গোলাপগঞ্জে সড়ক দূর্ঘটনায় দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল

প্রকাশিত: ৯:২৬ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২০, ২০১৮

গোলাপগঞ্জে সড়ক দূর্ঘটনায় দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল

ফাহাদ হোসাইন, গোলাপগঞ্জ : পূর্ব সিলেটের সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে সিলেট-জকিগঞ্জ রোড। এই সড়কটি যাত্রীদের কাছে মুত্যু কুপে পরিণত হয়েছে। প্রতিটি যানবাহন যেন সর্বোচ্চ গতিতে ধেয়ে আসা মৃত্যুদূত। চোখের পলকে ঘটে যায় দুর্ঘটনা ও মুত্যু। যে কারণে এই রোডে সড়ক দূর্ঘটনায় দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। এ মিছিলে শামিল হচ্ছে সব শ্রেণী পেশা, বয়সের মানুষ। এ দুর্ঘটনায় হারাতে হচ্ছে কাছের আপনজনদের। অকালে অস্বাভাবিক মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হচ্ছে অনককেই। স্বজন হারানোর আর্তনাদে ভারি হচ্ছে বাতাস। পঙ্গুত্বের অভিশাপতো আছেই। পরিবারের নেমে আসে আর্থিক কষ্টও। আইনের যথেষ্ট প্রয়োগ না থাকা এবং অসচেতনতা ও অদক্ষ চালকের কারণেই গোলাপগঞ্জ তথা সিলেট জকিগঞ্জ রোড এত ভয়ংকর। চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালানোর জন্যই এ রোডে অকালে ঝরছে অনেক তাজা প্রাণ। একটি দূর্ঘটনার রক্তের দাগ শুকানোর আগেই আরেকটি প্রাণের বিনিময়ে রক্তে লাল হয় এ রোডের কোন না কোন স্থান।

অনুসন্ধানে জানা যায় সিলেট জকিগঞ্জ রোডের মূলত গোলাপগঞ্জ উপজেলার পাঁচমাইল এলাকা থেকে-রানাপিং বাজার পর্যন্ত কোন না কোন এলাকায় দূর্ঘটনা ঘটে সবচেয়ে বেশী। গোলাপগঞ্জ উপজেলার এ এলাকার ভিতরে এ বছরের প্রথম থেকেই বেশ কয়েকটা বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটেছে যার ক্ষত এখনো মুছে যায়নি। এ বছরের শুরুর দিকে কোন দূর্ঘটনা এ রোডে না হলেও বছরের তৃতীয় মাসের শেষের দিকে দূর্ঘটনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সিলেটে থেকে ছেড়ে যাওয়া যাত্রীবাহী বাসটি বিয়ানীবাজারের বারইগ্রাম আসার পথে গোলাপগঞ্জ উপজেলার দাঁড়িপাতন এলাকার পৌঁছালে আরেকটি যাত্রীবাহী বাসকে ড্রাইভার মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে ওভারটেকিং করতে গিয়ে সড়কের পাশে ছিটকে পড়ে উল্টে যায়। এসময় বাসে থাকা যাত্রীরা বাসের নিচে চাপা পড়েন। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও স্থানীয়দের সহায়তায় সব যাত্রীদের উদ্ধার করলেও বাসে থাকা হেল্পার নিহত হয়। তার নাম পরিচয় জানা যায়নি। এ ঘটনায় প্রায় ৪০ জন যাত্রী আহত হন।

এর পরের মাসের শেষ দিকে ২৯ এপ্রিল রোববার সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের হেতিমগঞ্জ নাশাগঞ্জ নামক স্থানে যাত্রীবাহী বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে আব্দুল ওদুদ নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন পাঁচজন। নিহত আব্দুল ওদুদ গোলাপগঞ্জের রানাপিং এলাকার বাসিন্দা।

১৯শে মে শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আবারো সিলেট-জকিগঞ্জ সড়ক রক্তে লাল হয়।

উপজেলার এ সড়কের হেতিমগঞ্জ কায়স্থগ্রাম নয়া মসজিদের প্রাইভেটকার ও সিএনজি অটোরিকশার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলে এতে ঘটনাস্থলেই পথচারী এমি বেগম (২০) নামের একজন তরুণী নিহত ও শিশু সহ আরো ৩ জন পথচারী গুরুতর আহত হন। নিহত এমি বেগম উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়নের লরিফর নওয়াগাও গ্রামের জুরু মিয়ার মেয়ে। একই এলাকার আহতরা হলেন- আতাউর রহমানের মেয়ে জেনি আক্তার (২৪) ও সুমাইয়া আক্তার (৬), তুরন মিয়ার পুত্র তাউহিদ আহমদ (৫)। সর্বশেষ ৭ আগস্ট বুধবার সকাল সাড়ে ১০ টায় সিলেট থেকে আসা একটি ট্রাক সকাল ১০টা দিকে গোলাপগঞ্জের সিলেট-জকিগঞ্জ রোডের হেতিমগঞ্জ মোল্লাগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি সিএনজির সাথে সংঘর্ষ হয় এতে সিএনজি চালক সুরুজ আলী (৪০) ও তার বড় ভাই তরমুজ আলী (৪৫) হাসপাতালে নেওয়ার পথে নিহত হন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হন গোলাপগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান। পরে ৯ আগস্ট বৃহস্পতিবার বিকেল ৪ টায় তিনিও সিলেটের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। এসব দূর্ঘটনা গাড়ি চালকদের অবহেলা ও বেপরোয়া গাড়ি চালানোকে দায়ি করেছেন উপজেলার সচেতন মহল। এছাড়াও তারা গাড়ির অতি গতি, গাড়ি চালানোর লাইসেন্স না থাকা, চালকের দক্ষতার অভাব, সড়কের বেহাল অবস্থা, গাড়ির ফিটনেস না থাকা এসব কারণেই সড়কে প্রতিনিয়ত প্রাণহানি ঘটছে বলে দাবি করেন। এ ব্যাপারে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর গোলাপগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি ইলিয়াছ বিন রিয়াছত জানান, সিলেট-জকিগঞ্জ সড়ক বিশেষ করে গোলাপগঞ্জের সীমানায় বেশিরভাগ সড়ক দূর্ঘটনা অদক্ষ চালক ও তাদের বেপরোয়া মনোভাব ও চালকদের প্রতিযোগিতার কারণে ঘটছে। এ ছাড়াও বাইপাস থেকে গোলাপগঞ্জ বাজার পর্যন্ত ডিবাইডার না থাকাও দূর্ঘটনার প্রধান কারণ। তিনি বাইপাস থেকে গোলাপগঞ্জ বাজার পর্যন্ত ডিবাইডার নির্মাণের জন্যও কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একেএম ফজলুল হক শিবলি জানান, প্রাশাসনের পক্ষে থেকে উপজেলার ভিতরে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়ক সহ বেশ কয়েকটি স্থানে চ্যাকপোস্ট বসিয়ে গাড়ির চালকদের লাইসেন্স, গাড়ির ফিটনেস ও গাড়ির কাগজ পত্র যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। যাদের লাইসেন্স বা গাড়ির কাগজ পত্র নেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..