স্টাফ রিপোর্টার :: কয়েকদিন ধরে সিলেটে ভ্যাপসা ভাবটা যেন বেড়েই চলেছে। এতে করে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে নগরীর জনজীবন। ভ্যাপসা গরমের কারণে সবচেয়ে বিপদে আছেন খেটে খাওয়া মানুষ। সারাদিন রোদে পুড়ে রাস্তাঘাটেই যাদের ঠাঁই হয় দিন শেষে তাদের দুর্দশার শেষ নেই। এর মধ্যে গতকাল ছিলো সারাদেশের মধ্যে সিলেটে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনি¤œ ছিলো ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুই মাস আগে একইভাবে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা প্রবাহিত হয়েছে সিলেটের উপর দিয়ে। মাছুদিঘীর পাড় এলাকার বাসিন্দা জাফর খান বলেন, গরমে রাস্তায় বের হওয়াই অসহ্যকর ছিলো। সারাদিন ভ্যাপসা গরমে ফ্যানের মধ্যেও গরম লেগেছে। প্রতিনিয়ত ঘাম বের হয়েছে শরীর থেকে। তবে গতকালের গরমে বাসায় থাকা তার মায়ের অবস্থা আরো খারাপ হয়ে পড়ে বলে তিনি জানিয়েছেন। নগরীর বন্দরবাজার এলাকায় বাজার করতে আসা রব্বানী বলেন, গত বছর এ সময়ে যে তাপমাত্রা ছিল সে তুলনায় এবছর বেশি মনে হচ্ছে। যতটুকু হবার কথা ততটুকু বৃষ্টিপাত না হওয়ায় আবহাওয়া উষ্ণ হয়ে গেছে। যার ফলে বেলা বাড়ার সাথে সাথে ভ্যাপসা গরমটাও বেড়ে যাচ্ছে। রিকশাচালক বৃদ্ধ হানিফ আলী বলেন, গরমে সারাদিন রিকশা নিয়ে খুব কষ্ট হচ্ছে। প্যাসেঞ্জারও তেমন বের হচ্ছে না। পেটে ভাত থাকলে এই রোদে বের হতাম না। রিকসা চালানো দূরের কথা গরমের কারণে শরীরে ঠিকমতো শক্তি পাচ্ছি না। এদিকে গরমে রাস্তায়, ফুটপাতে ডাব, আইসক্রীমসহ বিভিন্ন শরবত জাতীয় খাবার বিক্রি হয়েছে বেশী। জিন্দাবাজারে ডাব বিক্রেতা মো. আলম বলেন, ইদানীং গরমটা বেশি হওয়ায় লোকজন পিপাসা মেটাতে ডাব বেশি খাচ্ছেন। সারা দিনে এমনকি সন্ধ্যার পরও ডাব বিক্রি হয়। প্রতিটি ডাব ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে গতকাল শনিবার গরম বেশী হওয়ায় বিকেলের আগেই তার সব ডাব বিক্রি হয়ে যায়। তিনি বলেন, গরমে ডাবের পানি খুব উপকারী। অনেকে বাড়ির জন্য তিনটা চারটা করে নিয়ে যায়। গতকালের সর্বোচ্চ গরমে মানুষের মতো অতিষ্ঠ ছিলো পশু পাখিরাও। কাজিরবাজারের পশু হাটে অনেক গরুর শরীর বরফ দিয়ে বার বার শীতল রাখার চেষ্টা করেছেন ব্যবসায়ীরা। গরু বিক্রেতা খোকন জানান, গরম বেশী পড়ায় তার সবগুলো গরু ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তাই, বরফের পাশাপাশি তিনি ভেজা গামছা দিয়ে গরুর শরীর সব সময় ভিজিয়ে রেখেছেন। একইভাবে গরুর শরীরে পানি ঢালতে দেখা গেছে অনেক ব্যবসায়ীকে।
এদিকে, আগামী ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় উত্তর বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। মওসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় বিরাজ করছে। লঘুচাপের প্রভাবে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে। অন্যদিকে, আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বরিশাল, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায়, রংপুর, রাজশাহী খুলনা ও ময়মনসিংহ বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে। আবহাওয়া চিত্রের সংক্ষিপ্তসারে বলা হয়, ভারতের মধ্যপ্রদেশ ও তৎলগ্ন গুজরাট ও উত্তর মধ্য মহারাষ্ট্রে অবস্থানরত স্থল নি¤œচাপটি দুর্বল হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। তা সর্বশেষে মৌসুমী অক্ষের সাথে মিলিত হয়েছে। মৌসুমী অক্ষের বর্ধিতাংশ ভারতের রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, বিহার ও গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় উত্তর বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। মওসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় বিরাজ করছে।
Sharing is caring!