গিয়ে তাকে আটক করে হাতকড়া পরানো হয়। এসময় তার বাবা কসাই হারুন মিয়া ওরফে লুন্দুর মিয়া, তার দুই মেয়ে ও দুই স্ত্রী পুলিশের উপর হামলা চালায়। হামলায় শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই তৈয়ব আলী ও এএসআই শাহিদুল ইসলাম আহত হয়েছেন। আসামী পক্ষের লাঠির আঘাতে হাতকড়াটিও ভেঙ্গে যায়।
এ ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক ও কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: মোকতাদির হোসেন পিপিএম শমশেরনগর এসে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে বসে বাদিনী ও তার মেয়ে কলেজ ছাত্রীর বক্তব্য শুনেন। পাশাপাশি আটক আসামী রাহেল আহমদ ও তার বাবা কসাই হারুন মিয়ার বক্তব্য শুনেন। এসময় কোন প্রকার অনুতপ্ত না হয়ে বাবাসহ আসামী রাহেল উত্যপ্ত বাক্য বিনিময় করে। পরে বাবাসহ আসামীকে কমলগঞ্জ থানা হাজতে নিয়ে যাওয়া হয়।
শমশেরনগর পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক (তদন্ত) অরুপ কুমার চৌধুরী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আসামী পক্ষের হামলায় আহত দুই এএসআইকে চিকিৎসার জন্য কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। আর এ ঘটনায় নির্যাতিতা ছাত্রীর মা হামিদা বেগম বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করছেন। আর পুলিশ বাদী হয়ে সরকারী কাজে বাঁধাসহ পুলিশের উপর হামলা ও হাতকড়া ভাঙ্গার দায়ে আরও একটি মামলা করা করা হচ্ছে।
নারী উন্নয়নে জনপ্রশাসন পদকে ভূষিত কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, গত এক বছরে প্রাথমিক পর্যায়ে অভিযুক্ত রাহেলের বাবা কসাই হারুন মিয়াকে শাসিয়ে ছাত্রীকে উত্যক্ত না করতে কয়েক দফা নিষেধ করেছিলেন। তার পরও রাহেল আহমদ তার বাবার আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে ছাত্রীকে উত্যক্তসহ পুলিশের উপর হামলা করেছে। তাই এখন আর ক্ষমা করার কোন সুযোগ নেই বলেই দুটি মামলা করতে হচ্ছে।
কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: মোকতাদির হোসেন পিপিএমও ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আটক বাবা ও বখাটে ছেলেকে এখন দুটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে মৌলভীবাজার কারাগারে প্রেরণ করা হবে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd