বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: অবশেষে নিজের অপকর্ম ঢাকতে অভিযোগকারী দুই মৎস্যচাষীকে অর্থের বিনিময়ে ‘ম্যানেজ’ করে অভিযোগ উড্ড করিয়েছেন সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া। তার বিরুদ্ধে দেয়া লিখিত অভিযোগ নিষ্পত্তির ধার্য তারিখের পূর্বেই তিনি তাদের নিজ অফিসে ডেকে নিয়ে নগদ টাকা ধরিয়ে দেন। পরে অভিযোগ তুলে নেন অভিযোগকারীরা। গত ২৭ আগস্ট অনেকটা গোপনেই নিজের দূর্নীতি ধামাচাপা দেন ওই মৎস্য কর্মকর্তা। এর আগে গত ২০ আগস্ট তার বিরুদ্ধে ইউএনও’র কাছে উপকরণ সহায়তার অর্থ আত্মসাতের লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন মৎস্য চাষীরা।
সূত্র জানায়, বিশ্বনাথ উপজেলায় যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন কায়দায় চাষীদের সরকারি বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করে আসছিলেন মৎস্য কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া। গত ২০ আগস্ট তার বিরুদ্ধে মৎস্যচাষীদের উপকরণ সহায়তার অর্থ আত্মসাতের লিখিত অভিযোগ দেন উপজেলার শাহজিরগাঁও গ্রামের মৃত সামছুল হক মধু মিয়ার ছেলে কয়েছ আহমদ, মৃত শেখ তেরা মিয়ার ছেলে ছালিক আহমদ ও আলমনগর গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে রহমত আলী। অভিযোগ পেয়ে সুরাহার তারিখ দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিতাভ পরাগ তালুকদার। নির্ধারিত তারিখের আগেই তড়িঘড়ি করে মৎস্য কর্মকর্তার তাদের অফিসে ডেকে নিয়ে নগদ টাকা ধরিয়ে দিয়ে দেন। এর মধ্যে সারেং মৎস্য খামারের পরিচালক কয়েছ আহমদকে দেয়া হয় ১৯ হাজার ৯শত টাকা ও ছালিক মিয়াকে ৯ হাজার ৬শ টাকা। টাকা পেয়ে তাৎক্ষণিক অভিযোগ তুলে নেন অভিযোগকারী মৎস্য চাষীরা। অভিযোগকারী সারেং মৎস্য খামারের পরিচালক চাষী কয়েছ আহমদ বলেন, মৎস্য কর্মকর্তা আমাদের ডেকে নিয়ে ক্ষতিপূরণ হিসেবে নগদ টাকা দেন ও আমাদের কাছে ক্ষমা চাওয়ায় আমরা অভিযোগ তুলে নিয়েছি।
অভিযুক্ত উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন,অভিযোগকারীদের আমি কোন টাকা দেইনি। টাকা দেয়ার প্রশ্নই ওঠেনা। তাদের সাথে আমার ভুলবুঝাবুঝি হয়েছিল। বিষয়টির অবসান হওয়ায় তারা অভিযোগ তুলে নিয়েছে।
এ বিষয়ে কথা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিতাভ পরাগ তালুদকার সাংবাদিকদের বলেন, অভিযোগকারী মৎস্য চাষীরা কি কারণে অভিযোগ তুলে নিয়েছেন? বিষয়টি আমার জানা নেই।
প্রসঙ্গত, বিশ্বনাথের সারেং মৎস্য খামারের পরিচালক চাষী কয়েছ আহমদের সাথে ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল যৌথ মৎস্য চাষের চুক্তি করেন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা (অঃ দঃ) সফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া। ঢাকা মৎস্য ভবন’র ইউনিয়ন পর্যায়ে মৎস্যচাষ প্রযুক্তি সেবা সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় এ চুক্তি সম্পাদন করা হয়। চুক্তিপত্র অনুযায়ী চাষীকে ৫০ হাজার টাকার উপকরণ সহায়তা দেয়ার কথা থাকলেও তিনি অপ্রতুল তেলাপিয়া’র পোনা ও ১০ হাজার টাকা দেন কয়েছ আহমদকে। চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেও কয়েছ পাননি অবশিষ্ট আর কোন সহায়তা। মৎস্য অফিসের সহায়তা না পেয়ে ভেস্তে গেছে তার মৎস্য চাষ প্রকল্প। এদিকে, কৌশলে পুরো ৫০ হাজারের উপকারণ সহায়তা প্রাপ্তির রেজিষ্ট্রারেও নেয়া হয় কয়েছ আহমদের সই। একই ভাবে ৩০ হাজার টাকা সহায়তার চুক্তি করা হয় ওই আরেক মৎস্য চাষী ছালিক আহমদের সাথে। তার সাথে চুক্তি অনুযায়ী উপকরণ সহায়তা ও রুই, কাতলা, মৃগেল মাছের পোনা দেয়ার কথা থাকলেও তিনি দিয়েছেন ১ কেজি গনিয়া মাছের রেণু ও ১০ হাজার টাকা। চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেও মৎস্য কর্মকর্তা আর খবর নেননি তার। যৌথ মৎস্য চাষ আলোর মুখ না দেখায় এখন একক ভাবে মৎস্য চাষ করছেন তিনি। মৎস্য চাষী রহমত আলীর সাথেও ৩৫ হাজার টাকার উপকরণ সহায়তার চুক্তি করেন সফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া। পরে রহমতকে তার সিলেটের বাসায় নিয়ে মাত্র ৫ হাজার টাকা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে ক্ষমা চেয়ে নেন। এবং পরে অন্য প্রকল্পে তাকে বরাদ্দ দেয়ারও আশ্বাস দেন তিনি।