সুনামগঞ্জে লাশ দাফনে-শেষকৃত্যানুষ্ঠানেও বাঁধা!

প্রকাশিত: ৩:২২ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১, ২০১৮

সুনামগঞ্জে লাশ দাফনে-শেষকৃত্যানুষ্ঠানেও বাঁধা!

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :: সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে জায়গা দখলের আগাম প্রস্তুতি হিসাবে ’ ১২ গ্রামের পঞ্চায়েতি বকরস্থানে লাশ দাফনে ও শশ্মানঘাট-কালী মন্দিরের জায়গায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের মৃতদেহের শেষকৃতানুষ্ঠানেও অযাতিত ভাবে বাঁধা প্রদানের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ভুমিখেঁকো এক প্রভাবশালী পরিবারের লোকজনের বিরুদ্ধে।’

এদিকে এ কারনে বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী উপজেলার শ্রীপুর উওর ইউনিয়নের বানিয়াগাঁও (দুধের আউডা) গ্রামের মৃত আবদুর রাজ্জাকের ছেলে আবদুর রশীদ ওরফে কাঁচা মিয়াকে দেয়া খাঁসজমি বন্দোবস্ত জনস্বার্থে বাতিলের দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত অভিযোগ করেছেন।’

অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার বানিয়াগাঁও (দুধের আউডা) গ্রামের চতুর আবদুর রশীদ ওরফে কাঁচা মিয়া নিজের বসতবাড়ি ও হাওরের ফসলী জমি থাকার পরও তথ্য গোপন করে শ্রীপুর ডিহিভাটি (ভুমি) অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাকে মোটা অংকের উৎকোচ দিয়ে ভুমিহীন সেজে ১৯৮৮-৮৯ সালে বানিয়াগাঁও মৌজার ১নং খতিয়ানের, জেল এল নং ৫৮, ১৩নং দাগে থাকা প্রায় কয়েক লাখ টাকা মুল্যের ১ একর ৩৯ শতক খাঁস জমি বাগিয়ে নেন। একই দাগে একই খতিয়ানে ৮ একর ৪৫ শতক কবরস্থান ও শশ্মানঘাট -কালী মন্দিরের জায়গা ক্রমান্বয়ে দখলে নিতে তারই সহোদর বজলু রশীদকে ফের ভুঁয়া ভমিহীন সাজিয়ে আরো ২ একর খাঁস জমি বন্দোবস্থ আনার পায়তারা শুরু করেন।’

একই মৌজার একই দাগে ২০০৫ সালে এলাকার ১২ গ্রামের মুসলামানদের কবর স্থান হিসাবে ব্যবহারের জন্য ৫ একর ১৭ শতাংশ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের শ্শানঘাট হিসাবে শেষকৃত্যানুষ্টান- কালিমন্দির স্থাপনের জন্য ৩ একর ২৮ শতক খাঁস ভুমি বন্দোবস্থ দেয়া হয়।’

উপজেলার দুধের আউটা, কান্দাহাটি, বানিয়াগাঁও, বালিয়াঘাট, বালিয়াঘাট সড়কপাড়া, তৈলীগাঁও, বুড়াঘাট, জামালপুর, পাল জামালপুর, নববাবপুর, মদনপুর, বাদারগড় সহ ১২ গ্রামের মুসলিম ও হিন্দু উভয় সম্পদায়ের লোকজন খাঁস পতিত জমি হিসাবে দু’ যুগেরও বেশী সময় ধরে একাংশে মুসলামানদের কবরস্থান ও অপরাংশে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের মৃতদেহ শেষকৃত্যানুষ্ঠান সম্পপ্ন করে আসছেন। পরবর্তীতে সরকার সেই জমি বন্দোবস্থ দিলেও রশীদ-বজলু দু’সহোদর ক্রমেই কবরস্থান ও শশ্নানঘাট- কালি মন্দিরের জায়গা পুরোপুরী দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেন।’

উপজেলার দুধের আউডা গ্রামের আবদুল আহাদ অভিযোগ করে বলেন, এলাকার চারদিকে হাওর তাই ১২ গ্রামের মুসলিম পরিবারের কেউ মারা গেলে কবর খুঁড়তে পঞ্চায়েতি কবরস্থানে গেলে প্রথমেই রশীদ পরিবারের লোকজন বাঁধা হয়ে দাড়ান। তিনি আরো বলেন, ওই পরিবারের চাঁপে হয় নতুন করে কবর খুঁড়তে হয় না হয় কবর দেয়ার কয়দিন পর দেখা যায় কবরের আর কোন চিহ্নই নেই।’

উপজেলার বানিয়াগাঁও গ্রামের রঞ্জু সেন বললেন, সরকার শশ্মানঘাট -কালিমন্দিরের জন্য খাঁসজমি বস্তোবস্থ দিলেও যখনই এলাকার কোন মৃত দেহ শশ্মানঘাটে শেষকৃত্যানুষ্ঠানের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় তখন নিজের জায়গা দাবি করে রশীদ মিয়া ও তার পরিবারের লোকজন বাঁধা হয়ে দাড়ান এ অবস্থাই চলছে গত কয়েকবছর ধরে।’

২০০৯ সালের ২২ ফেব্রæয়ারী কয়েক লাখ টাকার ফসলী জমি রেজিষ্ট্রি মুলে বিক্রয় করেন রশীদ দুধের আউটার শফিকুল ইসলামে নিকট। বানিয়াগাঁও গ্রামে নিজের পৈতৃক বসতবাড়ি, বানিয়াগাঁও মৌজায় ৬০ শতক ফসলী জমি ছাড়াও পরিবারের লোকজন কয়েকমাস পুর্বে স্থানীয় কয়লা ব্যবসায়ীর নিকট ৫ থেকে ৬ কেয়ার ( ৩০ শতাংশ ১ কেয়ার) জমি বিক্রি করেছেন ৭ থেকে ৮ লাখ টাকার বিনিময়ে।’ আবদুর রশীদ যে ভুমিহীন নন তারও প্রমাণ এভাবেই জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের নিকট অভিযোগে তুলে ধরেছেন ১২ গ্রামবাসী। এলাকাবাসীর প্রশ্ন এত কিছু থাকার পরও রশীদ- বজলু ভমিহীন সাজলেন কী করে?

উপজেলার দুধের আউডা সার্বজনীন শশ্মানঘাট কালী মন্দিরের সভাপতি নিধান পাল অভিযোগ করে বলেন, রশীদ ও তার ভাই বজলু শশ্মানঘাট -কালি মন্দিরের জায়গায় ধর্মীয় উৎসব পালনে এমনকি শেকৃত্যানুষ্টানেও বাধা প্রদান করে আসছেন। এ জায়গা দখলে জন্য বেশ কিছুদিন পুর্বে কালী মন্দির মুর্তি সহ ভাংচুর করে তারা নদীতে ফেলে দেয়ায় দু’সহোদর সহ ওই পরিবারের কয়েকজনের বিরুদ্ধে চলতি বছরের ২৭ মে থানায় মামলা দায়ের করেছি।
উপজেলার ১২ গ্রামের পঞ্চায়েতি কবরস্থান ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি দুধের আউডা গ্রামের বাসিন্দা আসাদ আলী বুধবার জানান, সরকারিভাবে বন্দোবস্থ প্রাপ্ত পঞ্চায়েতি কবরস্থানে এলাকার লোকজন কেউ মারা গেলে দাফন করতে গেলেই রশীদ-বজলু গত কয়েকবছর ধরে বাধা প্রদান করে আসছেন।’ অতীতে কবর দেয়া হয়েছে এমন অনেকের-ই কবরের চিহ্নটুকু এখন আর নেই, ওই দু’সহোদর কৌশলে কবরের চিহ্ন সড়িয়ে ফসলী জমি তৈরী করেছেন।’

সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সভাপতি আলহাজ্ব আবুল হোসেন খাঁন জানান, ওই দু’সহোদর ও তাদের পরিবারের লোকজন নানা সময়ে কবর দিতে বাঁধা প্রদান এমনকি শেষকৃত্যানুষ্ঠানে বাঁধা প্রদান করে আসছে কেবল জায়গা দখলের অসৎ উদ্দেশ্যে।’

উপজেলার বানিয়াগাঁও দুধের আউডা গ্রামের অভিযুক্ত আবদুর রশীদ তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বললেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিক্তিহীন, আমি বা আমার পরিবারের লোকজন কোনদিন কবর দিতে কিংবা শেষকৃত্যানুষ্ঠানে বাঁধা দেইনি।’

তাহিরপুর থানার ওসি শ্রী নন্দন কান্তি ধরের নিকট এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বুধবার বলেন,রশীদ- বজলুর বিরুদ্ধে থানায় মামলার তদন্ত কাজ অব্যাহত রয়েছে।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা পুর্ণেন্দু দেব অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করে বললেন, যেহেতু মৃত লোকজনকে কবর দেয়া ও শেষকৃত্যানুষ্টানে বাঁধা প্রদানের অভিযোগ উঠেছে সেক্ষেত্রে তদন্ত করে জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবহিত করে প্রয়োজনে রশীদের নামে খাঁস জমির বন্দোবস্ত জনস্বার্থে বাতিলের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..