কোম্পানীগঞ্জে রাতের আধারে বোমা মেশীন দিয়ে পাথর উত্তোলন, নেপত্যে ওসি

প্রকাশিত: ৭:৩৭ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৮, ২০১৮

কোম্পানীগঞ্জে রাতের আধারে বোমা মেশীন দিয়ে পাথর উত্তোলন, নেপত্যে ওসি

জামাল আহমদ, কোম্পানীগঞ্জ থেকে ফিরে :: দেশের সর্ববৃহৎ পাথর কোয়ারী সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ ধলাই নদী। যুগ যুগ ধরে সেখান থেকে পাথর উত্তোলনের মাধ্যমে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানী করা হতো উক্ত পাথর। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতো কয়েক লক্ষ মানুষের। দল বেঁধে নারী-পুরুষ ছুটে চলতো তাদের কর্মস্থল পাথর কোয়ারীতে। দিনভর পাথর উত্তোলনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতো তারা। অনেকটা লাভবান হয়েছিলেন স্থানীয় ও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ব্যবসায়ীরাও। কিন্তু যুগের সাথে পাল্লা ধরে এখন আর আগের মতো পাথর উত্তোলন হয় না। বদলে গেছে চিরচেনা ভোলাগঞ্জের সেই রূপ। জানা যায়, ইমাম উদ্দিন কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি আব্দুল হাই’র সেল্টারে পাথর উত্তোলন করে আসছেন। ইমাম উদ্দিনকে রাতে পরিবেশ বিধবংসী বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলনে সহযোগীতা করেন ওসি আব্দুল হাই। ওসিকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে রাতের আধারে গুচ্ছগ্রামে বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করছে ইমাম উদ্দিন ও টাকা উত্তোলন করেন বেলাল ও সাংবাদিকের ভাই আমিনুল ইসলাম। ওসি আব্দুল হাই প্রতি রাতে পুলিশ পাহাড়া দিয়ে ইমাম উদ্দিনের সাথে হাত মিলিয়ে ধ্বংস করছেন গুচ্ছগ্রাম ও আশপাশ এলাকা। ১৪৪ ধারা জারির পরও দেশের একমাত্র রজ্জুপথ ভোলাগঞ্জ রেলওয়ে রোপওয়ে বাংকারে প্রতিদিন রাতের আধারে ওসির নির্দেশনায় ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) চীফ ইন্সপেক্টর নুর মোহাম্মদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে পাথর খেকো সিন্ডিকেট প্রধান কাজল সিংহ, কলাবাড়ি গ্রামের মৃত আব্দুল বারীর ছেলে শাহাব উদ্দিন, হাজী আব্দুল মনাফের ছেলে আলিম উদ্দিন, বিল্লাল আহমদ, তাজুল ইসলাম ওরফে পরিবেশ মোল্লা, কালিবাড়ি গ্রামের আব্দুল আজিজের নেতৃত্বে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বোমা মেশিন নামক দানব যন্ত্র দিয়ে অবাধে পাথর উত্তোলন করে আসছে। এদিকে উপজেলার দয়ার বাজার সংলগ্ন কালীবাড়ী গ্রাম ও লিলাই বাজার বোমা মেশিনের তান্ডবে হুমকির মুখে পড়েছে। লিলাই বাজার এলাকায় বোমা মেশিন দিয়ে রাতের আধারে পাথর উত্তোলনে ওসির রয়েছে বিশাল ভূমিকা। সেখানে প্রতি বোমা মেশিন থেকে ৩০ হাজার টাকা করে ওসিকে দিতে হচ্ছে। এ নিয়ে কারও কথা বলার কোন সাহস নেই। কোম্পানীগঞ্জে যেন ওসি আব্দুল হাই সর্বেসর্বা। ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে পাথর সাম্রাজ্যখ্যাত ভোলাগঞ্জ। আজ হুমকির মুখে ধলাই ব্রীজ। নষ্ট করে দেয়া হচ্ছে আশপাশের পরিবেশ। অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। ওসি আব্দুল হাই মানছেন না উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা, খনিজ মন্ত্রনালয়ের প্রজ্ঞাপন জারি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্থানীয় সংসদ সদস্য ইমরান আহমদের নির্দেশনা। এমনকি তোয়াক্কা করছেন না পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিষেধ। সহায়তা করছেন না বোমা মেশিনের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসনের অভিযানেও। কোন কিছুই যেন বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারছেন না টাকার নেশায় উন্মাদ হওয়া ওসি আব্দুল হাইয়ের সামনে। সব কিছুতেই যেন সর্বে-সর্বা ওসি আব্দুল হাই। পাথর উত্তোলনে দেশের প্রচলিত আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুঁলী প্রদর্শন করে তিনি একদল পাথর খেকো চক্রের সাথে হাত মিলিয়ে প্রতি রাতে লক্ষ টাকার রফাদফার মাধ্যমে দানব যন্ত্র নামক বোমা মেশিন দিয়ে লুটপাট করাচ্ছে কোটি টাকার পাথর। ওসি তার নিজস্ব ও থানার বিশ্বস্ত অফিসার দিয়ে উত্তোলন করাচ্ছে তার অংশের বিপুল অংকের টাকা। যারা টাকা দিতে অপারগতা স্বীকার করে তাদের হাতকড়া পড়িয়ে থানায় নিয়ে আসা হয়। অতঃপর তাদের আত্বীয়-স্বজনের কাছ থেকে বড় অংকের উৎকোচ আদায় করে ছেড়ে দেওয়া হয় তাদের। জানা যায়, প্রায় মাস খানেক আগে ভোলাগঞ্জে রাতের অন্ধকারে ওসি আব্দল হাইয়ের নেতৃত্বে শুরু হয় নতুন রূপে বোমা মেশিন দিয়ে পাথর লুটপাট। প্রায় ১৫০/১৬০টি বোমা মেশিন প্রতিদিন সন্ধার পর হতে সকাল সাতটা পর্যন্ত নদী গর্ভের ২০০/২৫০ ফুট নীচ হতে পাথর উত্তোলন করে থাকে। যা সম্পূর্ণ বেআইনী। জানা যায়, ওসির মদদে দীর্ঘ দিন ধরে কোম্পানীগঞ্জে বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। এতে করে পাথরখেকোদের চক্রের কবলে পড়ে শারপিন টিলা, ভোলাগঞ্জ রেলওয়ে রোপওয়ে বাংকার, কালাইরাগ গ্রাম, গুচ্ছগ্রাম, সাদা পাথর এলাকা, কালীবাড়ী গ্রাম এবং লিলাই বাজারের অস্তিত্ব বিলীন হতে যাচ্ছে। ওসি আব্দুল হাই কোম্পানীগঞ্জ থানায় যোগদানের পর থেকে বোমা মেশিন চক্রের সদস্যরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। কমপক্ষে ৯০টি বোমা মেশিন সিন্ডিকেটের কাছ থেকে অগ্রীম হিসেবে ১ লাখ টাকা করে নিয়েছেন। এর বাইরে প্রতিদিন প্রায় ৩০০টি বোমা মেশিন চলে কোম্পানীগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে। একেক এলাকার বোমা মেশিন সিন্ডিকেটদের কাছ থেকে প্রতিদিন ৫-৬ লাখ টাকা করে ওসির চাঁদাবাজ বাহিনী আদায় করছে।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..