সিলেট ৩০শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৬শে রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৭:১৮ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৮
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক :: আইয়্যামে জাহেলিয়াত এর যুগে বসবাস করছি বলে মনে হয়। সম্প্রতি শাহজাদপুর সার্কেল, সিরাজগঞ্জ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফাহমিদা হক শেলী তার ফেসবুক ওয়ালে তার কর্মক্ষেত্রের অভিজ্ঞতার আলোকে কয়েকটা ঘটনা তুলে ধরেছেন, যা ফেসবুকে বেশ আলোচিত হচ্ছে। যা সেই এলাকার ফেসবুক ব্যবহারকারী ও সাধারণ জনগণের আলোচনার বিষয়ে পরিনত হয়েছে। ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি ৬টি কেস ষ্টাডিও তুলে ধরেছেন। তার পোষ্টে অনেকেই মন্তব্য করেছে হুবহু সেগুলোর কয়েকটা তুলে ধরা হলো-
প্রতিদিন কোন না কোন পারিবারিক অশান্তির অভিযোগ পাচ্ছি, অনুরোধ পাচ্ছি সমাধান করে দেয়ার।আহারে, আলাদীনের চেরাগ যদি পেতাম, আমার কথা যদি সবাই শুনত। কেউ বাচ্চাদের কথা ভাবছেনা, ব্যক্তিস্বাধীনতা অনেক বেড়েছে। দুই একটা নমুনা দেই।
১)বউ ও ৩ বাচ্চা রেখে বিদেশ গেছে আরিফ।আরিফের চাচাত ভাইয়ের সাথে বউয়ের অবৈধ সম্পর্ক। এক রাতে শাশুড়ির হাতে ধরা পড়ে বউ বলল রেপ এর চেষ্টা।চাচাত ভাই মোবাইলে ধারন করা হাজার নগ্ন ছবি ভিডিও দিয়ে প্রমান করল প্রেম। বিদেশ থেকে স্বামী সংসার টিকিয়ে রাখতে চাইল বাচ্চাদের কথা ভেবে।স্বামী থানায় মামলা দিতে চাইল, প্রেমিক গ্রামের মাতব্বর দের ম্যানেজ করল।প্রেমিক বলল সেও রাজী বিয়ে করতে। গ্রাম্য সালিশে বিচার হলো প্রেমিকের ৫০০০০ টাকার শাস্তি।আর প্রেম করা হবেনা।স্বামীর মনে যত কষ্ট থাকলেও মেনে নিল।
২) ২ বাচ্চা ও বউ রেখে ঢাকায় রিক্সা চালায় নাজিম।সেও শারীরিক ভাবে খুব বেশী পরিশ্রম করতে পারেনা।ফলে খুব বেশী টাকা পাঠাতে পারেনা।এই সুযোগে পাশের বাড়ীর ধনী ব্যবসায়ী তাহের নাজিমের বউ কে শাড়ী গহনা বাজার টুকটাক দিতে দিতে বিয়েই করে ফেলল।নাজিম তার দুই ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় গেল।নিশ্চয়ই সেও কয়েকদিন পরে আরেকটা বিয়ে করবে।
৩)ধনী ব্যবসায়ী মামুন বউ বাচ্চা থাকার পরেও প্রেমে পড়ল আরেক নারীর যার আগের পক্ষের ছেলে আছে। মৌখিক বিয়ের ১০বছর পরে কাবিন হলো।প্রথম বউ এবং বাচ্চাদের চাপে পড়ে কিংবা দ্বিতীয় বউয়ের সাথে আগের মত বনিবনা না হওয়ায় ১২ বছর পর তালাকনামা পাঠালো স্বামী।
৪) পুলিশের এক কন্সটেবল বিয়ে করেছিল ৫ বছর আগে।বউ কে বাপের বাড়ীতে রেখে চাকরি করে ঢাকায়।বিয়ের ২ বছর পর থেকে বউয়ের প্রতি নজর কমে গেছে।বাড়িতে আসেনা, ঠিকমতো টাকা পাঠায়না। কন্সটেবল এর শাশুড়ি আসে আমার কাছে তাকে ডি এম পি থেকে পোস্টিং করিয়ে রাজশাহী রেঞ্জে এনে সিরাজগঞ্জ বা বগুড়া এনে দিতে, তাহলে থানায় চাকরি করলে দু চার টাকা বাড়তি আয় হবে, বউ ও কাছে রাখতে পারবে। ঢাকায় ওই পোস্টিং এ থাকলে বউ পালা যায়না, অনেক খরচ।
আমার পোস্টিং ঈ আমি করাতে পারিনা, আরেকজনেরটা কেমনে করাই!!!
৫) অধ্যাপক স্বামী মারা যাওয়ার পর স্বামীর প্রাপ্য সম্পত্তি বুঝে নিতে পারছেনা স্ত্রী দেবরের যন্ত্রনায়।দেবরের অভিযোগ, মহিলা তার ভাইয়ের সম্পত্তি ভাতিজা ভাতিজিকে না দিয়ে যদি বিয়ে করে অন্যত্র চলে যায় বা মহিলার বাপের বাড়ী পাঠায়।তাই তার ভাতিজা বড় হওয়ার আগে সেই কেয়ারটেকার সেজে বসে আছে।উপরন্তু, মৃত ভাইয়ের সম্পত্তির ২ আনা তার বৃদ্ধা মা পায়, সেই অংশ আবার মা ওই দেবরকে হেবা করে দিয়েছে। জটিল সমস্যা।দেবরের কথা শুনলে মনে হয় সে ঠিক, ভাবির কথা শুনলে মনে হয় ভাবী ঠিক। অসহ্য জটিলতা।
৬)রফিক এর বয়স ৩৫, বিয়ে করল ১৭ বছরের মেয়ে রিনা কে। রফিকের ছোটভাইয়ের রহিম এর বয়স ১৬ বছর।রফিক সহজ সরল ভালোমানুষ কিন্তু বউকে খুশী করার মত রোমান্টিক না, এই অভিযোগ বউয়ের । রফিক রিনার ছেলেও আছে একটা।এর মাঝে রহিমের সাথে দুর্দান্ত প্রেম রিনার।শারীরিক সম্পর্ক ও আছে।বাড়ীতে জানাজানি হলে দ্রুত রহিমের বিয়ে ঠিক করা হয় আরেক জায়গায়।সেই বিয়ে ভাংতে রিনা রহিমের হবু শশুরের কাছে ফোন করে বলে যে তার সাথে রহিমের এমন সম্পর্ক। তবু বিয়ে হয়ে যায় রিনার বড় ভাশুর রাজ্জাক এর হস্তক্ষেপ এ। রাজ্জাক চাকরি করে বিজিবি তে।
এরপরেও প্রেমলীলা চলতে থাকে।রফিক রিনাকে তালাক দিয়ে বাপের বাড়ী পাঠায় ছেলেকে সহ।এরপর রিনার বাপের বাড়ী আবার রহিম প্রেম করতে এলে রিনার বাপ ভাই কাজী এনে ব্যাকডেট এ রহিমের বউ কে তালাক দেয়ানোর পর রিনার সাথে বিয়ে দেয়।
রাজ্জাক আর রহিম আসে আমার কাছে কাজীর কাছ থেকে ওই কাগজ উদ্ধার করে যেন নষ্ট করে দেই। রিনার কাছে এত কাহিনি শুনে এই বিষয় ডিল করার রুচি নষ্ট হয়ে যায়।এর কোন সমাধান নাই।
৬)ক্লাস সেভেনে পড়া কনা প্রেম করে নাইনে পড়া আশিকের সাথে।প্রেমের ফলে রুমা কন্সিভ করে, পরিবার মেনে না নেয়ায় বিয়ে হয়না।গর্ভপাত করানো সম্ভব না হওয়ায় বাচ্চা জন্ম দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কনার পরিবার। বাচ্চা যেদিন হয়, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেদিনই কনার দূর সম্পর্ক এর খালা জরিনার কাছে বাচ্চাকে ৯০০০ টাকায় বিক্রি করা হয়।জরিনা ১৩০০০টাকায় বাচ্চা বিক্রি করে এক সন্তানহীন দম্পতির কাছে। ৪ মাস পরে আশিকের পরিবার কনা ও বাচ্চা কে মেনে নেয়ার সিদ্ধান্ত হলে জরিনার কাছে এসে দেখে বাচ্চা নাই।খবর পেয়ে ওই দম্পতির কাছে বাচ্চা ফেরত নিতে এলে ওই দম্পতি ১৩০০০ টাকা +কৌটার দুধ কেনার টাকা বাবদ ২০০০০ টাকা নিয়ে ফেরত দেয়।
ভাল্লাগেনা কিছু। আইয়্যামে জাহেলিয়াত এর যুগে বসবাস করছি বলে মনে হয়।এত বাজে সমাজে বাস করছি।””
কমেন্টে সিরাজগঞ্জের এসপি টুটুল চক্রবর্তী মন্তব্য করেছেন, “সমাজের এ চিত্রের পরিবর্তন অনেক কষ্টসাধ্য। কেননা আমরা মানসিক পরিবর্তনের জন্য কিছুই করছিনা। অপেক্ষা করি সেদিনের। প্রত্যয়ী হই আমরা।”
রওশন আরা মুন্নী নামের একজন শিক্ষিকা মন্তব্য করেছেন, আপা সমাজের অবস্থা খুবই খারাপ। পরকীয়া না কমলে এখান থেকে রেহাই পাওয়া যাবে না।
ফেরদৌস আরা ভূঁইয়া নামের একজন গৃহিণী মন্তব্য করেছেন, “পুলিশে চাকরি করলে বা আশপাশে থাকলে বুঝা যায় আমরা এক ঘুনে ধরা সমাজে বসবাস করছি। জীবন চরম জটিল আকার ধারন করেছে ।”
কামরুল হাসান নামে একজন সরকারি চাকরিজীবী মন্তব্য করেছেন, “ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নৈতিকতার চরম অবক্ষয় ঘটেছে। পারিবারিক সুশাসন খুবই জরুরি।”
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd