মো. আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ :: ধানী জমিতে গাছের ডাল, খুঁটি বা বাঁশের কঞ্চি পুঁতা হয়। এর উপর পাখিরা বসে। ফসলের ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খায় তারা। পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষার পরিবেশবান্ধব এ পদ্ধতির নামই ‘পার্চিং’।
এ পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন খরচ ও কীটনাশকের ব্যবহার হ্রাস পাওয়ায় এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কৃষককূলে। কৃষকরা এখন জমিতে কীটনাশক পরিহার করে পোকা দমনে সহজ ও লাভজনক পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করছেন।
এছাড়াও পার্চিং পদ্ধতি বালাইনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পরিবেশ দূষণমুক্ত ও পোকার বংশ বিস্তার কমায়। জমিতে জৈব সার হিসেবে পাখির বিষ্ঠা যোগ করে জমির উর্বরতা বাড়ায়।
সাধারণত, রোপা-আমন, ইরি-বোরোসহ ফসলি জমিতে বাদামি ঘাসফড়িং, কারেন্ট পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা, উড়চুঙ্গা, শিষ কাটা লেদা, সবুজ শুড় লেদা, চুঙ্গি-মাজরাসহ নানা ধরণের ক্ষতিকারক পোকার আক্রমণ দেখা দেয়। এসব পোকা দমনে ব্যয়বহুল কীটনাশকই ভরসা ছিল কৃষকদের। এতে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির সাথে অধিক পরিশ্রমও করছিলেন তারা। এখন পার্চিং পদ্ধতিই আশা জেগেছে কৃষকদের মধ্যে।
সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, উপজেলায় এ বছর ১৩ হাজার ১শত ৫ হেক্টর জমিতে রোপা-আমন চাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বন্যা না হওয়ায় পূর্বের তুলনায় বেশি জমিতে চাষাবাদ হয়েছে এবার। লক্ষ্য মাত্রার চাইতে অধিক ফলন ও পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষায় কৃষকদের পার্চিং পদ্ধতির সুফল সম্পর্কে অবহিত করা হচ্ছে। প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ‘পার্চিং উৎসব’ করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের নিয়ে মাঠে মাঠে গাছের ডাল ও বাঁশের কঞ্চি পুঁতে রাখছেন।
সফল কৃষক জাবের আহমদ বলেন, জমিতে পুঁতা ডালের উপর পাখি বসে ক্ষতিকারক পোকা ও পোকার ডিম খেয়ে ফেলে। তাই, জমিতে আর কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না। যার ফলে কম খরচে বেশি ফলন পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে কথা হলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমজান আলী বলেন, পোকা যদি একবার ফসলের ক্ষেতে ডিম দিয়ে দেয়, তাহলে দীর্ঘ মেয়াদী সমস্যা দেখা দেয়। পোকা দমনে প্রত্যেক ইউনিয়নে আমরা ‘পার্চিং উৎসব’ করছি। পার্চিং পদ্ধতির মাধ্যমে এ বছর ফসল উৎপাদন লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আমি আশাবাদী।
Sharing is caring!