সিলেট ৩০শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৩:৪০ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৮
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : সিলেট পাসপোর্ট অফিসে ভূতের আছর দেখা দিয়েছে। পাসপোর্ট নবায়ন বা নতুন পাসপোর্টের জন্য সে অফিসের মাধ্যম ছাড়া আবেদন করলেই ভূতের আছর দেখা দেয়। এতে আবেদন ফাইল খোয়া যাওয়া, আবেদনে নানা অসঙ্গতির কথা তুলে প্রার্থী বরাবরে ক্ষুদে বার্তা (মেসেজ) যেতে থাকে। ফলে আবেদনকারীকে নানা হয়রানির শিকার হতে হয়। এমনিতে পাসপোর্ট অফিসের নির্ধারিত দালাল বা ট্র্যাভেল এজেন্সি ছাড়া নবায়ন কিংবা নতুন পাসপোর্টের আবেদন জমা দিতে চাইলে ক্রটি-বিচ্যুতির অজুহাত দেখিয়ে সপ্তাহ, পক্ষ, মাসাধিককাল দৌড়-ঝাপ করানো হয়। যাতে আবেদনকারী নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ে এবং সরাসরি আবেদন জমার চিন্তা বাদ দিয়ে দালাল-এজেন্সীর সরনাপন্ন হতে হয়।
অভিযোগ রয়েছে, বিয়ানীবাজারের মিসবাউর রহমানের পুত্র মো. রিদওয়ান হুসাইন নতুন পাসপোর্টের জন্য রশিদের (নম্বর ৯৯৯৬) মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকে ৩ হাজার চারশত পঞ্চাশ টাকা জমা দেন ৮ আগস্ট ২০১৮। দালাল ছাড়া জমা দিতে আসা এই আবেদনকারী ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ বেলা ১২টা পর্যন্ত আবেদনটি জমা দিতে সক্ষম হননি। তিনি আবেদনে পেশা হিসেবে প্রাইভেট সার্ভিস দেখানোর কারণে সর্বশেষ তাকে বলা হয়েছে – প্রাইভেট সার্ভিসের সনদ প্রদান করতে। তার অভিযোগ প্রাইভেট সার্ভিসের সনদ কোথায় পাওয়া যায় সেটা কেউই বলতে পারছেনা।
এছাড়া দালাল ছাড়া জমা দেয়া আবেদনেও নানা হয়রানির শিকার হতে হয় প্রার্থীকে। এরকম হয়রানিকে ভূক্তভোগি কেউ কেউ ভূতের আছর বলে অভিহিত করেন। সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সহ সভাপতি সাত্তার আজাদ তার নিজের ও মায়ের পাসপোর্ট নবায়ন এবং এমআরপি পাসপোর্ট পেতে নির্ধারিত ফি (ওয়ান ব্যাংকের রসিদ নম্বর 9133efa9000056) জমা দিয়ে দালাল ছাড়া সরাসরি আবেদন করতে ৫ সেপ্টম্বর যান পাসপোর্ট অফিসে। প্রথমদিন পাসপোর্ট অফিসের ডিএডি ফরিদ আবেদন জমা না রেখে তাকে ফিরিয়ে দেন। পরদিন আবার তিনি হুইল চেয়ারে করে প্যারালাইজ্ড মাকে নিয়ে গিয়ে আবার আবেদন জমা দেন। তাদের ছবি তোলা ও আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে ডেলিভারী রসিদ প্রদান করা হয়। পরে সাত্তার আজাদকে ক্ষুদে বার্তায় (৮৮০৪৪৪৫৬৪৫৬৭৮ নম্বর থেকে) জানিয়ে দেওয়া হয় – তার ফাইলে জমাকৃত ফি সমন্বয় বা সমজুটি হয়নি। তাই ফাইল আটকে আছে। আরপিও-সিলেট অফিস ভিজিটের জন্য বলা হয় তাকে। আজ ৯ সেপ্টেম্বর তিনি পাসপোর্ট অফিসে গেলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন তাকে বলেন— ‘দালাল ছাড়া আবেদন জমা দিলে বাড়তি টাকা নিতে অহরহ এমন হয়রানি করা হয়।’ তিনি তখন অফিসের ইউডিসি দীপকের সরনাপন্ন হলে তাকে বলা হয় আতিক নামের ছেলে নতুন চাকরি পেয়েছে। মেসেজটি সেই পাঠিয়েছে। পরে সাত্তার আজাদকে পাসপোর্ট অফিসের যাচাই-বাছাই কক্ষ নম্বর ১০২ এ মোশারফের সাথে দেখা করতে পাঠান। মোশারফ তাকে আবার ২০০ নম্বর কক্ষে পাঠিয়ে দেন। এভাবে এক কক্ষ থেকে আরেক কক্ষ তওয়াব করে ক্লান্ত হয়ে গেলে তাকে বলা হল – ক্ষুদে বার্তাটি অবাঞ্চিতভাবে চলে গেছে। ফাইল আটকে নাই, আবেদন সঠিক আছে। সাত্তার আজাদ বিষয়টি নিয়ে সিলেট বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের পরিচালকের সাথে কথা বললে তিনি জানান- ক্ষুদে বার্তাগুলো সয়ংক্রিয়ভাবে কম্পিউটার থেকে চলে যায়। তাতে কারো হাত নেই।
এনিয়ে সাত্তার আজাদের প্রশ্ন ছিল —ক্ষুদে বার্তায় টাকার অসঙ্গতি বলা হল এবং বলা হল ফাইলটি আটকে আছে। অথচ এখন দেখা যাচ্ছে অসঙ্গতি নেই, ফাইলও আটকে নাই। এটা কেমন করে হল। এটা কি সুপার কম্পিউটার যে প্রথমে ফাইল আটকিয়ে নিজের ভুল বুঝতে পেরে কম্পিউটার নিজে থেকে আবার ফাইলটি ছেড়ে দিল। সাত্তার আজাদের এমন প্রশ্নের জবাবে পরিচালক এ কে এম মাজহার জানান — বিষয়টি আমার কাছেও ইন্টারেস্টিং। এনিয়ে উর্ধ্বতনদের সাথে কথা বলব। আসছেন যখন বসেন, চা-খান।
এতো গেল সাত্তার আজাদের কথা। অন্যদিকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. ইউনুস পরিবারের ৪ সদস্যদের পাসপোর্টের জন্য দালাল ছাড়া নিজে আবেদন জমা দেন গত ২৬ আগস্ট ২০১৮। জরুরি এসব পাসপোর্ট পাবার কথা ছিল আজ ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮। কিন্তু তাকে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে বলা হয় – তার কন্যার (জমাকৃত আবেদন নম্বর ৬৭০১৫৬) ফাইল খোয়া গেছে। পাওয়া যাচ্ছেনা। আজ ৯ সেপ্টেম্বর তিনি পাসপোর্ট অফিসে আসলে বলা হয় – ফাইলটি মুভমেন্ট রিজেস্টারে নাই। পাসপোর্ট অফিসের ডিএডি ফরিদ তাকে আবার আবেদন করতে বলেন। নিরুপায় মো. ইউনুস তখন চলে যান। সাত্তার আজাদ নিজের অভিযোগের সাথে শাবির শিক্ষক মো. ইউনুসের বিষয়টি প্রাসঙ্গিক অনিয়ম হিসেবে পাসপোর্ট অফিসের পরিচালককে জানান। পরিচালক এ কে এম মাজহারুল ইসলাম তখন ফোন করে মোশারফের কাছে ৬৭০১৫৬ নম্বরের মো. ইউনুসের মেয়ের ফাইলটি নিয়ে আসতে বলেন। যেই বলা সেই কাজ। মিনিট দু’এক এর মধ্যে খোয়া যাওয়া সে ফাইলটি মোশারফ নিয়ে আসলেন। অবাক পৃথিবীর সব সম্ভবের বাংলাদেশে কি অবাক ম্যাজিক। এ যেন ভূতের আছরকেও হার মানায়।
এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারির কারণে সিলেট পাসপোর্ট অফিসের অভ্যন্তরে দালাল নেই ঠি ক, তারা এখন পাসপোর্ট অফিসের পাশে গোটাটিকরস্থ ওয়ান ব্যাংকের বোথে বসে দিব্যি ব্যবসা করছে। তাদের সাথে পাসপোর্ট অফিসের আনসার ননী গোপাল, সজল, অফিস স্টাফ সাইবুর রহমান, পাসপোর্ট যাচাই-বাছাই কক্ষের স্টাফ মোশারফসহ পাসপোর্ট অফিসের ডিএডি ফরিদের সাথে নিভিড় সম্পর্ক রয়েছে। এতে এসব দালালের হাতঘুরে না আসা সরাসরি আবেদনগুলোর প্রার্থীরা নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। আর দালালের কাছে গেলেই আবেদনকারীর কাছ থেকে কসাইয়ের মত বাড়তি টাকা আদায় করা হয়। দালালের হাতঘুরে আসা ফাইলে অসঙ্গতি থাকলেও আবেদনকারীরা দিব্যি পাসপোর্ট পেয়ে যান বলে অভিযোগ ভূক্তভোগিদের।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd