তারাপুর নাটকের শেষ অধ্যায় রাগীব আলী ফের কারাগারে

প্রকাশিত: ৫:০১ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৮

তারাপুর নাটকের শেষ অধ্যায় রাগীব আলী ফের কারাগারে

স্টাফ রিপোর্টার :: সিলেটের তারাপুর চা বাগান আত্মসাত নাটকের শেষ পর্বে আবার ও কারাগারে গেলেন কতিথ ধানবীর ও কতিথ সৈয়দ রাগীব আলী। বুধবার ( ১২ সেপ্টেম্বর) ছেলে আব্দুল হাইসহ পাড়ি জমিয়েছে শ্রীঘরে। সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের ম্যাজিট্রেট মোহাম্মদ মোস্তাইন বিল্লাহ মন্ত্রণালয়ের স্মারক জালিযাতি ও ভূমি আত্মসাতের মামলায় তাদের ফের কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। জেলা জজ কোর্টের অতিরিক্ত পিপি এডভোকেট শামিম আহমদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তারাপুর চা বাগানের দেবোত্তর সম্পত্তিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার ভূমি আত্মসাৎ এবং জালিয়াতির একটি মামলায় রাগীব আলী ও তার ছেলে আব্দুল হাইয়ের পক্ষে জামিন আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। এর আগে আলোচিত এই মামলায় ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) রাগীব আলী ও তার ছেলে আব্দুল হাইয়ের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির পাঁচটি ধারায় পৃথক ধারায় সর্বমোট ১৪ বছর করে কারাদণ্ড প্রদান করেন সিলেট মুখ্য মহানগর হাকিম সাইফুজ্জামান হিরুর আদালত। মামলায় সাজাপাপ্ত রাগীব আলী এর আগে জামিনে মুক্তি পেয়েছিলেন। এরপর চলতি বছরের ৯ আগস্ট এই রায়ের বিরুদ্ধে আসামীরা আপীল করলে সেদিন নিম্ন আদালতের দেয়া ১৪ বছরের সাজা বহাল রেখে রায় এবং আজ বুধবার (১২ সেপ্টেম্বর) নিম্ন আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন বিশেষ জজ আদালতের বিচারক দিলীপ কুমার ভৌমিক। সিলেটের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি রাগীব নিজ অনুসারীদের কাছে ‘দানবীর’ নামে খ্যাত ছিলেন। এই মামলায় বছরখানেক জেল খাটার পর বর্তমানে ছেলেসহ জামিনে ছিলেন তিনি। মামলা বৃত্তান্ত : সিলেটের হাজার কোটি টাকার তারাপুর চা বাগান দেবোত্তোর সম্পত্তি। জালিয়াতি ও প্রতারণা করে এই বাগান দখল নেওয়ার অভিযোগ ওঠে রাগীব আলীর বিরুদ্ধে। এনিয়ে অভিযোগ ওঠার পর ১৯৯৯ সালে ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি রাগীব আলীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। ২০০৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক (চিঠি) জালিয়াতির অভিযোগে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন তৎকালীন ভূমি কমিশনার (এসিল্যান্ড) এসএম আব্দুল কাদের। এছাড়া সরকারের এক হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আরেকটি মামলা করেন তিনি। মামলায় ৪২২ দশমিক ৯৬ একর জায়গায় গড়ে ওঠা সিলেটের দেবোত্তর সম্পত্তি তারাপুর চা বাগানের জমি আত্মসাতের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক (চিঠি) জাল করার অভিযোগ আনা হয়ে রাগীব আলী ও তার ছেলের বিরুদ্ধে। এই মামলার বিরুদ্ধে রাগীব আলী উচ্চ আদালতে গেলে দীর্ঘদিন পর ২০১৬ সালের শুরুতে তার নিষ্পত্তি হয়। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ ২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি রাগীব আলীর বিরুদ্ধে মামলা পুনরায় চালুর নির্দেশ দেয়। সেই সঙ্গে তারাপুর চা-বাগান দখল করে গড়ে ওঠা সব স্থাপনা ছয় মাসের মধ্যে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই আদেশের পর একই বছরের বছরের ১৫ মে চা-বাগানের বিভিন্ন স্থাপনা ছাড়াও ৩২৩ একর ভূমি সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তকে বুঝিয়ে দেয় জেলা প্রশাসন। মামলা হওয়ার ১১ বছর পর ২০১৬ সালের ১০ জুলাই পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সিলেটের অতিরিক্ত সুপার সারোয়ার জাহান আদালতে অভিযোগপত্র দেন। অভিযোগ অনুযায়ী, ১৯৯০ সালে তারাপুর চা বাগান আত্মসাতের প্রক্রিয়ায় রাগীব আলী ও তার ছেলে আব্দুল হাই ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক (চিঠি) জাল করেন। এই মামলার দুই আসামীই জেল হাজতে রয়েছেন। ওই বছরের ১০ আগস্ট গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে রাগীব আলী ও তার একমাত্র ছেলে আবদুল হাই ওই দিনই জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে সপরিবারে ভারতে পালিয়ে যান তিনি। এরপর ১২ নভেম্বর ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেরার পথে রাগীব আলীর ছেলে আব্দুল হাইকে গ্রেপ্তার করে জকিগঞ্জ ইমিগ্রেশন পুলিশ। আর ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় ২৪ নভেম্বর ভারতে গ্রেপ্তার হন রাগীব আলী। ওই দিনই সিলেটের সুতারকান্দি সীমান্ত দিয়ে তাকে তাকে দেশে এনে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর শুরু হয় বিচার কার্যক্রম। স্মারক জালিয়াতি মামলা ছাড়াও রাগীব আলী ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে তারাপুর চা বাগানের ভূমি আত্মসাতের আরেকটি মামলায়ও সাজা প্রদান করা হয়।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

September 2018
S S M T W T F
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  

সর্বশেষ খবর

………………………..