ছাতকে কৈতক হাসপাতা‌লের নার্স আয়শা, গাইনী ডাক্তার সে‌জে প্রতারনা

প্রকাশিত: ৭:২৬ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৭, ২০১৮

ছাতকে কৈতক হাসপাতা‌লের নার্স আয়শা, গাইনী ডাক্তার সে‌জে প্রতারনা

ছাতক প্র‌তি‌নি‌ধি :: ছাতক উপজেলায় কৈতক হাসপাতালে একজন সাধারন নার্স হ‌য়ে ডিগ্রি নেই, তবুও তিনি গাইনী ডাক্তার! তার প্রতারনার ফা‌দেঁ প‌ড়ে শ’শ’ রো‌গীরা প্রতা‌রিত হ‌চ্ছে এ হাসপাতা‌লে । তার বাসায় একটি চেম্বার খুলে বসেন। তিনিই এখানকার একমাত্র গাইনী চিকিৎসক। রোগীদের আকৃষ্ট করতে সুজ্জিত চেম্বার ছাড়াও আকর্ষণীয় নেমপ্লেট ও চেম্বারের সামনে। গাইনী চিকিৎসক হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ডিগ্রি তো দূরের কথা, সাধারনএকজন নার্স হ‌য়ে আয়শা বেগম এ হাসপাতা‌লে গাইন ডাক্তার সে‌জে প্রতারনা ক‌রে আস‌ছে রোগীদের সঙ্গ‌ে। শুধু নামে নয়, প্যাড ও গাইনী ‘ডাক্তার’। গাইনী চিকিৎসক হয়েই তিনি একইসঙ্গে মে‌ডি‌সিন বিশেষজ্ঞের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এ ভুয়া গাইনী ডাক্তারের তার ভুল চিকিৎসা ও প্রতারণার ফাঁদ এ প্রতারনা মাধ্য‌মে লাখ লাখ টাকা অ‌বৈধ ভা‌বে হা‌তি‌য়ে নেয়া অ‌ভি‌যোগ উ‌ঠে‌ছে । এ হাসপাতা‌লে এস‌ে সুস্থ হওয়ার তো দূরের কথা রোগীদের আরও বেশি বিড়ম্বনায় শিকার হচ্ছে অ‌ভি‌যোগ র‌য়ে‌ছে । খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১০ সা‌লে এ হাসপাতা‌লে একজন সে‌বিকা হি‌সে‌বে আয়শা বেগম যোগদান ক‌রে। কিছু‌দিন পরও গাইনী ডাক্তার সে‌জে তার বাসা চেম্বার খো‌লে নিয়‌মিত ভা‌বে রো‌গি দেখ‌তেন । এ হাসপাতা‌লে ডাক্তাররা তার অ‌বৈধ প্রতারনা ব্যবসা প্র‌তিবাদ করলে নে‌মে আ‌সে নানা ধর‌নের হুম‌কি দাম‌কি অহরত ঘট‌ছে । এসব তারা মান সম্মা‌নে ভ‌য়েই প্র‌তিবাদ থে‌কে বিরত থা‌কেন ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, আয়শা বেগম নিজেই তার চেম্বারে আসা রোগীদের সেবা দিচ্ছেন। প্রতিটি রোগীর কাছ থেকে ফি নিচ্ছেন ৩০০ টাকা। চিকিৎসা শেষে নিজের প্যাডে লিখে দিচ্ছেন প্রেসক্রিপশনও। সে‌বিকা এখন গাইনী ডাক্তার প‌রিচয়ে নিজেই একটি চেম্বার খুলে বসেন। চিকিৎসা কাজে ব্যবহৃত সব যন্ত্রপাতি চেম্বারে রাখায় রোগীরা সহজেই বিভ্রান্ত হচ্ছেন। কোনও ডিগ্রি নেই তারপরও নিজের নামের পাশে বসিয়েছেন ডাক্তার।এ হাসপাতা‌লে দীঘ‌দিন ধ‌রে গাইনী ডাক্তার পদ শুন্য থাকায় এ সু‌যো‌গে সে প্রতারনা ক‌রে আস‌ছে । তার বিরু‌দ্ধে নানা অ‌নিয়ম দুনী‌তিসহ ভূঁয়া জখমি সনদ ইস্যু ক‌রে লাখ লাখ হা‌তি‌য়ে নেয়া হয়। কৈতক ২০ শষ্যা বিশিষ্ট সরকারী হাসপাতালটিতে চিকিৎসা সেবা মারাত্বক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিদিন এ হাসপাতালে আশা প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আগত রোগিরা সুচিকিৎসা পাচ্ছেনা বলে অ‌ভি‌যোগ উ‌ঠে‌।এখা‌নে নাস আয়শা বেগম যোগদান করার পরই অনিয়ম, দূর্নীতি ও টাকা বি‌নিময়‌ে জখ‌মি সা‌টি‌ফি‌কেট প্রদা‌নের ব্যাপক বিস্তার অ‌ভি‌যোগ ক‌রেন এলাকাবা‌সি। এখা‌নে গাইনী ডাক্তার সে‌জে রোগী‌দের ভুয়া ব্যবস্থাপত্র সহ ভুয়া জগ‌মি সনদের একা‌ধিক ঘটনা ঘট‌লে ও সংশ্লিষ্টরা তার বিরুদ্ধে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষ কোন আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা বলে এলাকা‌বা‌সি অ‌ভি‌যোগ ক‌রেন ।

এ হাসপাতালে নিয়োজিত নার্স আয়শা বেগম বেশীর ভাগই প্রাইভেট চি‌কিৎসা নিয়ে ব্যস্ত থা‌কে। ৮ বছর ধরে আয়শা বেগম একাধারে কর্মরত থাকায় হাসপাতালটি তাদের পৈত্রিক জমিদারী তাল্লুকে পরিনত হয়। ওই হাসপাতা‌লে অনেক কর্মকর্তা কর্মচারীরা দীর্ঘ‌দিন ধ‌রে দাপ‌টে রোগীরা অসহায় হ‌য়ে প‌ড়ে। এ হাসপাতালের নার্স ,সুইপার ,আয়া সহ জখমি সনদের দালালি নিয়ে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা কর্তব্যরত ডাক্তারদের নামে হাতিয়ে নিচ্ছে। এসব অভিযোগ হাসপাতালে আগত রোগি‌দের। এ হাসপাতা‌লে রোগীদের থাকার সিট গুলো অপরিস্কার ও অপরিচ্ছন্ন। একজন সুস্থ মানুষ এ হাসপাতালে আসলে নিজেই রোগাক্রান্ত হওয়ার ভয় রয়েছে। হাসপাতালের ভিতরে বাইরে বিরাজ করছে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশ। রোগী থাকার ওয়ার্ড গুলো থেকে বের হচ্ছে বিশ্রী দূর্গন্ধ। এ হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তার, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরু‌দ্ধে রয়েছে রোগীদের প্রতি চরম অবহেলা। তাদের দূর্নীতির কারণে রোগিরা প্রকৃত স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এ হাসপাতালে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর ২ট-৩০মিনিট পযন্ত রোগী দেখা নিয়ম থাকলেও রোগী দেখা শুরু হয় সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পযন্ত। এ হাসপাতালে দুপুর ১-টা বাজার সাথে সাথেই আউটডোর বন্ধ করে ডাক্তার ও নাসরা রোগীদের প্রাইভেট চিকিৎসা করতে বাসায় চলে যায়।এদিকে এ হাসপাতা‌লে ৪জন ডাক্তার, নার্স ৯, এম এল এস ৩, ক্লিনার ২ জন থাক‌লে দা‌য়িত্ব পাল‌নে র‌য়ে‌ছে স্বপ্রী‌তি ।

কৈতক হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তার মোহাম্মদ মোজাহারুল ইসলাম এ প্রতি‌নি‌ধির এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, এখানে গাইনী ডাক্তার নেই দীর্ঘদিন যাবৎ নার্সদের দ্বারাই গাইনী বিভাগের কাজ চালানো হচ্ছে। নার্সরা রো‌গি সেবা দে‌বে কিন্ত ব্যবস্থাপত্র দেয়া যা‌বে না । এছাড়া তা‌দের কে ডেলিভারী চিকিৎসা বিষয়ে নার্সদের পরামর্শ দেয়া আছে রোগী আসলে তারা কি ধরনের চিকিৎসা দে‌বে। গত ২০১৭ সালে হাসপাতালের তথ্যানুযায়ী ১ হাজার ৬ শত এর অধিক রোগীর ডেলিভারী করা হয়েছে এ হাসপা‌লে । এ‌দের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবৎ জরুরী বিভাগের ডাক্তার, পিয়ন, ফার্মাসিস্ট ও অফিস প্রধানের পদ শূন্য আ‌ছে ।

সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কের পার্শে অবস্থিত ছাতকের কৈতক হাসপাতাল চার উপজেলার পাচঁ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার একমqাত্র কেন্দ্র বিন্দু। এ হাসপাতাল স্বাস্থ্য সেবায় অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। এখানে সেবার নামে চলছে বানিজ্য। সাধারন মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত। সরকারী কোষাগার থেকে কর্মরত নার্স, কর্মচারীরা প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা বেতন ভাতা উত্তোলন করেন।

এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন ডাক্তার আশুতোষ দাস জানান, কৈতক হাসপাতালের আয়শা বেগম গাইনী ডাক্তার প‌রিচয় প্রাই‌ভেট চি‌কিৎসাসহ তার বিরু‌দ্ধে নানা অ‌নিয়‌মে অ‌ভি‌যোগ তদন্ত চল‌ছে । তদন্তের পর দো‌ষি প্রমা‌নিত হ‌লে তা‌কে এখন থে‌কে অন্যান্য বদলী করা হ‌বে ।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..