বিশ্বনাথের যুবকের সংগ্রহশালা ফেরিয়েছে হাজার ব্যাগ রক্ত

প্রকাশিত: ৯:২৭ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৭, ২০১৮

বিশ্বনাথের যুবকের সংগ্রহশালা ফেরিয়েছে হাজার ব্যাগ রক্ত

বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: ‘মনের ভয় দূর করুন, স্বেচ্ছায় রক্তদান করুন’ স্লোগানকে সামনে রেখে ২০১৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে স্বেচ্ছায় রক্ত দান ও রোগীদের গ্রুপ অনুযায়ী রক্ত সংগ্রহ করে দেওয়া শুরু এক যুবক। প্রায় ৫ বছরে এপর্যন্ত নিজেই ১৯ বার স্বেচ্ছায় রক্ত দান করার পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকার রোগীকে, বিভিন্ন এলাকার মানুষকে স্বেচ্ছায় রক্ত দানে উৎসাহিত করে তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে দিয়েছে ১ হাজার ৫ ব্যাগ রক্ত। যার ফলে ইতিমধ্যে বন্ধু-বান্ধবদের কাছে ‘রক্তের ফেরিওয়ালা’ নামে পরিচিতিও লাভ হয়েছে।
রক্তের ফেরিওয়ালা নামে পরিচিত সেই যুবকের নাম শামীম আহমদ। সে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার সদর ইউনিয়নের জানাইয়া গ্রামের আবুল কালামের ২য় পুত্র। শামীম ছোট বেলা থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। বর্তমানে সে উপজেলা ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী। শামীমের সাথে আলাপকালে জানা যায়, ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহের দিকে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে রক্তের অভাবে একজন রোগীর করুণ মৃত্যুর দৃশ্য নিজ চোখে দেখে সে (শামীম)। সেই রোগীর এমন মৃত্যুর দৃশ্য দেখার পর থেকে রক্তের অভাবে যাতে আর কারও এমন করুণ মৃত্যু না হয়, সেজন্য নিজে স্বেচ্ছায় রক্ত দেওয়ার পাশাপাশি অন্যদেরকেও স্বেচ্ছায় রক্ত দানে উৎসাহিত করে তুলার কাজ শুরু করে ছাত্রলীগ নেতা শামীম আহমদ।
কালের পরিবর্তে আজ রক্তের ফেরিওয়ালা শামীমের ‘রক্ত ভান্ডার’ হয়েছে অনেক সমৃদ্ধ, রক্ত দানে ফেরিয়ে গেছে হাজার ব্যাগ। যাতে উপকৃত হয়েছেন অনেক চেনা-জানার পাশাপাশি শত শত অজানা ব্যক্তিও। সৃষ্টিকর্তার করুণায় নতুন করে জীবন ফিরে পেয়েছেন কত-শত রোগী। যার পেছনে রয়েছে রক্তের ফেরিওয়ালা শামীমের অপরিসীম অবদান। কি রাত, কি দিন কারোও রক্তের প্রয়োজনে কেউ কোন সমস্যায় থাকলে এর সমাধান মানে শামীম। আর শামীমও কাউকে নিরাশ করতো না, যে কোন ভাবেই শামীম তার কাছে সাহায্য চাওয়া সেই ব্যক্তিটিকে রোগীর প্রয়োজনীয় গ্রুপের রক্ত মিলিয়ে দিবেই দিব।
নিজের ব্যক্তিগত মোবাইল হাতে শামীম সব সময় রক্তের খুঁজে ও রক্ত দানে উৎসাহিত করতে একজন সচেতন নাগরিক। মানুষের রক্তের গ্রুপ জানা, বিপদে থাকা মানুষকে সাহায্য করতে রক্ত দানে উৎসাহিত করতেই তার (শামীম) দিনের বেশির ভাগ সময় কেটে যায়। প্রথম দিকে স্বেচ্ছা ফ্রি রক্ত দিলেও, বতর্মানে শামীম এক্সচেইঞ্জ সিস্টেমের মাধ্যমে রক্ত দেয়। মানে হল- শামীম এখন কোন রোগীকে নিজে বা সংগ্রহ করে রক্ত দিলে, সেই এক ব্যাগ রক্তের বিনিময়ে সেই রোগী কিংবা রোগীর কোন আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি আদায় করে নেয় যে পরবর্তিতে অন্য কারও রক্তের প্রয়োজন হলে তারাও এক ব্যাগ রক্ত দিয়ে অন্য কোন রোগীকেও সাহায্য করবেন।
ওই প্রতিশ্রুতি আদায়ের কারণ হিসেবে ছাত্রলীগ নেতা শামীম আহমদ জানায়, আমাদের সমাজে বেশির ভাগ মানুষই রক্ত দিয়ে ভয় পায়। এই ভয় থেকেই নিজের আতœীয়-স্বজনকেও রক্ত দেওয়া থেকে বিরত থাকেন। আর আমি (শামীম) মানুষের এই ভয়কে দূর করার জন্যই বিপদের সময় রক্ত দেই তবে কৌশলে তার/তাদের (অন্য রোগী) কাছ থেকে পরবর্তি সময়ে স্বেচ্ছায় রক্ত দানের প্রতিশ্রুতি আদায় করি, যাতে করে সমাজে স্বেচ্ছায় রক্ত দানকারী ব্যক্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। আমাদের সমাজে স্বেচ্ছায় রক্ত দানকারী ব্যক্তির সংখ্যা বৃদ্ধি ফেলে কেউ আর রক্তের অভাবে অকালে মারা যাবে না।
রক্তের ফেরিওয়ালা শামীমের স্বপ্ন আর সে একা নয়, এখন থেকে তরুণ-যুব সমাজকে সাথে নিয়ে একটি সংগঠন করে সারা দেশে এর শাখা ছড়িয়ে দেয়া। যাতে করে বিপদে থাকা রোগীরা সহযেই সেবা পেতে পারেন। আর নিজের আতœীয়-স্বজনদের পাশাপাশি দেশের সর্বস্তরের মানুষরা স্বেচ্ছায় রক্ত দানে নিজ থেকে উৎসাহিত হয়ে এগিয়ে আসেন সেলক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা। ‘রক্তের অভাবে কাউকে মরতে দিবে না’ তার (শামীম) প্রতিজ্ঞার মতো একথাটি হউক সকলের প্রেরণ।
শামীম আহমদের এমন মহতি উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বিশ্বনাথের রক্তদাতা সংগঠন বিশ্বনাথ বন্ধুসভার সভাপতি ডাঃ প্রবীর কান্তি দে পিংকু বলেন, নিজের কর্মগুনে শামীম স্বেচ্ছায় রক্ত দানে মানুষকে উৎসাহিত করতে উপজেলা জুড়ে সারা জাগিয়েছে। তাকে দেখে অনেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে স্বেচ্ছায় রক্ত দানে উদ্যোগী হচ্ছেন, আরও হবেন।
বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মোহাম্মদ শামসুদ্দোহা পিপিএম বলেন, শামীমের অনুরোধে আমাকেও রক্ত দিতে হয়েছে। মানবতার কল্যাণে তার এ প্রচেষ্ঠা প্রশংসার দাবীদার।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..