সিলেট ৩০শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৩:৫১ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৮, ২০১৮
ক্রাইম ডেস্ক :: পটুয়াখালীর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাঙ্গাবালী থানার ওসির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ ব্যবসায়ীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগীরা পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন করেও রেহাই পায়নি। চাঁদা থেকে রক্ষা পায়নি প্রতিবন্ধী বৃদ্ধরাও। এ ঘটনায় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উদ্বেগ জানালেও পুরো বিষয়টি অস্বীকার করছেন ওসি। আর সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস জেলা পুলিশ সুপারের।
সরেজমিন জানা গেছে, চলতি বছরের মার্চ মাসে ওসির স্নেহভাজন দ্বারা জলিলের কাছে জমি ক্রয়ের প্রস্তাব দেয় রাঙ্গাবালী থানার মিলন কৃষ্ণ মিত্র। এতে জলিল রাজি না হলে ১৯ মার্চ জলিলকে থানায় নিয়ে আটকে রাখা হয়।
পরে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা মিলে জলিলকে মুক্ত করেন। থানা থেকে মুক্ত হওয়ার ঘটনায়ও ওসির সঙ্গে এক লাখ টাকার দেন দরবার চলে। পরে জলিল ২২ মার্চ ওই ঘটনা উল্লেখ করে পটুয়াখালী পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
ওই অভিযোগের তদন্ত দেয়া হয় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিনকে। তদন্তকারী পুলিশ সুপার জলিল ও ওসির দ্বন্দ্বের বিষয়টি মীমাংসাও করে। কিন্তু ওসির বিরুদ্ধে এসপির কাছে অভিযোগ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে ৩০ মে একটি মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে জনৈক খালেদ হোসেনকে বাদী করে পটুয়াখালী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আদালতে একটি মামলা করানো হয়।
আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলেন। রাঙ্গাবালী থানার এসআই জাকির হোসেন ঘটনাস্থলে না গিয়ে মামলার সঙ্গে তালমিলিয়ে জলিলসহ ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে একটি ভৌতিক প্রতিবেদন দাখিল করেন।
পুলিশের ওই প্রতিবেদনে উল্লিখিত বিষয় নিয়ে স্থানীয় অন্তত শতাধিক ব্যবসায়ী জানান, মামলায় বাদী যে বিষয়বস্তু উল্লেখ করেছেন তা আদৌ সত্য নয়। এমনকি মামলার বাদী খালেদ হোসেনকে দীর্ঘ দুই বছরেও রাঙ্গাবালী উপজেলায় দেখা যায়নি। মামলার বাদীর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
উপজেলার ফুলতলা বাজারের ব্যবসায়ী আবুল হোসেন মৃধা, ডাক্তার রুহুল আমিন, গার্মেন্টস ব্যবসায়ী আবদুল জলিল, মেসিনারিজ ব্যবসায়ী লিটনসহ একাধিক ব্যবসায়ী জানান, যে জমি নিয়ে আদালতে মামলা হয়েছে ওই জমি নির্মাণাধীন অবকাঠামোতে তারা এক থেকে দেড় বছর ধরে ভাড়াটিয়া হিসেবে আছেন।
২৪ জুন এরকম কোনো ঘটনা সেখানে ঘটেনি। তারা দীর্ঘদিন থেকে ওই ভবনে ভাড়া আছেন এই মর্মে কয়েকটি নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তির ছায়ালিপিও তারা উপস্থাপন করেন অনুসন্ধানকালে।
স্থানীয়রা আরও জানান, ওসির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে জলিলকে হয়রানি করতে এই মিথ্যা মামলা ঠুকে দেয়া হয়েছে। পুলিশের প্রতিবেদনের (২) হারুন বলেন, এ ঘটনা মিথ্যা ও ৫ নং সাক্ষী মিজানুর রহমান জানান, আমি ঢাকায় বসবাস করি। আমাকে কিসের সাক্ষী মানা হয়েছে তা আমি জানি না।
এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, গহিনখালী বাজারের নতুন ব্রিজ সংলগ্ন বাজারের ব্যবসায়ী প্রতিবন্ধী বৃদ্ধ ইসমাইল হোসেন তালুকদারের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে ওসি তার কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
একইভাবে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে খোকন নামে এক যুবকের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা জসিম মাতবরকে বিনা কারণে আটক করে ১০ হাজার টাকা, পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে নয়াভাঙনি কওমি মাদ্রাসার এক শিক্ষকের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা, জমি-সংক্রান্তের ঘটনায় জুয়েল প্যাদার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা, একই ঘটনায় বাবু হাওলাদার নামে এক ব্যক্তি কাছ থেকে রফাদফা করে ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলা প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর রাঙ্গাবালীতে এই প্রথম ওসি উপজেলাবাসীর কাছে আতঙ্ক হয়ে উঠেছে। তবে এসব ঘটনায় ওসি মিলন কৃষ্ণ মিত্র জানান, কাজ করতে গেলে অভিযোগ তো থাকবেই। তবে ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
ঘুষ নেয়ার বিষয়ে তথ্য প্রমাণ রয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি পরে ফোনে কথা হবে বলে জানান। পটুয়াখালী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মইনুল হাসান জানান, এ ধরনের অভিযোগ পেলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। অভিযোগের সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd