দুর্ঘটনায় কেড়ে নিল শ্রীমঙ্গলের সামিনা নূর নীলার সংসারের স্বপ্ন

প্রকাশিত: ২:৩২ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৩০, ২০১৮

দুর্ঘটনায় কেড়ে নিল শ্রীমঙ্গলের সামিনা নূর নীলার সংসারের স্বপ্ন

আলী হোসেন, মৌলভীবাজার :: মোঃ মুন্না মিয়াঃ বিপুল ও নীলা। তাঁরা দুজনই সাত বছর ধরে একে অপরকে ভালোবাসেন। ভালোবাসার সূত্র ধরে তাঁদের ঘর বাধার কথা ছিলো। ইতিমধ্যে তাঁদের সাংসারিক জিবনের আনুষ্ঠানিক সময়ক্ষণ ঠিক ঠিক করা হয়েছে। বিয়ে হওয়ার কথা আগামী অক্টোবর মাসের ৫ তারিখে। কথা ছিলো স্বপ্নের সংসার সাজানোর। বলছিলাম নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ওয়ালিউর রহমান বিপুল ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক সম্পন্ন করা সামিনা নূর নীলার কথা।

বুধবার (২৯ আগস্ট) দুপুর দেড়টা রাজধানী ঢাকা থেকে বাড়ী ফেরার পথে বেপরোয়া এনা বাস তাদের সংসারের স্বপ্ন ধুলোর সাথে মিশিয়ে দেয়। কেড়ে নেয় বিপুলের প্রিয়তমার প্রাণ।

জানা যায় – নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ওয়ালিউর রহমান বিপুল গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলায় বাড়ি। আর মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার মেয়ে সামিনা নূর নীলা। তাঁদের দুজনের প্রেমের সম্পর্ক দীর্ঘ সাত বছর ধরে। প্রেমের সূত্রধরে বিয়ের দিনক্ষণও ঠিক করা হয় পারিবারিক ভাবে। অক্টোবরের ৫ তারিখ বিয়ে হওয়ার কথা। গেল দুইমাস আগে বিপুল ও নীলার আকদও (বাগদান) সম্পন্ন হয়েছে। এখন শুধু তাদের আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানের বাকি ছিলো। ইতিমধ্যে তাদের সাংসারিক জীবন শুরুর ভাবনা শুরু হয়েছে। সাংসারিক জীবন শুরু মধ্যেই বড় ধাক্কা খেতে হয় বিপুলকে। বেপরোয়া এনা বাসে কেড়ে নেয় প্রিয়তমা নীলার প্রাণ।

বুধবার (২৯ আগস্ট) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলায় এনা পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের খাদের পানিতে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে মারা যান বিপুলের হবু স্ত্রী সামিনা নূর নীলা ও তাঁর হবু শাশুরি রুবিনা নূর। এ দুর্ঘটনায় বিপুল ও নীলার সংসারের স্বপ্ন তছনছ হয়ে যায়।

জানা যায় – নীলা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরিবারসহ ঢাকাতেই ছিলেন তিনি। আজকে সকালে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে বাবা সালাউদ্দিন আলফি, মা রুবিনা নূর ও ছোট ভাই আসিফের সঙ্গে এনা পরিবহনের একটি বাসে। বেপরোয়া এনা পরিবহনের বাসটি দুপুর দেড়টার দিকে দুপুরে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিলেট গামী এনা পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সরাইল উপজেলার শাহবাজপুরের বৈশ্বামুড়া এলাকায় মহাসড়কের পাশে খাদের পানিতে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে নীলা ও তাঁর মা রুবিনা নূর সহ আরও একজন ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছেন। এছাড়া বাবা সালাউদ্দিন আলফি ও ভাই সহ অন্তত আরও ২০ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। ভাই আসিফ গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছেন।

দুপুরের দুর্ঘটনায় হবু স্ত্রী ও শাশুড়ির মৃত্যুর খবর বিপুলের কাছে পৌঁছে দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে। যখন বিপুল এ খবর পান তখন তিনি তার কর্মস্থলে ছিলেন। মুহূর্তেই বিপুলের চোখে-মুখে অন্ধকার নেমে আসে।

প্রিয়তমার লাশ দেখতে শ্রীমঙ্গলের পথে থাকা বিপুল কান্না জড়িত কণ্ঠে ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি অনলাইনকে বলেন- ‘সাত বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল আমাদের। কিছুদিন আগে আমাদের বাগদান হয়েছে। ৫ অক্টোবর বিয়ে হওয়ার কথা। কিন্তু মুহূর্তেই সব তছনছ হয়ে গেল।’ আবেগাপ্লুত বিপুল আর কথা বলতে পারেন নি।

নীলার মৃত্যুর খবর বিপুল-নীলার ঘনিষ্ঠমহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

বিপুলের দীর্ঘদিনের পরিচিত ও সৃহৃদ শামসুল কবির রাহাত ওই অনলাইনকে বলেন- বিপুল সব সময় দু:খী। সারাজীবন ছেলেটা কষ্ট পেয়ে গেছে। আল্লাহ কেন ওকে বারবার পরীক্ষায় ফেলেন। নববধুর মুত্যু কীভাবে সইবে! আল্লাহ ওর স্ত্রীকে জান্নাতবাসী করুন।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..