সিলেট ৩০শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১২:৩৯ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২, ২০১৮
গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি :: অনিন্দ্য সুন্দর প্রকৃতিতে অপরূপ এক জনপদ সিলেট। সিলেটকে যদি মানবী রূপে কল্পনা করা হয়, তবে এই মানবীর সৌন্দর্যের রূপরসে মুগ্ধ সবাই। প্রকৃতিকন্যা হিসেবে খ্যাত সিলেটের মাতাল করা রূপের অন্যতম বিছনাকান্দি। সীমান্তঘেঁষা এই পর্যটনকেন্দ্রে পাহাড়, পাথরের উপর দিয়ে গড়িয়ে যাওয়া স্বচ্ছ জল, নীলাকাশ কিংবা মেঘের ভেলা বিমোহিত করে সৌন্দর্যপিপাসুদের। প্রতিদিন তাই শত শত পর্যটক ছুটে যান বিছনাকান্দিতে। কিন্তু এখানে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে হয়রান হতে হচ্ছে পর্যটকদের। একদিকে অপচক্রের সিন্ডিকেট, অন্যদিকে বেহাল সড়ক-এ দুইয়ে মিলে ভোগান্তির শেষ নেই বিছনাকান্দি ঘুরতে যাওয়া প্রকৃতিপ্রেমীদের।
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নে অবস্থান বিছনাকান্দির। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তঘেঁষা এই পর্যটনকেন্দ্র নান্দনিক সৌন্দর্যের অপার আধার। বিছনাকান্দির মূল আকর্ষণ ভারতের উঁচু পাহাড়চূড়া থেকে নেমে আসা ফেনিল শীতল জলের ঝরনা। দূরের আকাশচুম্বী পাহাড়, পাহাড়ের চূড়ায় মেঘের ভেলার ভেসে বেড়ানো, পাথরপূর্ণ নদী এসবকিছু বিছনাকান্দির পরিবেশকে করেছে আরো মনোমুগ্ধকর। সিলেটে আসা পর্যটকদের কাছে তাই বিছনাকান্দি হয়ে ওঠেছে তীর্থস্থান। প্রতিদিন শত শত পর্যটক প্রকৃতির রূপসুধা পান করতে ছুটে যান সেখানে। বিশেষ করে কোন উৎসবের সময় হাজার হাজার পর্যটকের ঢল নামে বিছনাকান্দিতে। সদ্য গত হওয়া ঈদুল আযহায়ও পর্যটকের পদভারে মুখরিত ছিল এই পর্যটনকেন্দ্র। কিন্তু সৌন্দর্যের টানে ছুটে আসা এসব পর্যটকদের পোহাতে হয়েছে নানা ভোগান্তি।
বিছনাকান্দিতে যাওয়ার পথে দেখা যায়, সিলেট থেকে গোয়াইনঘাট উপজেলার বঙ্গবীর পর্যন্ত সড়ক মোটামুটি ভালো। কিন্তু বঙ্গবীর থেকে পীরের বাজার পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার সড়কের অবস্থা নাজুক। এ সড়কে বড় বড় গর্ত, খানাখন্দ আর কাদায় ভরা। অনেক পর্যটকই গাড়ি বঙ্গবীর এলাকায় রেখে পায়ে হেঁটে পীরের বাজার পৌঁছান। পীরের বাজার যাওয়ার পরই অসাধু চক্রের কবলে পড়তে হয় পর্যটকদের। এখানে নৌকাঘাটে নৌকা ভাড়া নিয়ে যেতে হয় বিছনাকান্দিতে। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন পীরের বাজার থেকে বিছনাকান্দি যাওয়া-আসার ভাড়া এক হাজার ৫৫০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে।
কিন্তু ঘাটের ইজারাদার, নৌকার মাঝি এবং স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী লোকের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট এই নির্ধারিত ভাড়ার তোয়াক্কা করে না। সিন্ডিকেট চক্র পর্যটকদের কাছ থেকে নিজেদের খেয়ালখুশি মতো ভাড়া আদায় করে। আড়াই থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া আদায় করা হয় পর্যটকদের কাছ থেকে। এই পরিমাণ ভাড়া না দিলে কোন নৌকাই পর্যটকদের নিয়ে বিছনাকান্দিতে যায় না। বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত টাকা গচ্চা দিতে হয় ছুটে আসা পর্যটকদের। শুধু নৌকা ভাড়ায় অতিরিক্ত টাকা আদায়ই নয়, নৌকাঘাটের ইজারাদার কর্তৃপক্ষও অনেক পর্যটকের কাছ থেকে পাঁচশ টাকা করে আদায় করে। ভাড়া নিয়ে পর্যটকরা যাতে প্রতিবাদ করতে না পারেন, সেজন্য ইজারাদাররা নিজস্ব লাঠিয়াল বাহিনীও পুষছে। লাঠিয়াল বাহিনীর সদস্যরা পর্যটকদের সাথে খারাপ আচরণ করে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
বিছনাকান্দি বেড়াতে আসা বরিশালের বিপ্লব ভট্টাচার্য এবং ঢাকার খলিলুর রহমানের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। অভিযোগ করে তারা বলেন, ‘নৌকার ভাড়া দেড় হাজার টাকা জেনে এসেছিলাম। কিন্তু এখানে এসে দেখি, তিন হাজার টাকার কমে কোন নৌকাই বিছনাকান্দিতে যেতে চায় না। বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হয়েছে। পর্যটকদের এভাবে জিম্মি করে রাখলে সামনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’
অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়টি অস্বীকার করে ইজারাদারদের অন্যতম সিরাজ উদ্দিন বলেন, ‘প্রশাসন দেড় হাজার টাকা ভাড়া নির্ধারণ করেছে। এই ভাড়াতেই নৌকা চলছে।’ তার কাছ থেকে জানা গেল, পীরের বাজার নৌকাঘাটে প্রায় তিনশ নৌকা রয়েছে। তন্মধ্যে একশটি নৌকা ইজারাদারদের তিন হাজার টাকা দিয়ে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এসব নৌকা প্রতিদিন ৩শ টাকা করে ইজারাদারদের প্রদান করে। অন্যদিকে আরও ২শ নৌকা তালিকাভুক্ত না হলেও তারা প্রতিদিন ৫শ টাকা করে ইজারাদার কর্তৃপক্ষকে দেয়।
এ বিষয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত কুমার পাল বলেন, ‘আমরা নৌকার ভাড়া এক হাজার ৫৫০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছি। এর বাইরে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার সুযোগ নেই। সিন্ডিকেট থাকলে কিংবা ইজারাদার ও নৌকার মাঝি অতিরিক্ত ভাড়া নিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd