সিলেট ৩০শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১:০৭ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২১, ২০১৮
স্টাফ রিপোর্টার :: প্রকৃতির এক অপরূপ লীলাভূমি সিলেট। প্রকৃতির এই সৌন্দর্য আর বৈচিত্র্যের কারণে সবসময় সিলেটে ভিড় লেগে থাকে পর্যটকদের। তবে ভাঙ্গাচোরা সড়কের কারণে সিলেটে বেড়াতে এসে দুর্ভোগে পড়ছেন পর্যটকরা। ফলে কমছে সিলেটে পর্যটক সমাগম। এই ঈদে সড়কের ভগ্নদশার কারণে পর্যটক সমাগম নিয়ে শঙ্কায় সংশ্লিষ্টরা।। ফলে লোকসানের শঙ্কায় পড়েছেন এই খাতের উদ্যোক্তারা।
লম্বা ছুটি বা ঈদ এলে সবসময়ই সিলেটে নামে পর্যটকদের ঢল নামে। আগেভাগেই বুকিং হয়ে যায় হোটেল রিসোর্টের সব রুম। কিন্তু গত দুই বছর ধরে এর চিত্রটা অনেকটা পাল্টে গেছে। এখনও শহরের বেশিরভাগ হোটেলের রুম ফাঁকা। ফলে এই ঈদেও ভাঙ্গা সড়কের কারণে সিলেটে আশানুরূপ পর্যটকরা সমাগম না হওয়ার আশঙ্কা উদ্যোক্তাদের।
এই খাতের সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন নগরী থেকে বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে যাওয়ার সড়কগুলোর দুরবস্থার কারণেই সিলেটে পর্যটক সমাগম কমছে।
সিলেটের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ। দিগন্ত বিস্তৃত পাহাড় আর বালুময় নদী মিলে প্রকৃতির এক অপূর্ব নিদর্শন ভোলাগঞ্জ। সিলেট থেকে ভোলাগঞ্জের দূরত্ব মাত্র ৩৩ কিলোমিটার। এই সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে আছে। এতোই দুরবস্থা যে, সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পরিদর্শনে এসে বলেছিলেন ‘এই সড়কের ক্যান্সার হয়েছে’। প্রায় সাড়ে চারশ’ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সড়কের সংস্কার কাজ চলছে। তবে কাজ এখনো শেষ না হওয়ায় সড়কটি যাত্রীদের জন্য এখনও দুর্ভোগেরই অপর নাম।
এদিকে সিলেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং। জাফলং সড়কের অবস্থাও একেবারে করুণ। সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে জৈন্তাপুর বাজার পার হলেই ভোগান্তি শুরু। ৫৭ কিলোমিটার এ সড়কের জৈন্তাপুর থেকে জাফলং পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার সড়কটি খানাখন্দে ভরা। মাঝেমধ্যেই দু-তিন ফুটের গর্ত। অনেক জায়গাতেই কার্পেটিং উঠে গেছে। তামাবিল পয়েন্ট পার হলেই সড়ক আরও ভয়াবহ রুপি নিয়েছে। ভাঙাচোরা সড়কের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে তুলে ধুলো। পাথর ভাঙ্গার মেশিনের ধুলোর কারণে এ সড়ক দিয়ে চলাচলই দায়।
এই সড়ক সংস্কারের ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী উৎপল সামন্ত বলেন, এই সড়ক সংস্কারে ১৩২ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের টেন্ডার হয়ে গেছে। এটি এখন মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। ঈদের পরই আশা করছি এই সড়ক সংস্কার কাজ শুরু সম্ভব হবে।
জাফলংয়ের মতো সিলেটের অন্য দুই পর্যটন কেন্দ্র বিছনাকান্দি ও রাতারগুলে যেতে ভোগান্তিতে পড়ছেন পর্যটকেরা। পর্যটন স্পট বিছনাকান্দির দূরত্ব সিলেট থেকে প্রায় ৪২ কিলোমিটার। এ দূরত্বের গোয়াইনঘাট উপজেলার বঙ্গবীর রোড থেকে হাদারপাড় পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা সবচেয়ে বেশি খারাপ।
জলারবন খ্যাত রাতারগুলে যেতে হলেও পর্যটকদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। সিলেট থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরত্বের এ সড়কের পাঁচ কিলোমিটার অংশই ভাঙাচোরা। এ ছাড়া ওই সড়কের চানুপুর থেকে মোটরঘাট পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার সড়ক কাঁচা। এতে করে বিশেষ করে বৃষ্টির দিনে পর্যটকদের যাতায়াতে চরম সমস্যা হয়। সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে সিএনজিচালিত অটোরিকশা আর লেগুনা ছাড়া কোনো গাড়িই যেতে চায় না রাতারগুল ও বিছনাকান্দিতে।
সিলেট পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের মোটেলে বুকিং এসেছে মাত্র ১০ শতাংশ। শতভাগ না হোক অন্তত ৯০ ভাগ বুকিং না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লোকসান আসবে। মূলত রাস্তার ভোগান্তির কারণে পর্যটকরা সিলেট থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।’
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের সাবেক সদস্য ডা জাকারিয়া আহমদ বলেন, ভাঙ্গাচোরা সড়কের কারণে গত ঈদেও সিলেটে আশানুরূপ পর্যটক আসেননি। তারপরও সড়কগুলো সংস্কার করা হয়নি। ফলে এবারও পর্যটকরা সিলেটে তেমন আসবেন বলে মনে হয় না।
তিনি বলেন, কেবল দামি দামি রিসোর্ট করলেই তো পর্যটকরা আসবে না। পর্যটকরা রিসোর্ট দেখতে আসে না। সিলেটে পর্যটন বিকাশে অনেকগুলো বাধা রয়েছে। এরমধ্যে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল দশা অন্যতম।
তিনি বলেন, পর্যটকরা ছুটি কাটানোর জন্য, একটু আরাম আয়েশের জন্য বেড়াতে আসেন। অথচ সিলেটে বেড়াতে আসা এখন দুর্ভোগের অপর নাম হয়ে ওঠেছে। এসব সড়ক দ্রুত সংস্কার করা জরুরী।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd