সিলেট ৩০শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৫:৫৪ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১, ২০১৮
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : তুই রাজাকার তুই রাজাকার,জামাই শ্বশুড় শ্যালকের কমিটি, পিতাপুত্রের পকেট কমিটি, পিতা-কন্যার প্রাইভেট কমিটি,এক পরিবারের ৪ জনের কমিটি,লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়ে কমিটির সদস্য পদ প্রদান,জীবিত জনপ্রিয় মেয়র আয়্যুব বখত জগলুলকে মৃত দেখিয়ে দলীয় প্রধানের স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে গঠিত প্রহসণমূলক কমিটি বলে বিভিন্ন বিশেষনে বিশেষায়িত করে তিতামিঠা ভাষায় মনের ক্ষোভ প্রকাশ করার মধ্যে দিয়ে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের কার্যকরী কমিটিকে অবিলম্বে বাতিল করার উদাত্ত আহবাণ জানিয়ে সিলেটে আগত কেন্দ্রীয় নেতাদের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করলেন সুনামগঞ্জের বঞ্চিত আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা। ৩০ আগস্ট বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ এমপি, জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন,এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ও এনামুল হক শামীমসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে জেলা আওয়ামীলীগের কমিটি বাতিলের উদ্দেশ্যে পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা প্রথমে সিলেটের রেজিষ্ট্রারী মাঠে অনুষ্ঠিত শোকসভায় যোগদান করেন। পরে সার্কিট হাউজে গিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে অভিযোগ উত্থাপন করেন তারা। কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে একে একে বক্তব্য রাখলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সরাসরি আশীর্বাদপুষ্ট মূলধারার আওয়ামীলীগ নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আমির হোসেন রেজা,জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক ও যুদ্বকালীন কোম্পানী কমান্ডার এডভোকেট আলী আমজাদ,জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও পিপি এডভোকেট রইছ উদ্দিন আহমদ,জেলা আওয়ামীলীগ নেতা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কবি জসিম উদ্দিন দিলীপ, জেলা আওয়ামীলীগ নেতা এডভোকেট নজরুল ইসলাম শেফু,জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সুনামগঞ্জ ১ আসনে সম্ভাব্য সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী এডভোকেট আক্তারুজ্জামান সেলিম প্রমুখ অভিযোগের স্বপক্ষে বক্তব্য রাখেন। সুনামগঞ্জ ১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী এডভোকেট আলী আমজাদ অবিলম্বে জেলা আওয়ামীলীগের তথাকথিত কমিটি বাতিলের দাবী জানিয়ে বলেন,বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রকৃত সৈনিক,মাঠ পর্যায়ের ত্যাগী নেতাকর্মীদেরকে কথিত কমিটিতে সম্পূর্ণরুপে উপেক্ষা করা হয়েছে। তিনি বলেন,এই কমিটি দিয়ে কোনক্রমেই নির্বাচিত বৈতরনি পার পাওয়া যাবেনা। সুনামগঞ্জ মহকুমা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সর্বাধিক নির্যাতিত জেলা আওয়ামীলীগ নেতা আমির হোসেন রেজা বলেন,মুক্তিযুদ্ধের পর ছাত্রলীগকে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে ছাত্র ইউনিয়নের যেসব কর্মীরা আমার উপর হামলা করে আমাকে মৃত ভেবে আমার লাশ ফেলে রেখে দিয়েছিল,আমাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় জাতির জনকের নির্দেশে ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদের মাধ্যমে হেলিকপ্টারে সুনামগঞ্জ থেকে ঢাকায় নিয়ে পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়েছিল। হাসপাতালের বেডে আমার শয্যাপাশে এসে আমার মাথায় আদর করে হাত বুলিয়ে দেওয়ায় যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে নিয়ে আমি আজো বেঁচে আছি,আমার উপর হামলার কারণে যেসব ছাত্র ইউনিয়ন ও জাসদ নেতাকর্মীদের উপর মামলা হয়েছিলো আজ তাদেরকে আওয়ামীলীগের জেলা কমিটিতে বড় বড় পদে স্থান দিয়ে আমরা ত্যাগী বঞ্চিত উপেক্ষিত নেতাকর্মীদেরকে উপেক্ষা করা হয়েছে। নাবালক ছেলের এহেন বেয়াদবীতে আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এসব কুচক্রীরাই গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য করে দল ও নৌকার ভরাডুবি করেছে। জেলা আওয়ামীলীগ নেতা এডভোকেট নজরুল ইসলাম শেফু নবগঠিত জেলা কমিটির একটি কপি উপস্থিত সকল কেন্দ্রীয় নেতাদেরকে প্রদর্শন করে বলেন,সুনামগঞ্জ পৌরসভার সর্বাধিক জনপ্রিয় মেয়র জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক আয়্যুব বখত জগলুলকে জীবিত অবস্থায় মৃত দেখিয়ে গঠিত প্রহসনমূলক কমিটিতে জগলুল সম্পর্কিত মূলধারার কোন আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীকে এই কমিটিতে রাখা হয়নি। নব্য আওয়ামীলীগার হিসেবে যারা প্রতিভূ সেসব লোকদের নিয়ে গঠিত এই কমিটিকে দলের দু:সময়ে কোন লড়াই সংগ্রামে পাওয়া যাবেনা বলে তিনি চ্যালেঞ্জ করেন। সাবেক ছাত্রলীগ ও জেলা আওয়ামীলীগ নেতা কবি জসিম উদ্দিন দিলীপ বলেন,জেলা পরিষদের প্রশাসনিক পদ নিয়ে যে নাবালক ছেলে আওয়ামীলীগার হয়ে শহরে প্রবেশ করেছিল, পদে পদে যে ছেলেটির বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ যুবলীগ ও আওয়ামীলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছিল,যার কোন অবস্থানই ছিলনা তাকে আমিই সকল প্রকার সহযোগীতা দিয়েছিলাম,আজকে সেই নাবালক ছেলের কমিটিতে আমি নেই তাতে কোন দু:খ নেই। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে আমার প্রশ্ন দলের দূর্দিনের কান্ডারী,ত্যাগী বঞ্চিত নেতাকর্মী বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক ছাত্রলীগ যুবলীগ নেতাকর্মীদেরকে কেন কমিটিতে রাখা হলোনা। জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সুনামগঞ্জ ১ আসনে সম্ভাব্য সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী এডভোকেট আক্তারুজ্জামান সেলিম বলেন,৮০ থেকে ৯০ দশকে স্বৈরাচারী সামরিক শাসনামলে যেসব ত্যাগী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা জেলা,থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে বলিষ্ট নেতৃত্ব দিয়েছে সেসব নেতাকর্মীদেরকে জেলা আওয়ামীলীগের কার্যকরী কমিটিতে কোন পদেই রাখা হয়নি। কমিটিতে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকার পরিবারের সন্তানদেরকে। রাজনীতি বিমুখ ব্যবসায়ীদেরকে কমিটিতে পদায়নে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কমিটির বিরুদ্ধে কোন লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ প্রদান না করলেও আমার এ বক্তব্য একার নয় সারা জেলার তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের।
লুকিয়ে নয় প্রকাশ্য দিবালোকেই সিলেট সার্কিট হাউসে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনেই জেলা কমিটিতে পদবঞ্চিতরা হট্টাগোল করেছেন। এ কারণে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির নির্ধারিত বৈঠকই হয়নি। অবশ্য বঞ্চিতরা কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে লিখিত অভিযোগও তুলে দিয়েছেন। অভিযোগে তারা উল্লে¬খ করেছেন, আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিতে বিভিন্ন দল থেকে আসা ৩৫ জন অনুপ্রবেশকারী রয়েছেন। অথচ ত্যাগীদের বঞ্চিত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় সিলেট সার্কিট হাউসের তিন তলায় কেন্দ্রীয় নেতারা সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠকের জন্য প্রবেশ করেন। এসময় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, খালেদ মাহমুদ চৌধুরী ও এনামুল কবির শামীম প্রবেশ করেন। এসময় জেলা আওয়ামীলীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন জেলা কমিটি ও উপজেলা কমিটির সভাপতি ও সম্পাদকরা ছাড়া অন্যদের কক্ষ থেকে বেরিয়ে যেতে হবে। একথা শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেন পদবঞ্চিতরা। ঐ সময় আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট রইছ উদ্দিন, অ্যাডভোকেট আলী আমজাদ, অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, জসিম উদ্দিন দিলীপ, আমির হোসেন রেজা, অ্যাডভোকেট আক্তারুজ্জামান সেলিম প্রমুখ,সকল পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদেরকে নিয়ে বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মতো কক্ষে প্রবেশ করেন। গণরোষ দেখে বাঁধাদান করার দু:সাহস দেখানোত দূরের কথা কেউ কেউ ইজ্জত হারানোর ভয়ে পালিয়ে যান এবং পাল্টা বক্তব্য প্রদান থেকে বিরত থাকেন। একপর্যায়ে পদবঞ্চিতরা কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে নালিশ জানানো শুরু করেন। সকল অভিযোগ স্বীকার করে পদবঞ্চিতদের মুখপাত্র আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন রেজা বলেন,‘আমরা কমিটির বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি, আমরা বলেছি এই কমিটি করার সময় অনৈতিক লেনদেনও হয়েছে। আমরা কমিটি বাতিলের দাবি করেছি। প্রসঙ্গত ২০১৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের সম্মেলনে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসাবে মতিউর রহমান ও ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমনের নাম ঘোষণা করা হয়। পরে গত ১৬ মার্চ জেলা আওয়ামী লীগের ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই এই কমিটিকে বাতিলের দাবী জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সাধারন সম্পাদকসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে খোলা চিটি প্রেরণ,অভিযোগ দায়ের এবং সভা সমাবেশ অব্যাহত রয়েছে। কমিটি অনুমোদনের আগে সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব আয়্যুব বখত জগলুল মূলধারার নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে মহিবুর রহমান মানিক এমপিকে সভাপতি,আয়্যুব বখত জগলুল সাধারন সম্পাদক ও করুনাসিন্ধু চৌধুরী বাবুল কে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কার্যকরী কমিটি গঠণ করেছিলেন। কিন্তু এই কমিটি দলীয় সভানেত্রীর কাছে উপস্থাপন করার আগেই ঢাকায় অবস্থানকালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd