সিলেট ৩০শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৩:২৪ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১, ২০১৮
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : হারবালের মোটা হওয়ার ঔষধ খেয়ে কাতারে অবস্থানরত হবিগঞ্জ সদর উপজেলার সানাবই গ্রামের জাহাঙ্গীর মিয়া নামে এক তরুণের অকাল মৃত্যু হয়েছে। বুধবার কাতার থেকে জাহাঙ্গীর মিয়ার লাশ বাড়িতে পৌছলে তার আত্মীয় স্বজনসহ এলাকার লোকজন তাকে শেষ বারের মত দেখার জন্য ভিড় জমান। ওইদিন জাহাঙ্গীরের লাশ দাফন করা হয়।
পারিবারিক সূত্র জানায়, সানাবই গ্রামের রঞ্জুই মিয়ার ২ ছেলে ও ৩ কন্যা সন্তানের মধ্যে জাহাঙ্গীর ছিলেন ২য়। সংসার চলাতে যখন রঞ্জুই মিয়া হিমশিম খাচ্ছিলেন ঠিক তখনই পরিকল্পনা করেন তার ২১ বছরের ছেলে জাহাঙ্গীর মিয়াকে বিদেশে পাঠানোর। এক পর্যায়ে এক পরিচিত লোকের মাধ্যমে ৪মাস পূর্বে রঞ্জুই মিয়া জাহাঙ্গীরকে কাতারে পাঠান। কাতারে যাওয়ার পূর্বে জাহাঙ্গীর মিয়া এক হারবাল সেন্টার থেকে মোটা ও স্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়ার হারবাল জাতীয় ঔষধ ও ট্যাবলেট খান। ঔষধ খাওয়ার ফলে হঠাৎ করে জাহাঙ্গীরের স্বাস্থ্য বাড়তে থাকে। কাতারে যাওয়ার সময়ও জাহাঙ্গীর হারবালের ঔষধগুলো সাথে নিয়ে যান। জাহাঙ্গীর মিয়া কাতারে যাওয়ার পর একটি কোম্পানীতে শ্রমিকের কাজ নেন। প্রচন্ড রোদের মধ্যে প্রতিদিনই রাস্তায় ঢালাইয়ের কাজ করতেন জাহাঙ্গীর। সেখানে ৩ মাস পর হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন জাহাঙ্গীর। এক পর্যায়ে তার সহকর্মীরা জাহাঙ্গীর মিয়াকে কাতারের একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে হাসপাতালের কর্মরত ডাক্তাররা জাহাঙ্গীর মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে জানায়, মোটা হওয়ার জন্য হারবাল সেন্টার থেকে ঔষধ নিয়ে খেয়ে আসছিলেন। পরবর্তীতে কাতারের হাসপাতালের চিকিৎসকরা তার পরীক্ষা-নিরিক্ষা শেষে জানান, জাহাঙ্গীরের খাদ্যের নালি পঁচে গেছে। তার কিডনি, হার্ট ও লিভারের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। এরপর তাকে হাসপাতালে ভর্তির জন্য পরামর্শ দিলে তার সহকর্মীরা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় দিন দিন জাহাঙ্গীরের অবনতি হলে এক পর্যায়ে তাকে আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়। আইসিইউতে ১মাস ১১ দিন থাকার পর গত ১৯ আগস্ট জাহাঙ্গীর মিয়া মৃত্যুবরণ করেন। জাহাঙ্গীর মারা যাওয়ার পর পরই কাতারে থাকা তার আত্মীয় ও সহকর্মীরা তার মৃত্যুর খবর বাড়িতে জানান। পুত্রের মৃত্যুর খবর শুনে জাহাঙ্গীরের বাবা রঞ্জুই মিয়া ও মিনারা খাতুন অনেকটা পাগলের মতো হয়ে পড়েন। তারা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না যে জাহাঙ্গীর মারা গেছে। এক পর্যায়ে জাহাঙ্গীরের মা, বাবা পুত্রের লাশ দেশে পাঠানোর জন্য জাহাঙ্গীরের সহকর্মীদের কাছে অনুরোধ জানান। পরবর্তীতে জাহাঙ্গীরের সহকর্মীরা জাহাঙ্গীর যে কোম্পানীতে কাজ করতেন সেই কোম্পানীর সহযোগিতা নিয়ে মৃত্যুর ১০দিন পর ২৯ আগস্ট একটি বিমানে তার লাশ দেশে প্রেরণ করেন। ওইদিন আড়াইটার দিকে জাহাঙ্গীরের লাশ বাড়িতে পৌছলে তার লাশ দেখে তার বাবা রঞ্জুই মিয়া ও মিনারা খাতুন, ভাই বোনেরা কাঁদতে কাঁদতে বুক ভাসিয়ে ফেলেন। এ সময় আত্মীয় স্বজনরা তাদের শান্তনা দেন। ওইদিন জানাজার নামাজ শেষে পারিবারিক গোরস্থানে জাহাঙ্গীরের লাশের দাফন সম্পন্ন করা হয়। এ সময় বাবা রঞ্জুই মন্তব্য করেন মোটা হওয়ার ঔষধ খেয়েই তার ছেলে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়েছে। এ ধরণের ঔষধ সেবন করে আর কেউ যেন ভবিষ্যতে প্রতারিত না হয়। এ জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ দেবাশীষ দাশ জানান, হারবাল হ্যোমিপ্যাথিক চিকিৎসা নামে সহজ সরল মানুষের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে। এসব ঔষধ খেয়ে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এসব প্রতারকদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন- এসব প্রতিষ্ঠানে গিয়ে যারা মোটা স্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়ার জন্য ঔষধ সেবন করে থাকেন তারা আদৌ জানেন না, যে ওই ঔষধে গরু মোটাতাজা করণের ক্ষতিকারক মেশানো হয়ে থাকে। হারবালের মোটা তাজা ঔষধ খাওয়ার পর যখন একজন লোক হঠাৎ করে মোটা হতে থাকেন তখন রক্তের পিএইচ নিয়ন্ত্রণে থাকে না। যে কারণে মানুষ মারা যান। তিনি আরো বলেন- হারবাল ঔষধ মানুষের কিডনি, হার্ট ও লিভারের মারাত্মক ক্ষতি করে। অনেক ক্ষেত্রে প্রাণহানিও ঘটে। জাহাঙ্গীরের বেলায়ও তেমনি হয়েছে। চিকিৎসকরা জানান, বাংলাদেশ ও ভারতের কিছু টিভি চ্যানেলে মোহনীয় কিছু বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে যৌন দূর্বলতা ও স্বাস্থ্যহীনতা। এসব বিজ্ঞাপনের মোহে পড়ে সহজ-সরল মানুষ প্রতারণার শিকার হয়। এই চক্রগুলো হাতিয়ে নেয় মোটা অংকের টাকা। চক্ষু লজ্জার ভয়ে কেউ এসব ঔষধ খেয়ে ক্ষতি হলেও কাওকে কিছু বলে না। আর যুবক কিংবা তরুণরা যখন প্রেমে পড়েন কিংবা নতুন বিয়ে করেন তখন প্রেমিকা ও স্ত্রী তাদের স্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়ার পরামর্শ দেন। তাদের পরমর্শ অনুযায়ীই যুবকরা টেলিভিশন ও পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে হারবাল সেন্টারগুলোতে গিয়ে এসব মোটাতাজা করণের ঔষধ কিনে সেবন করেন। ফলশ্রুতিতে তারা মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd